Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সাটুই স্কুলের মাঠটা যেন অলৌকিক জলযান

সোমবার স্কুলে প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী হাজির। কিন্তু তাদের স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে স্কুলে পঠনপাঠন হয়নি। শিক্ষকেরা দিনভর ছেলেমেয়েদের বুঝিয়ে চলেছেন, ‘কে চলে গেলেন জানিস, বুঝলি না, এক বার অন্তত ‘নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে’ পড়িস বাবা!’

স্কুলে অতীন-স্মরণ: সোমবার সাটুইয়ে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলে অতীন-স্মরণ: সোমবার সাটুইয়ে। নিজস্ব চিত্র

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
সাটুই শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

বহরমপুর-রামনগর রাজ্য সড়কের উপর ঘিঞ্জি মোড়। স্থানীয় নাম সাটুই হাইরোড। বাজারটাকে বামে রেখে ডানের রাস্তা ধরলেই সাটুই রাজেন্দ্রনারায়ণ হাইস্কুল।

সোমবার স্কুলে প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী হাজির। কিন্তু তাদের স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে স্কুলে পঠনপাঠন হয়নি। শিক্ষকেরা দিনভর ছেলেমেয়েদের বুঝিয়ে চলেছেন, ‘কে চলে গেলেন জানিস, বুঝলি না, এক বার অন্তত ‘নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে’ পড়িস বাবা!’

স্কুলের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে সামনের দিকে তিনটে আম গাছ ছিল, এখন নেই। সে গাছের যত্ন করতেন অতীনবাবু। পুরনো শিক্ষকেরা ঘুরিয়ে দেখাচ্ছেন, এই স্কুলের মাঠের উপর তিনি সকাল-সন্ধ্যা পায়চারি করতেন। হয়ত মনে মনে সেই ‘ঈশ্বরের বাগান’-এর কথা ভাবতেন। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী মহলে ,সোমবার দিনভর চলল এই আলোচনা।

স্কুলের প্রতিষ্ঠা ১৯৫৬ সালে। প্রথম থেকেই অতীনবাবু এই স্কুলে। প্রথমে ‘অর্গানাইজসড টিচার’। পরে ১৯৫৮ সা‌ল থেকে ১৯৬৮ সাল প্রধান শিক্ষক ছিলেন মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত এই গ্রামীণ স্কুলে। বহরমপুর থানার সাটুই গ্রাম আজ সারা জেলার আলোচনার কেন্দ্রে।

স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক সময় বাড়ি ছিল বহরমপুর শহরের কাশিমবাজার লাগোয়া মনীন্দ্রনগর এলাকায়। সেখান থেকে তিনি সাটুয়ের এই স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। স্কুল ভবনের পিছনে প্রধান শিক্ষকের আবাসনে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বসবাস ছিল তাঁর। তাঁর স্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্কুলে পড়াতেন। তখন গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। ঘরে হ্যারিকে‌ন জ্বালিয়ে তিনি লিখতেন অনেক রাত পর্যন্ত। পুরো গ্রাম জঙ্গলে ভরা।

গ্রামের যোগাযোগ বলতে কাটোয়া-আজিমগঞ্জ লাইনের রেলপথে চৌরিগাছা ষ্টেশন ব্যতিত কিছু ছিল না। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হীরক দাস বলেন, ‘‘২০০৬ সালে স্কুলের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে অতীন বাবুকে স্কুলে আনার চেষ্টা করেছিলাম। আমাদের স্কুলের দুই শিক্ষক তাঁর কলকাতার বাড়িও গিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী সাটুই আসার ব্যাপারে সম্মতও হন। কিন্তু অতীন বাবুর শারীরিক অবস্থা আসার মতো ছিল না। শেষ পর্যন্ত আর হয়ে উঠল না। সেই আক্ষেপটা এখনও রয়ে গিয়েছে আমাদের মধ্যে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Atin Bandyopadhyay School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE