Advertisement
০৪ মে ২০২৪

রুট বন্ধ করে, যাত্রী নামিয়ে ফের দাদাগিরি অটোর

অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে ১১ দফা নির্দেশিকা চালু করেছিল শাসক দলের অটো ইউনিয়নগুলি। তাতে অবশ্য অটোচালকদের হেলদোল ছিল না। কাটা রুট, নিয়ম না-মানার ট্র্যাডিশন বজায় রেখেই চলছিল তারা!

চলতে মানা...। ইউনিয়নের নির্দেশিকার প্রতিবাদে অটো বন্ধ করলেন চালকদের একাংশ।  যে চালকেরা অটো নিয়ে রাস্তায় নামলেন, প্রতিবাদীদের ক্ষোভের সামনে পড়তে হল তাঁদেরও। সোমবার উল্টোডাঙার মুচিবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ

চলতে মানা...। ইউনিয়নের নির্দেশিকার প্রতিবাদে অটো বন্ধ করলেন চালকদের একাংশ। যে চালকেরা অটো নিয়ে রাস্তায় নামলেন, প্রতিবাদীদের ক্ষোভের সামনে পড়তে হল তাঁদেরও। সোমবার উল্টোডাঙার মুচিবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৭
Share: Save:

অটোকে শৃঙ্খলায় বাঁধতে ১১ দফা নির্দেশিকা চালু করেছিল শাসক দলের অটো ইউনিয়নগুলি। তাতে অবশ্য অটোচালকদের হেলদোল ছিল না। কাটা রুট, নিয়ম না-মানার ট্র্যাডিশন বজায় রেখেই চলছিল তারা! যার দৌলতে সোমবার সকালে রাস্তায় ফের অটোওয়ালাদের দাদাগিরি দেখল শহর। ইউনিয়নের নির্দেশিকা এবং পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে সকালে, ব্যস্ত সময়ে উল্টোডাঙা থেকে চারটি অটোরুট বন্ধই করে দিলেন অটোচালকদের একাংশ। এমনকী, যে সব চালক যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁদের অটো আটকে জোর করে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠল। প্রায় ঘণ্টা দুই ধরে এই অচলাবস্থা চলে। চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। পরে শাসক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। ফের চালু হয় অটো পরিষেবা।

পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী পরে বলেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটে থাকতে পারে। পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে কলকাতা পুলিশের কর্তাদের কাছে আমি খোঁজ নেব।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘সার্বিক ভাবে অটোর সমস্যা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। পুরোপুরি মিটতে আরও একটু সময় দিতে হবে।’’

রাজ্যের বর্তমান ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী এবং বাম আমলে বিধানসভার পরিবহণ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাধন পাণ্ডে আবার মনে করেন, শহরে অটোর বিশৃঙ্খলা নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাঁর মতে, অটোচালকদের অভব্যতা, যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, আইন না মেনে দুর্ঘটনা ঘটানোর মূলে রয়েছে বেআইনি অটোর বাড়বাড়ন্ত। এটা আটকাতে অবৈধ অটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণই প্রথম কাজ। সাধনবাবুর অভিযোগ, বাম আমলে বিপুল সংখ্যক বেআইনি অটো চলত। তখন পরিবহণ দফতর মাঝে মাঝেই অবৈধ অটোগুলির মধ্যে কয়েকটিকে পারমিট দিয়ে বৈধ করে দিত। এখন সমস্যা সামলাতে সাধনবাবুর দাওয়াই, ‘‘আমি মনে করি, সরকারের নিয়ম করা উচিত যে, অটো বিক্রেতা সংস্থাগুলো পারমিট না দেখে কাউকে অটো বিক্রি করবে না।’’

কী হয়েছে এ দিন?

সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ উল্টোডাঙা থেকে শোভাবাজার, শোভাবাজার লঞ্চঘাট, জোড়াবাগান, আহিরীটোলা রুটের অটো চলাচল বন্ধ করে দেন চালকদের একাংশ। ওই রুটে নিয়মিত হাজারেরও বেশি অটো যাতায়াত করে। ফলে, স্বভাবতই ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। উল্টোডাঙা থেকে জোড়াবাগান যাওয়ার জন্য অটোয় উঠেছিলেন ষাটোর্ধ্ব আলো মুখোপাধ্যায়। কিন্তু মুচিবাজারে অটো থামিয়ে অন্য যাত্রীদের সঙ্গে তাঁকেও নামিয়ে দেওয়া হয়। আলোদেবীর কথায়, ‘‘আমার হাঁটুর সমস্যা আছে। বাসে উঠতে পারি না। এখন কী করব, বুঝতে পারছি না!’’ তাঁর মতো আরও অসংখ্য যাত্রী সমস্যায় পড়েছেন এ দিন। অটোচালকদের দাদাগিরির জেরে রাস্তায় ব্যাপক যানজটও হয়। ঘণ্টাখানেক এমন চলার পরে তৃণমূলকর্মী পরিচয় দেওয়া কয়েক জন এসে বিক্ষুব্ধ অটো চালকদের সরিয়ে দেন। অটোচালকদের অভিযোগ, শৃঙ্খলার নাম করে গত সপ্তাহখানেক ধরে তাঁদের উপর পুলিশের জুলুম বাড়ছে। এক অটোচালকের বক্তব্য, ‘‘আমাদের গাড়িতে মিউজিক সিস্টেম চললে পুলিশের জরিমানা করার কথা। আমি কেন হাফপ্যান্ট পরে চালাচ্ছি, সেই অভিযোগেও পুলিশ কেস দিয়েছে!’’ বিষয়টি ইউনিয়ন নেতাদের জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি চালকদের। বাধ্য হয়েই এ দিন অটো বন্ধ করে এর প্রতিবাদ করেছেন বলে দাবি ওই চালকদের। প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবারই প্রথম নয়। শনিবারও একই অভিযোগে বেশ খানিকক্ষণ অটো পরিষেবা বন্ধ ছিল বি কে পাল অ্যাভিনিউ থেকে মহাত্মা গাঁধী রোড এবং বাগবাজার বাটা থেকে চিৎপুর-বড়বাজার রুটে।

যদিও শাসক দলের ইউনিয়নের নেতারা এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় তৃণমূল অটো ইউনিয়ন নেতা প্রবীর সেনের দাবি, ‘‘পুলিশি জুলুম-টুলুম নয়, আসলে কয়েক জন চালক ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছিলেন। কিন্তু আমরা পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই ভাড়া বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। সে জন্যই কিছু চালক গণ্ডগোল করেছে।’’ আইএনটিটিইউসি নেতা মেঘনাথ পোদ্দার অবশ্য বলেন, ‘‘কিছু জায়গায় সমস্যা আছে। কিন্তু তা যাতে দীর্ঘায়িত না হয়, সে জন্য আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।’’

সমস্যা সমাধানে বিকেলে উল্টোডাঙা ট্রাফিক গার্ডে পুলিশের সঙ্গে আলোচনায় বসেন অটো ইউনিয়নের নেতারা। ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, শৃঙ্খলার নামে পুলিশ জুলুম করছে। পুজোর আগে এ সব বন্ধ করার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানান নেতারা। পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, অটোচালকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে তাঁরা প্রস্তুত। কিন্তু আইন ভাঙলে জরিমানা করা হবে। সে ক্ষেত্রে কোনও আপস করা হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

auto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE