Advertisement
১১ মে ২০২৪

আঠারোখাই নিয়ে সরব কংগ্রেস

রাজনৈতিক কারণেই রাজ্য সরকার শিলিগুড়ি লাগোয়া আঠারোখাই-শিবমন্দিরকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করছে না বলে অভিযোগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। রবিবার বিকালে শিবমন্দিরের আঠারোখাই মাঠে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের একটি বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন হয়।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

রাজনৈতিক কারণেই রাজ্য সরকার শিলিগুড়ি লাগোয়া আঠারোখাই-শিবমন্দিরকে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করছে না বলে অভিযোগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। রবিবার বিকালে শিবমন্দিরের আঠারোখাই মাঠে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের একটি বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন হয়। সেখানে দুই প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য, সোমেন মিত্র তো বটেই স্থানীয় বিধায়ক শঙ্কর মালাকার ওই অভিযোগ তোলেন। কংগ্রেসের নেতাদের অভিযোগ, এলাকায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ, আইন কলেজ রয়েছে। পাশেই বিমানবন্দর, উত্তরায়ণের মত আধুনিক উপনগরী রয়েছে। তার পরেও গত পাঁচ বছরে বিধায়ক কংগ্রেসের হওয়ায় রাজ্য সরকার এলাকাকে পুরসভার উন্নীত করল না।

কংগ্রেস নেতা তথা সাংসদ প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘পুরসভা থেকে হিমূল, বন্ধ বাগান কোথাও কোনও কিছু হচ্ছে না। আর কংগ্রেসিরা তো যেখানে আছেন, সেখানে তো নয়ই। তাই আমরা তৃণমূল সরকারের পরিবর্তন চাইছি।’’ আর প্রাক্তন সাংসদ সোমেনবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করার কাজে নেমেছেন। পঞ্চায়েত থেকে বিধায়ক জনপ্রতিনিধিদের পুলিশের ভয়-ভীতি, মামলা দেখিয়ে দলভাঙানো হয়েছে। সিপিএম আমলে কোনও দিন তা হয়নি। তাই এখনও যারা কংগ্রেসে আছেন, তাদের এলাকার কাজ তো ভাবাই যায় না। তাই আমরা পরিবর্তনের পরিবর্তন চাইছি।’’

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০০৯ সালের শেষ নাগাদ বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যের কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকাকে পুরসভায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। উত্তরবঙ্গে বীরপাড়া, জয়গাঁর সঙ্গে আঠারোখাইকে পুরসভার করার কথা বলা হয়। মাটিগাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতকে জুড়ে নতুন পুরসভার পরিকল্পনা তৈরি হয়। সেই সময় ৫০ হাজার বাসিন্দার হিসাব থাকলেও বর্তমানে তা প্রায় ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। রাজ্যপালের কাছে তা যায়। কিন্তু বিধানসভা ভোটের জন্য তা আটকে যায়।

এলাকার বিধায়ক শঙ্করবাবুর অভিযোগ, ‘‘বিধানসভায় পুরসভার বিষয়টি তুলেছি। পুরমন্ত্রী ফিরাদ হাকিমকে বলেছি। আদতে পুরসভা হলে যদি কংগ্রেস বিধায়কের নাম হয় তাই করা হয়নি।’’ শঙ্করবাবু জানান, এইভাবে হিমূলের উন্নতি হয় না, বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র সচল হয় না, বাগডোগরা বিমানবন্দরের জট কাটে না। পুরোটাই রাজনৈতিক কারণ। স্থানীয় একটি মন্ত্রী বিভিন্ন দল ভেঙে তৃণমূলকে আঠারোখাইতে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন, উল্টো ফল হয়েছে। দলত্যাগী ৭৩ জনের মধ্যে ৬৯ জনই হেরেছেন। এখন রাস্তা, নালার ছোট ছোট কাজ করে বড় বড় হোর্ডিং ঝোলানো হচ্ছে।

আঠারোখাই কবে পুরসভায় উন্নীত হবে, তা নিয়ে কংগ্রেস নেতাদের মতো সংশয়ে সিপিএম নেতারাও। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কংগ্রেসের বিধায়ক তো বটেই, এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি সব বামেদের দখলে। সেখানে তৃণমূল কিছুই করবে না, এটা স্বাভাবিক। ২০১১ সালে ভোটের জন্য বিষয়টি আটকে গিয়েছিল। সেখানেই তা রেখে দেওয়া হয়েছে।’’ প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু জানান, তাঁর আমলে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন।

কংগ্রেস বা বামেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। উল্টে পরিস্থিতির জন্য দুষেছেন দুই দলের নেতাদেরই। তিনি জানান, বামফ্রন্ট কাগজপত্র ঠিকঠাক তৈরি করে যায়নি। তাই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে দেরি হচ্ছে। মৌজা, পঞ্চায়েত নানা নথিপত্রের হিসাব রয়েছে। তা শেষ হলেই পুরসভা হবে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এর মধ্যে রাজনীতির কী আছে! তা হলে পুর এলাকার বা মহকুমা জুড়ে আমাদের কাজ করারই কথা নয়। সব জায়গায় কী তৃণমূল রয়েছে। কংগ্রেস বিধায়ক তো দেড় বছর সরকারে ছিলেন, সেই সময় তো তিনি উদ্যোগী হননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE