স্ত্রী ও বাবার সঙ্গে বশিরুল সরকার (মাঝখানে)। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
এই ক’দিনে বেমালুম বদলে গিয়েছেন তিনি! ঘুমের ঘোরে মাঝেমধ্যেই চিৎকার করছেন, ‘‘বাঁচাও...বাঁচাও...!’’
বাড়ির কেউ টিভি চালালেও তিনি আঁতকে উঠছেন, ‘‘বন্ধ কর, বন্ধ কর। এখনই গুলি চলবে।’’
‘‘ও আব্বা, কাশ্মীরের আপেল বাগানের একটা গল্প বলো না!’’, ছেলেমেয়েদের বায়না শুনেও তিনি চমকে উঠছেন, ‘‘না, না আমি কিচ্ছু জানি না। ওরা আমায় মেরে ফেলবে!’’
কাশ্মীর ফেরত বশিরুল সরকারকে নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে তাঁর পরিবার। মুর্শিদাবাদের বাহালনগরের বাসিন্দা বশিরুলের মা নুরনেহার বিবি বলছেন, “অভাবের সংসারে ছেলেকে নিয়ে কী করব, কোথায় যাব কিছুই বুঝতে পারছি না। মাঝে মাঝে মৃত বন্ধুদের নাম করে ‘যাই, এক বার দেখা করে আসি’ বলে বেরিয়ে যেতে চাইছে।”
গত ২৯ অক্টোবর কাশ্মীরের কাতরাসুতে জঙ্গি হানায় মারা যান বাহালনগর থেকে আপেল বাগানে কাজে যাওয়া পাঁচ শ্রমিক। গুরুতর জখম হয়ে এখনও কাশ্মীরের হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন জহিরুদ্দিন সরকার। ঘটনার সময় বশিরুল খাবার আনতে যাওয়ায় বেঁচে যান। তবে কাশ্মীর থেকে কলকাতা পর্যন্ত ওই পাঁচ জন শ্রমিকের দেহ আগলে ছিলেন তিনি। ৩১ অক্টোবর কলকাতা বিমান বন্দরে নামার পরে অসুস্থ হয়ে সংজ্ঞা হারান। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে।
পরে তাঁকে সেখান থেকে ছেড়েও দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন ভেবেছিলেন, বাড়ির লোকজনের সঙ্গে থাকলে বশিরুল এই মানসিক ধকল কাটিয়ে ফের স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন। বশিরুলের স্ত্রী ফেমেল বিবি বলছেন, “স্বাভাবিক তো হচ্ছেই না। দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।’’
বশিরুলের এমন অবস্থার কথা শুনে রীতিমতো উদ্বিগ্ন মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তিনি বলছেন, ‘‘ওই যুবক এখনও ট্রমা কাটাতে পারেননি। অবিলম্বে ওঁর চিকিৎসা দরকার। নইলে সমস্যা বাড়বে।’’ ফালি বারান্দায় চৌকির উপর বসে বশিরুল বিড়বিড় করে চলেছেন। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। শাড়ির আঁচল দিয়ে ছেলের চোখের জল মুছিয়ে নুরনেহার আশ্বাস দিচ্ছেন, “ভয় নেই বাপ, সব ঠিক হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy