Advertisement
১১ মে ২০২৪
আগাম জামিনের পথ বন্ধ

নারী পাচারে তলব না-করে দ্রুত গ্রেফতার

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া নারী পাচার ও দেহ ব্যবসায় জড়িত কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিস পাঠানো যাবে না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শমীক ঘোষ ও শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

অভিযোগের আঁচ পেয়ে অনেকেই আগাম জামিনের আবেদন করে গ্রেফতারি এড়ানোর রাস্তা খোঁজে।

এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া নারী পাচার ও দেহ ব্যবসায় জড়িত কোনও অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবি নোটিস পাঠানো যাবে না। অভিযোগ পেলে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। জেরা তার পরে। অভিযুক্ত যাতে সতর্ক হওয়ার সুযোগ না-পায়। সেই সঙ্গেই হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, এই ধরনের ঘটনায় কোনও মহিলা উদ্ধার হলে তাঁকে অভিযুক্ত করা যাবে না। তাঁকে নির্যাতিতা হিসেবেই গণ্য করতে হবে।

গত সপ্তাহে পার্ক স্ট্রিট থানার নারী পাচার ও দেহ ব্যবসার একটি মামলায় হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলকে এই নির্দেশ দেয়। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া গ্রেফতার না-করে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা যেন আগাম জামিনের আবেদন করে গ্রেফতারি বিলম্বিত করার সুযোগ না-পায়। নারী পাচার ও দেহ ব্যবসার মামলার তদন্ত এবং তদন্তকারীদের প্রশিক্ষণ নিয়ে আরও কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে ডিভিশন বেঞ্চ।

পুলিশ জানায়, পার্ক স্ট্রিটের ওই মামলায় কয়েক জন মহিলার সঙ্গে এক নাবালিকাকেও উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারী পুলিশ অফিসার নাবালিকা-সহ ওই মহিলাদেরও সেই মামলায় অভিযুক্ত করেছিল। কিন্তু তদন্তকারী অফিসার মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার না-করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তলব (ফৌজদারি বিধির ৪১এ নোটিস পাঠিয়ে) করেন। সেই সুযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি আগাম জামিনের আবেদন জানায় বিচারপতি বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে।

সেই আবেদন খারিজ করে দিয়ে ডিভিশন একটি নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বলা হয়, দেহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কোনও মহিলাকেই কোনও ভাবে অভিযুক্ত করা যাবে না। বরং তাঁর ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্দোবস্ত করতে হবে তাঁর উপযুক্ত পুনর্বাসনেরও।

পার্ক স্ট্রিটে দেহ ব্যবসার ওই মামলার বিচারকাজে ‘গা-ছাড়া’ ভাব দেখানোয় ডিভিশন বেঞ্চ কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক এবং সরকারি আইনজীবীকে ভর্ৎসনা করে। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, মূল অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদের নোটিস পাঠানোর সময় দিয়ে মুখ্য বিচারক ভুল করেছেন। এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ পেয়ে তাঁর আরও সক্রিয় হওয়া (মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া) উচিত ছিল। সেই সঙ্গে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেয় উচ্চ আদালত। ইতিমধ্যেই ওই তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নারী পাচার ও দেহ ব্যবসার মতো সংগঠিত অপরাধের ক্ষেত্রে ঠিক কী ভাবে তদন্ত করতে হবে, কী ভাবে সংরক্ষণ করতে হবে সাক্ষ্যপ্রমাণ, সেই সব বিষয়ে তদন্তকারী ও সরকারি আইনজীবীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য রাজ্য সরকার ও রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।

রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই সব জেলা ও পুলিশ কমিশনারেটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তদন্তকারীদের বলা হয়েছে, এই সব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সরকারি আইনজীবী এবং তদন্তের তদারককারী অফিসারের আইনি পরামর্শ নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Human Trafficking Calcutta High Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE