Advertisement
১৭ মে ২০২৪

অসমে আর নয়, যদি বিদেশি বলে!

আব্বাস বলছেন, ‘‘এখন আর ও-দেশে যেতে সাহস হয় না। পাক্কা সতেরো দিন জেল খেটেছি যে!’’ তিনি ভারতীয় না বাংলাদেশি, এই ‘কঠিন’ প্রশ্নের সহজ জবাব দিয়েও সন্দেহ মুছতে পারেননি অসম পুলিশের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা
আহিরণ শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১১
Share: Save:

প্লাস্টিকের বালতি-মগ-গামলা, কোনও মরসুমে সস্তার গামছা। সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দিয়ে দিনভর গাঁ-গঞ্জ ঘুরে হরেক মাল বিশ টাকার কারবার ছিল আব্বাস আলির। আহিরণের গ্রাম ছেড়ে গত পনেরো বছর ধরে এই আটপৌরে রুজির টানে ঘুরে বেড়াতেন অসমের জালুকবারির পথেঘাটে।

এক চিলতে ঘরে, জনা সাতেক দেশজ মানুষের গাদাগাদি করে দিনযাপন। মাসে এক বার দেশের বাড়ি মুর্শিদাবাদের আহিরণ— দেড় দশক ধরে এটাই ছিল তাঁদের চেনা পেশা।

আব্বাস বলছেন, ‘‘এখন আর ও-দেশে যেতে সাহস হয় না। পাক্কা সতেরো দিন জেল খেটেছি যে!’’ তিনি ভারতীয় না বাংলাদেশি, এই ‘কঠিন’ প্রশ্নের সহজ জবাব দিয়েও সন্দেহ মুছতে পারেননি অসম পুলিশের। অনুপ্রবেশকারীর তকমা পিঠে নিয়ে তাঁর ঠাঁই হয়েছিল জেলে। শেষতক গ্রাম থেকে আধার, ভোটার কার্ড এমনকি দেড় বিঘা জমির দলিল আনিয়ে জামিন মিলেছিল তাঁর। আব্বাস বলছেন, ‘‘আর যায়!’’

রুজির টানে, অসমের বিভিন্ন প্রান্তে, কেউ দশ কেউ বা পঁচিশ বছর ধরে নিতান্তই সাদামাটা ফেরিওয়ালার কারবার করেন মুর্শিদাবাদের এই সব মানুষেরা। কিন্তু, বছর দুয়েক ধরে নাগরিক পঞ্জি’র (এনআরসি) প্রশ্নে তাঁদের ভারতীয়ত্ব নিয়েই প্রশ্ন ওঠায় পড়শি রাজ্যে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন তাঁদের অনেকে।

আরও পড়ুন: ‘যাদের নাম তালিকায় নেই, তারা অনুপ্রবেশকারী’

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর, সুতি আহিরণ, মিঠিপুর এলাকার এমনই কয়েক হাজার ফেরিওয়ালার কারবারের ক্ষেত্রটাই তাই মুছে যেতে বসেছে। গৌর সাহা বলছেন, ‘‘এত দিন জানতাম, সংখ্যালঘু হলেই পিঠে বাংলাদেশি তকমা পড়ার ভয় রয়েছে। ও বাবা, গত ফেব্রুয়ারিতে ওই জালুকবাড়িতে আমাকেই ধরে বসল পুলিশ। আমিও নাকি বাংলাদেশি!’’ ধরা পড়ার পরে অনেক কষ্টে নিজের পরিচয়পত্র দাখিল করে ছাড়া পাওয়ার পরে আর ও-মুখো হননি। অসমে পঁয়ত্রিশ বছরের কাপড়ের ব্যবসাটাই তাই লাটে উঠে গিয়েছে সুতির চক সৈয়দপুরের ওই বাসিন্দার।

আহিরণের সুরজ শেখ জানাচ্ছেন, পুলিশ তাঁদের প্রত্যেকের দু’হাতের দশ আঙুলের ছাপ, দু’কপি ছবি এবং যাবতীয় সচিত্র পরিচয়পত্র জমা নিয়েও মানতে চায়নি, তাঁরা ভারতীয়। অভিযোগ, প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে ১৯৪৬ সালের বিদেশি আইনে বিচার শুরু হয়েছিল। দেগে দেওয়া হয়েছিল, ‘অনুপ্রবেশকারী’। ভারতীয় প্রমাণ করতে তাঁদের কারও কেটে গিয়েছিল দেড় বছর, কারও বা আরও বেশি। ছাড়া পেয়ে নিজের ভিটেয় ফিরে আহিরণের সুরজ বলছেন, ‘‘ঢের হয়েছে। ব্যবসা গিয়েছে, এখন ভ্যান চালিয়ে খাই। নিজের গ্রামে আয় কম, কিন্তু মিথ্যে হ্যাপা তো নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE