Advertisement
০৫ মে ২০২৪

পঞ্জি-জুজু নয় ইভিপি, অভয় দিচ্ছে কমিশন

নির্বাচন কমিশন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাচ্ছে: ইভিপি-র সঙ্গে এনআরসি এবং ডি-ভোটার বা ‘ডাউটফুল ভোটার’-এর কোনও সম্পর্ক নেই।

তথ্য যাচাইয়ের ভিড় দেগঙ্গার ক্যাফেতে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

তথ্য যাচাইয়ের ভিড় দেগঙ্গার ক্যাফেতে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০১
Share: Save:

লোকসভা ভোটের পর থেকেই ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করে আসছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এখন ইভিপি বা ইলেক্টরস ভেরিফিকেশন প্রোগাম (নির্বাচক তথ্য যাচাই কর্মসূচি) নিয়ে আমজনতার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজ্যের কোনও কোনও এলাকায়। ভোটার-তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগের সঙ্গে নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) এবং ডি-ভোটারের জুজু দেখছেন অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানাচ্ছে: ইভিপি-র সঙ্গে এনআরসি এবং ডি-ভোটার বা ‘ডাউটফুল ভোটার’-এর কোনও সম্পর্ক নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ারও কিছু নেই। এক কমিশন-কর্তা বলেন, ‘‘ভোটার তালিকার স্বাস্থ্যোন্নতিতে ইভিপি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে এনআরসি কিংবা ডি-ভোটার কোনও ভাবেই সম্পর্কযুক্ত নয়।’’

ইভিপি শুরু হয়েছে ১ সেপ্টেম্বর। কয়েক দিন পর থেকেই বিষয়টির সঙ্গে এনআরসি-কে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বলে কোথাও কোথাও প্রচার চলছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচার চলছে, কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন না-করলে ডি-ভোটার হতে হবে। তাতেই ছড়িয়েছে আতঙ্ক। এই অভিযোগ রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতরেও আসছে।

এনআরসি কিংবা ডি-ভোটারের আতঙ্কে বাংলার সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার সাধারণ মানুষ নাওয়া-খাওয়া ভুলে দৌড়চ্ছেন কিছু সাইবার ক্যাফেতে। অনেক সাইবার ক্যাফেই তার ফায়দা লুটছে বলে অভিযোগ। অনলাইনে ভোটারের তথ্য যাচাইয়ের জন্য বিপুল অর্থ নিচ্ছে তারা। এই আতঙ্ক বেশি করে গ্রাস করেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের।

কমিশনের কর্তারা এই বিষয়ে সিইও দফতরকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেছেন। সোমবার এই নিয়ে আলোচনা করেছেন সিইও দফতরের কর্তারা। কয়েক দিনের মধ্যে ইভিপি নিয়ে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো-সম্মেলন করবেন তাঁরা।

কমিশন জানাচ্ছে, অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইনেও ইভিপি করা যাবে। যাঁরা অনলাইনে করতে পারবেন, তাঁর কাছে পৌঁছে তথ্য যাচাই করবেন বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও)। সে-ক্ষেত্রে কমিশনের তথ্য ভাণ্ডারে থাকা ভোটারের তথ্য সংক্রান্ত কাগজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে যাবেন বিএলও। তার পরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবেন তিনি। কমিশনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ভোটার নিজে থেকে তাঁর সব বিষয় দেখে নিলে ঠিকঠাক হয়। তাই আমরা চাইছি, ভোটারই তা দেখে নিন। তবে কোনও ভোটার অনলাইনে তথ্য যাচাই করতে না-পারলে বিএলও বাড়িতে গিয়ে তা করিয়ে নেবেন।’’

এই প্রক্রিয়ার জন্য বিএলও-দের বাড়তি ৫০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তাঁদের আরও কিছু সাম্মানিক দেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।

রবিবার পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী ইভিপিতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। ইতিমধ্যেই প্রায় ২২ লক্ষ ভোটার অনলাইনে তথ্য যাচাই করেছেন। দ্বিতীয় স্থানে রাজস্থান। সেখানে তথ্য যাচাই করেছেন ২০ লক্ষের কিছু বেশি ভোটার। তবে সার্ভারের সমস্যায় সোমবার দুপুরে এই প্রক্রিয়া কিয়দংশে বিঘ্নিত হয়েছে বলে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর। আপাতত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ইভিপি-র দিন ধার্য করেছে কমিশন।

দেশে এখন প্রায় ৯১ কোটি ভোটার রয়েছেন। সেই সব ভোটার এ বার নিজেরাই তালিকায় থাকা তথ্য যাচাই করে নিতে পারবেন। পরিবারের অন্যদের তথ্যও ঠিকঠাক আছে কি না, তা-ও দেখে নেওয়া যাবে। সেই যাচাই পর্বে প্রামাণ্য নথি অনলাইনে আপলোড করতে হবে ভোটারকে। সেই তালিকায় রয়েছে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, সরকারি/আধা-সরকারি সংস্থার কর্মচারীর প্রদত্ত সচিত্র প্রামাণ্য নথি, কৃষকদের প্রদত্ত সচিত্র প্রামাণ্য নথি, ব্যাঙ্কের পাশবই,

আরজিআইয়ের স্মার্ট কার্ড। সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে প্যান কার্ড, জল, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, গ্যাস সংযুক্তির সাম্প্রতিকতম বিল। ন্যাশনাল ভোটারস সার্ভিস পোর্টাল (https://www.nvsp.in) এবং ভোটার হেল্পলাইন অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটার তালিকা যাচাই করতে পারবেন ভোটার। রাজ্যের সিইও-র দফতরের ওয়েবসাইটে থাকবে ইভিপি সংক্রান্ত লিঙ্কও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

EVP Election Commission Of India ECI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE