মেসির মুখে সবুজ-রশ্মি। যা নিয়ে বিতর্ক। ছবি: রয়টার্স।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের সেরা টুর্নামেন্ট থেকে বার্সেলোনা ছিটকে যেতেই যেন আকাশ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ার দশা লিও মেসির। বার্সার প্রাণভোমরা সম্পর্কে প্রাক্তন বার্য়ান ডিফেন্ডার জনৈক উইলি স্যানিয়ল পর্যন্ত ফোড়ন কেটেছেন, “মেসি তো মাদ্রিদে আটলেটিকোর সঙ্গে ফিরতি ম্যাচটায় মাঠে হেঁটে বেড়িয়েছে! ও বোধহয় লোকেদের বোকা ভাবছে!”
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, স্প্যানিশ সুপার কাপ, লা লিগা মিলিয়ে এ মরসুমে আটলেটিকোর বিরুদ্ধে পাঁচ বার খেলে এক বার জিতেছে মেসি। রোনাল্ডোর রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে ঝলমল করলেও অন্য মাদ্রিদের বিপক্ষে এ মরসুমে পাঁচ ম্যাচেও গোল নেই এলএম টেনের। গত রাতে আবার পরিসংখ্যান বলছে, মেসি গোটা ম্যাচে মাত্র ৬.৮ কিমি দৌড়েছেন। যা বার্সা গোলকিপারের দৌড়ের চেয়ে মাত্র দেড় কিমি বেশি! যেখানে কিপারের দৌড়ের গণ্ডি আঠারো গজের পেনাল্টি বক্সের ভেতরেই। পাশাপাশি আবার মাদ্রিদের স্টেডিয়াম থেকে মেসির মুখে লেজার রশ্মি এসে পড়ায় কোনও কোনও মহলের দাবি, আটলোটিকো সমর্থকেরা মেসির মনঃসংযোগ নষ্টের চেষ্টা চালিয়েছে গত রাতের ম্যাচে।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বার্সার ছিটকে পড়ার পর কথা উঠে গিয়েছে মেসি-নেইমার মহাজুটির বোঝাপড়া নিয়েও। স্বয়ং বার্সা কোচ জেরার্দো মার্টিনো স্বীকার করেছেন, “এই ম্যাচে আশায় ছিলাম ডান দিক দিয়ে মেসির ওয়ান-অন ওয়ান দৌড় অনেক বেশি দেখব। কিন্তু বাস্তবে ওর সে রকম দৌড় বেশি দেখা যায়নি। তা সত্ত্বেও দ্বিতীয়ার্ধের গোড়ায় মেসি দুটো ভাল গোলের সুযোগ পেয়েছিল। তবে যেন মনে হচ্ছে, বিপক্ষ ডিফেন্স ভাঙার সেই বিচক্ষণতা ওর খেলায় এই ম্যাচে দেখা যায়নি।”
নেইমার আবার বার্সায় তাঁর প্রথম মরসুমে সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার পর বলেছেন, “এখন শুধু আমরা আটলেটিকোকে অভিনন্দন জানাতেই পারি।” ব্রাজিলীয় মহাতারকার বিশ্লেষণ, “সত্যি কথাটা হল আমরা ম্যাচটা খারাপ ভাবে শুরু করেছিলাম। এ রকম মহাগুরুত্বপূর্ণ খেলায় প্রথম কুড়ি মিনিটের মধ্যে আমাদের গোল খেয়ে যাওয়াটাই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তবে হোম-অ্যাওয়ে দু’টো ম্যাচেই আটলেটিকো ডিফেন্স ভাঙা আমাদের পক্ষে ভীষণ কঠিন হয়েছে যে, সেটা প্রমাণিত। খুব দুঃখ হচ্ছে। হার হজম করা মোটেই সহজ নয়।”
বার্সেলোনা ডিফেন্ডার জর্জি আলবা থেকে মাঝমাঠের দুই মহারথী, জাভি-ইনিয়েস্তা— অন্য অনেক তারকার গলাতেও হতাশা। আলবা বলেছেন, “চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, আটলেটিকোকে কী ভাবে সমস্যায় ফেলবে সেটাই জানে না বার্সেলোনা।” জাভির স্বীকারোক্তি, “আটলেটিকো যোগ্য দল হিসেবে আমাদের হারিয়েছে।” ইনিয়েস্তা আবার মনে করেন, বার্সেলোনার অন্তত ম্যাচটা ড্র রাখা উচিত ছিল। “আমরা চার থেকে পাঁচটা সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছি গোল করার। ছিটকে পড়ার জন্য আমরা শুধু নিজেদেরই দায়ী করতে পারি।”
আটলোটিকো কোচ দিয়েগো সিমিওনের দাবি, “বার্সেলোনাকে ওদের পছন্দের ফুটবলটাই খেলতে দিইনি। সেটাই আমাদের স্ট্র্যাটেজি ছিল। ওরা যে ভাবে খেলতে চায়, আমাদের গেমপ্ল্যানের সামনে সেটা পারেনি।” আর আটলোটিকোর ম্যাচ উইনার কোকে যাঁকে স্প্যানিশ ফুটবলে ‘পরের জাভি’ বলা হচ্ছে সেই অনূর্ধ্ব-২১ স্পেন দলের সেরা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার বলছেন, “অসাধারণ আটলেটিকোর লক্ষ্যের কোনও সীমানা নেই। আকাশই একমাত্র সীমা এখন আমাদের।” চলতি লা লিগায় শীর্ষে থাকার পর ৪০ বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে ওঠা আটলেটিকো এখন তো আকাশেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy