'আমার পরিবার বিজেপি পরিবার', সদস্য সংগ্রহ করতে বিজেপির নতুন অভিযান। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
রবীন্দ্রপ্রয়াণ দিবসে বিশ্বকবিকে কার্যত দলীয় রাজনীতির এবং বিশেষত নির্বাচনের হাতিয়ারে পরিণত করল বিজেপি। রবীন্দ্রজয়ন্তী তারা পালন করেনি। কিন্তু শুক্রবার ঘটা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস পালন করে সেই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ‘আমার পরিবার, বিজেপি পরিবার’ শীর্ষক সদস্যসংগ্রহ অভিযান শুরু করল তারা। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা থেকে শুরু করে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ পর্যন্ত— সকলেই সেখানে যা বললেন, তার নির্যাস— রবীন্দ্রনাথের ‘স্বপ্নের বাংলা’ গড়তে রাজ্যবাসীকে সপরিবার বিজেপিতে যোগ দিতে হবে এবং আগামী বিধানসভা ভোটে তাদেরকে ক্ষমতায় বসাতে হবে।
রাজ্যের শাসক তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই বক্তব্যকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে যারা সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস থেকে ভাষা সন্ত্রাস সব চালাচ্ছে, সেই দিলীপ ঘোষদের অন্য কোনও সংস্কৃতির কথা বলার অধিকারই নেই! রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলায় মানুষ তাঁদের এ সব কথা শুনতেও চান না।’’
দিলীপবাবু এ দিন সকালে নিমতলা শ্মশানে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। পরে বিজেপির রাজ্য দফতরের বাইরে মঞ্চে বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস পালন করেন দিলীপবাবু, দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ এবং জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়। ওই মঞ্চে নড্ডার একটি ভিডিয়ো-বার্তা শোনানো হয়। সেখানে নড্ডার বক্তব্য, ‘‘রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী মতাদর্শ নিয়ে দেশের এবং বাংলার উত্থানের জন্য কাজ করেছিলেন। আজ প্রতিজ্ঞা করছি, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ব। বর্তমান সরকারের কুশাসনে বাংলায় গ্রহণ লেগেছে। এর বিরুদ্ধে বিজেপি লড়ছে। আজ রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণদিবসে বিজেপি সদস্যকরণ অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’ নড্ডার অভিযোগ, এ রাজ্যে মমতা জমানায় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। আর্থিক, সামাজিক, শিক্ষা, রোজগার, স্বাস্থ্য— সব দিক থেকেই রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে। বিজেপির সদস্য হয়ে এই অবস্থার পরিবর্তনের লড়াইতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান নড্ডা।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
‘আমার পরিবার, বিজেপি পরিবার’ থিম সং
— BJP Bengal (@BJP4Bengal) August 7, 2020
বাংলায় আসল পরিবর্তনের জন্য মিসডকল দিন ৯৭২৭২৯৪২৯৪ নাম্বারে অথবা লগইন করুন https://t.co/sibj9Hm1ju ওয়েবসাইটে। #AmarPoribarBJPPoribar pic.twitter.com/1yx9JbvJIl
দিলীপবাবুর বক্তব্য, এ দিন রবীন্দ্রনাথের তিরোধান দিবস এবং অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মতিথি। এই দিনে সদস্যকরণ শুরু হচ্ছে দলের সদস্য-সংখ্যাকে তিন মাসে তিন কোটিতে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে। দিলীপবাবুর দাবি, এখন তাঁদের সদস্য-সংখ্যা ৯৮ লক্ষ।
রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ আলোচনা করতে গিয়ে বার বার শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নাম টেনে আনেন দিলীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি স্বাধীনতা পূর্ব যুগের বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করেছিল। আর শ্যামাপ্রসাদ স্বাধীনতার আগে এবং পরে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। প্রসঙ্গক্রমে দিলীপবাবু মনে করান, কাশ্মীরে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ করে শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্ন পূরণ করেছেন মোদী-শাহ।
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল এই ছবি। শিল্পী মহফুজ আলি লিখেছেন, আমাদের ঠাকুর শতাব্দী পেরিয়েও ভাইরাল, কারণ, তাঁর সৃষ্টি চিরন্তন। রবীন্দ্রনাথের ‘দীন দান’ কবিতার উল্লেখ করে এর পর লিখেছেন, ভাবছি— এই সময়ে উনি যদি থাকতেন আর লিখতেন, ‘‘শূন্য নয়, রাজদম্ভে পূর্ণ,’’ সাধু কহে, ‘‘আপনারে স্থাপিয়াছ, জগতের দেবতারে নহে’’, তা হলে তাঁকে কী সহ্য করতে হত?
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, নিজেদের ‘অবাঙালির দল’ তকমা মুছতেই এ বার ২২ শ্রাবণ বড় করে পালন করেছে বিজেপি। দিলীপবাবু অবশ্য এ দিন বলেন, শ্যামাপ্রসাদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন সেখানকার সমাবর্তনে রবীন্দ্রনাথকে বাংলায় ভাষণ দিতে অনুরোধ করেন। ব্রিটিশ শাসনে তা ছিল কঠিন সিদ্ধান্ত। এই উদাহরণ দিয়ে দিলীপবাবু দাবি করেন, তাঁদের দল বরাবরই বাঙালির প্রতি নিবেদিত।
এই প্রেক্ষিতেই তৃণমূল-সহ অন্য সব দলের সদস্য-সমর্থকদের বিজেপিতে যোগ দিয়ে পরিবর্তনের লড়াইয়ে সামিল হওয়ার আর্জি জানান দিলীপবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাইছি, এ রাজ্যে কবিগুরুর বাণীকে সফল করে মানুষ মাথা উঁচু করে বাঁচুক। তাই বিভিন্ন দলের মত-পথের মানুষ বিজেপিতে এসে পরিবর্তনের স্বপ্ন পূরণ করুন। তৃণমূলের হয়ে লড়াই করে এখন যাঁরা হতাশ, তাঁরাও আসুন।’’
বিজেপির এই অভিযোগ এবং আহ্বানে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রবীন্দ্র-নজরুলের বাংলায় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি কী ভাবে রক্ষা করতে হয়, আমরা তা করে দেখাচ্ছি। এ রাজ্যের জনগণ জানে, কাকে কী জবাব দিতে হয়। সময় এলে দিলীপবাবুরা সমুচিত শিক্ষা পেয়ে যাবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy