Advertisement
১১ মে ২০২৪

সারদা-তদন্তে নোটিস শুভেন্দুর ভাইকে

তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এ বার তাঁর ভাই, কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারীকেও নোটিস পাঠাল ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। কাঁথি পুর এলাকায় ‘সারদা এনক্লেভ’ নামক একটি আবাসন প্রকল্পের তথ্য জানতেই পুরপ্রধান হিসেবে সৌমেন্দুকে নোটিস পাঠানো হয়েছে।

সৌমেন্দু ও শুভেন্দু অধিকারী

সৌমেন্দু ও শুভেন্দু অধিকারী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও কাঁথি শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৫
Share: Save:

তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। এ বার তাঁর ভাই, কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারীকেও নোটিস পাঠাল ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। কাঁথি পুর এলাকায় ‘সারদা এনক্লেভ’ নামক একটি আবাসন প্রকল্পের তথ্য জানতেই পুরপ্রধান হিসেবে সৌমেন্দুকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। সৌমেন্দু ও শুভেন্দু কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারীর ছেলে।

সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১২ সালে কাঁথি-দিঘা রাজ্য সড়কের ধারে, বর্তমান ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন একটি জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়বে বলে কাঁথি পুরসভার কাছে দরবার করেন সারদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। ১৯তলা বাড়ি তোলার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু পুরসভা পাঁচতলা আবাসনের নকশা অনুমোদন করে। সেই অনুসারে জমিতে পাঁচিল দেওয়া হয়। বাড়ি তৈরির দামি দামি যন্ত্রও চলে আসে আবাসনের এলাকায়।

অভিযোগ, সেই আবাসন প্রকল্পের নাম করে আমানতকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে সারদা গোষ্ঠী। কিন্তু প্রকল্পটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি। লোপাট হয়ে গিয়েছে বাড়ি তৈরির জন্য আনা বিভিন্ন যন্ত্র এবং সাজসরঞ্জাম। কাঁথি থানার পুলিশ যন্ত্র ও সাজসরঞ্জাম উধাও কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করেছিল। আর টাকা দিয়ে বুকিং করার পরেও ফ্ল্যাট না-মেলায় একাধিক আমানতকারী অভিযোগ দায়ের করেছেন কাঁথি থানায়।

কাঁথি পুরসভা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ধর্মদাস মৌজায় ৫০৬ ডেসিমেল ধানজমিতে প্রকল্পটি শুরু হয়। কাঁথি-১ ভূমি দফতর জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে ওই জমির চরিত্র বদল করে বাস্তুজমি করিয়ে নেওয়া হয়েছে। কাঁথি পুরসভার খবর, ১৯তলা আবাসন গড়ার আবেদন নাকচ করার কারণ, রাজ্যের কোনও পুরসভারই ১৪.৫ মিটারের বেশি উচ্চতার (অর্থাৎ সর্বোচ্চ পাঁচতলা) আবাসন অনুমোদন করার ক্ষমতা নেই। তার চেয়ে বেশি উচ্চতার বাড়ি তুলতে হলে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়ারিং সেল থেকে অনুমোদন নিতে হয়। বিষয়টি সারদা গোষ্ঠীকেও জানানো হয়েছিল।

২০১২ সালেই সারদা কনস্ট্রাকশনের চিফ এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার বা সিইও হিসেবে কর্নেল সৌমিত্র রায় জাঁকজমক করে ওই প্রকল্পের ভিতপুজো করেছিলেন। তার পরেই ফ্ল্যাট বুকিং শুরু করে দেয় সারদা গোষ্ঠী। এ ভাবে অনেকেই লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। কাঁথি শহরের ঢিল-ছোড়া দূরত্বে প্রকল্পের জায়গাটি এখন আঁস্তাকুড়ে পরিণত হয়েছে।

সিবিআই সূত্রের দাবি, শুভেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সারদার ওই আবাসন প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছিল। শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু তখনও কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন, এখনও আছেন। পুরপ্রধান হিসেবে ওই প্রকল্পের নথি দেওয়ার দায় বর্তায় তাঁর উপরেই। এই প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সৌমেন্দু বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারীরা সৌমেন্দুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে সিবিআইয়ের খবর।

সিবিআইয়ের এক শীর্ষ কর্তা জানান, আবাসন প্রকল্পের নামে আমানতকারীদের কাছে তোলা কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্প রূপায়িত হয়নি। উল্টে বেশ কয়েক কোটি টাকা এবং কয়েক কোটি টাকার যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ লুঠ হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। পুরো বিষয়টির কয়েক জন সাক্ষীও আছেন। সেই ঘটনায় কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত, তা খতিয়ে দেখে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন প্রস্তাবিত আবাসন সম্পর্কে যে-সব তথ্য দিয়েছেন, যাচাই করা হবে সেগুলোও।

প্রকল্প বাস্তবায়িত হল না কেন?

সিবিআইয়ের জেরার মুখে সুদীপ্ত একাধিক বার অভিযোগ করেছেন, ওই প্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রকল্প তৈরির জন্য টাকা চেয়ে চাপ দেওয়া হয়েছিল। দাবিমতো টাকা দেওয়ার পরেও সেই প্রকল্প রূপায়ণ করা যায়নি। রাজ্য সড়ক থেকে ওই জমিতে যাওয়ার জন্য একটি কালভার্ট তৈরি করতে কাঁথি পুরসভার কাছে দরবার করা হয়েছিল। সেই কালভার্ট তৈরির জন্যও টাকা দাবি করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন সুদীপ্ত। সমস্যা মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তাতেও কাজ হয়নি। সারদা-প্রধান স্বীকার করে নেন, যাঁরা ফ্ল্যাট বুকিং করেছিলেন, তাঁদের ফ্ল্যাট বা টাকা ফেরত দেওয়া যায়নি।

সারদা-কর্ণধারের দাবির সত্যতা যাচাইয়ে তাঁর সংস্থার কিছু কর্তা ও এজেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। জেরা করা হয় সারদা মামলায় ধৃত সারদার এক কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী এক এজেন্টকেও। সূত্রের দাবি, ওই আবাসন প্রকল্পের জন্য টাকা না-দিলে বাড়ি তৈরির যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ তুলে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাচক্রে সেই যন্ত্রাংশের খোঁজ আর মেলেনি।

২০১৩ সালে সল্টলেকের এ-এল ব্লকে সুদীপ্তের একটি বাড়ি থেকে নথি সরাতে গিয়ে বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়ে দু’টি ট্রাক। সেই ট্রাকে এবং বাড়িটিতে ‘সারদা এনক্লেভ’ প্রকল্পের নানা প্রচারপুস্তিকা ছিল। সেই নথি বাজেয়াপ্ত করে বাড়িটি সিল করে দেয় বিধাননগর পুলিশ। যদিও সেই ঘটনা নিয়ে বিধাননগর পুলিশ বা বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা (সিট) কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। সিবিআই এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cbi saradha scam notice soumendu adhikary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE