Advertisement
১০ মে ২০২৪

আদিবাসী মুখ চাইছেন অভিষেক

জঙ্গলমহলে নতুন করে মাওবাদীদের আনাগোনা যে নিছক গোয়েন্দা-রিপোর্টের সতর্কবার্তা নয়, তা মেনে নিয়েছেন শাসক দলের জেলা নেতাদের অনেকে। পালাবদলের সাড়ে চার বছর পরে আদিবাসী সমাজের ‘অপ্রাপ্তি’ নিয়ে জঙ্গলমহলের একাংশের ক্ষোভের আঁচও টের পেতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় শুক্রবার যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় শুক্রবার যুব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:২৬
Share: Save:

জঙ্গলমহলে নতুন করে মাওবাদীদের আনাগোনা যে নিছক গোয়েন্দা-রিপোর্টের সতর্কবার্তা নয়, তা মেনে নিয়েছেন শাসক দলের জেলা নেতাদের অনেকে। পালাবদলের সাড়ে চার বছর পরে আদিবাসী সমাজের ‘অপ্রাপ্তি’ নিয়ে জঙ্গলমহলের একাংশের ক্ষোভের আঁচও টের পেতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। সঙ্গে যোগ হয়েছে শাসক দলের বেশ কিছু ‘নেতা-মন্ত্রী’র আদিবাসী সমাজের সম্মাননীয় সম্পর্কে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য, সরকারি প্রকল্প নিয়ে শাসক দলের একাংশের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ।

দলের অন্দরের খবর, আদিবাসীদের মন ফেরাতে তাই প্রকাশ্য কর্মিসভায় দলীয় নেতাদের উদ্দেশে আদিবাসীদের সামনের সারিতে তুলে আনার বার্তা দিচ্ছেন যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

শুক্রবার বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় ওই সভায় অভিযেক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসীদের জন্য বহু কাজ করেছেন। কিন্তু তা প্রচার পায়নি। জেলা নেতৃত্বকে বলব, বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, সিমলাপাল, রাইপুর থেকে আদিবাসী ভাই-বোনদের এগিয়ে আনতে হবে, যারা সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেবেন।’’ বাঁকুড়ার জেলা নেতৃত্বকে এই নির্দেশ দেওয়ার আগেই ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেনের উদাহরণ তুলে ধরেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসীদের নিয়ে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রেখেছেন। আমাদের বোন উমা ভোটে জিতে লোকসভায় গিয়ে আদিবাসী ভাষায় শপথ নিয়েছেন। আমরা গর্বিত।’’

তবে শাসক দলের ‘যুবরাজের’ এই নিদানকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বলছেন, ‘‘ক্ষতে প্রলেপ দিচ্ছেন যুব নেতা।’’ সম্প্রতি, মাওবাদী নেতা কিষেণজির হত্যা নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন অভিষেক। বাঁকুড়া জেলা সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা মনে করছেন, ‘‘সেই মন্তব্যের আঁচ প্রশমনে এখন আদিবাসীদের পাশে পেতে চাইছেন ওই তৃণমূল নেতা।’’

বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের নেতাদের দাবি— জঙ্গলমহলের আদিবাসী গ্রামগুলিতে মাওবাদীদের পা-পড়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই তৃণমূলের জেলা নেতাদের টনক নড়েছে। আদিবাসী সংগঠনগুলির কাছে ইতিমধ্যেই বার্তা পাঠিয়ে তাদের ‘অভাব-অভিযোগ’ জানাতে অনুরোধ করা শুরু করেছেন বাঁকুড়ার শাসক দলের জেলা নেতারা। এমনই একটি আদিবাসী সংগঠন ‘শিক্ষার অধিকার মঞ্চ’-এর পক্ষে সনগিরি হেমব্রম বলছেন, ‘‘এত দিনে আমাদের কথা মনে পড়েছে শাসক দলের!’’

জঙ্গলমহলে বিপুল ভোট পেলেও ক্ষমতায় আসার চার বছর পরেও বাঁকুড়া বা লাগোয়া পুরুলিয়ায় দলের সামনের সারিতে চোখে পড়ার মতো উত্থান হয়নি কোনও নতুন আদিবাসী মুখের। আদিবাসী উন্নয়নের এক রাশ প্রতিশ্রতি দিয়েও উপরতলার নেতাদের একাংশ কথা রাখেননি অভিযোগে ক্ষোভ রয়েছে শাসক দলের অন্দরেই। জেলা তৃণমূল নেতাদের একটা ব়়ড় অংশ দলীয় অনুষ্ঠানে আদিবাসীদের সঙ্গে ধামসা-মাদল নিয়ে নেচেই দায় সেরেছেন বলে আদিবাসী সমাজের ক্ষোভ। আদিবাসী সংগঠন ‘মাঝি পরগনা মহল’-এর এক নেতার কথায়, ‘‘শাসক দলের নেতারা ভাবেন আমরা ওই একটা কাজই পারি, ধামসা-মাদল বাজাতে ওঁদের!’’ এক ধাপ এগিয়ে বাঁকুড়ার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক গোরাচাঁদ মুর্মুর টিপ্পনী, ‘‘ও সবই কথার কথা, সভায় বলতে হয় বলে বলা। তোষণ করে কি আদিবাসীদের মন পাওয়া যায়!’’

গত বিধানসভা ভোটে মমতা-ঝড়ে বাঁকুড়ার প্রায় সব বিধানসভাতেই পরিবর্তন এলেও জঙ্গলমহলের তিন বিধানসভা রাইপুর, রানিবাঁধ ও তালড্যাংরায় ক্ষমতা ধরে রেখেছিল সিপিএম। বিরোধী দলের নেতারা তাই দাবি করছেন, আরও একটা বিধানসভা ভোটের আগে আদিবাসী ভোট নিয়ে শাসক দলের দুশ্চিন্তা অভিষেকের বক্তব্যেই স্পষ্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE