লড়াইটা এক বনাম দুই নম্বর দলের।
লড়াইটা বাগানের বর্তমান কোচ বনাম প্রাক্তন কোচের মগজাস্ত্রের।
লড়াইটা সনি-বোয়া-কাতসুমি বনাম থিওবোল্ট-বাওয়ার-কিম দু’দলের ত্রিভূজের।
লড়াইটা শতাব্দীপ্রাচীন, ঐতিহ্যশালী মোহনবাগানের সঙ্গে মাত্র দু’বছর আই লিগ খেলা নবীন রয়্যাল ওয়াহিংডোর!
তবু চৌম্বকের বাইরে দু’টিমের বোধহয় আসল লড়াই দুই ড্রেসিংরুমের একই ধরনের মানসিকতার। যেহেতু অনেক বছর পরে আই লিগ চ্যাম্পিয়নশিপে শীর্ষে বিরাজ করা বাগান আর গত বার এগারো নম্বর থেকে এ বারের লিগে এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়াহিংডো খেতাবের দৌড়ে নিজেদের জায়গা আরও পাকা করে নিতে মরিয়া। শনিবার পাহাড়ে যে দল জিতবে সে-ই ট্রফির দিকে এগিয়ে যাবে আরও অনেকটা।
বাগানের চ্যালেঞ্জটা অবশ্য একটু কঠিনই। সমতল থেকে সটান পাহাড়ে পৌঁছে সন্তোষ কাশ্যপের টিমকে হারানো সহজ নয়, সেটা এ বার টের পেয়েছে কার্যত সব আই লিগ টিমই। একমাত্র বেঙ্গালুরু এফসি ছাড়া কোনও টিম শিলংয়ে গিয়ে ওয়াহিংডোকে হারাতে পারেনি। ইস্টবেঙ্গল, পুণে এফসি, স্পোর্টিং ক্লুব সন্তোষের টিমের কাছে হেরেছে। ডেম্পো, ভারত এফসি ড্র করেছে। পাহাড়ি দলের নিজেদের মাঠে এহেন সাফল্যকে মাথায় রেখেই নিজের টিমের স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন সঞ্জয় সেন। আগের ভারত এফসি ম্যাচে যাঁরা খেলেছিলেন মোটামুটি তাঁদেরই শিলংয়ের মাঠে নামাবেন ঠিক করেছেন মোহন কোচ। কেবল স্টপারে বেলোর পাশে আনোয়ারের জায়গায় কিংশুককে খেলানো হতে পারে। টিম সূত্রের খবর, বিপক্ষ স্ট্রাইকারদের জোনাল মার্কিং করা হবে। এই ভাবনা নিয়েই শুক্রবার সকালে অনুশীলনও হয়েছে বাগানে।
সমতল থেকে হঠাৎ পাহাড়ে উঠলে মাঝেমধ্যে হোঁচট খেতে হয়। যদিও শিলংয়ে গিয়ে লাজংকে হারিয়ে এসেছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। শিলং থেকে ফোনে সনি নর্ডি বললেন, ‘‘পাহাড়ে এসে খেলতে এর আগে সমস্যা হয়নি। এ বারও হবে না। তবে ওয়াহিংডো টিমটা ছন্দে রয়েছে।’’ বাগানের আইকন ফুটবলার পিয়ের বোয়া তো ওয়াহিংডোর খেলা খুঁটিয়ে বিচার করে তাদের দুর্বলতা খুঁজে বার করেছেন বলে দাবি করলেন। সতীর্থদের বিপক্ষের সেই দুর্বলতা নাকি বুঝিয়ে দিয়েছেন টিম মিটিংয়ে। কী সেই দুর্বলতা? বোয়া ফোনে তা ফাঁস করলেন, ‘‘ওরা যখন আক্রমণে ওঠে ওদের ডিফেন্সে বড় ফাঁক তৈরি হয়। আমাদের ওই সুযোগটাই কাজে লাগাতে হবে।’’
দু’ম্যাচ কম খেলে ওয়াহিংডোর চেয়ে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে আছে বাগান। তাই পাহাড়ে জিতে সেই ব্যবধান আরও বাড়াতে চাওয়াটাই স্বাভাবিক সঞ্জয়ের কাছে। ফোনে বললেন, ‘‘ঘরের মাঠের সুবিধেটা ওরা পুরোপুরি কাজে লাগায়। হোম ম্যাচে ওয়াহিংডোর রেজাল্ট খুব ভাল। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে আমাদের তো সব রকম পরিস্থিতির সঙ্গেই মোকাবিলা করতে হবে।’’
প্রাক্তন বাগান কোচ সন্তোষ আবার তাঁর ওয়াহিংডো ফুটবলারদের ‘অহং’-এ ধাক্কা মারছেন পুরনো টিমকে হারানোর লক্ষ্যে। থিওবোল্টদের তিনি বলেছেন, ‘‘কেউ তোমাদের এত দিন সে ভাবে গুরুত্ব দিত না। ছোট টিম মনে করত। আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেখিয়ে দাও, তোমরা কারও চেয়ে কম না।’’
সন্তোষকে দায়িত্ব থেকে সরিয়েই তিন বছর আগে করিম বেঞ্চারিফাকে কোচ করে এনেছিলেন বাগান কর্তারা। তার বদলা পাহাড়ের কোলে নিতে চান সন্তোষ। ‘‘এই ম্যাচটা জিতলে চ্যাম্পিয়নশিপের দিকে অনেকটা এগোব। তাই আমার মতো আমার ছেলেরাও গরগরে হয়ে রয়েছে।’’ এ দিন বিকেল থেকে শিলংয়ে বৃষ্টি নেমেছে। ঠান্ডাও বেড়েছে। যদিও আবহাওয়ার পূর্বাভাসে শনিবার সন্ধের দিকে বৃষ্টির আশঙ্কা নেই। তা হলেও সমতলের সঞ্জয় পাহাড়ের খামখেয়ালি আবহাওয়া নিয়ে চিন্তায়।
সন্তোষের টিমের সঙ্গেই শিলংয়ের আকাশও না বাগানের কাছে অসন্তোষ হয়ে দাঁড়ায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy