প্রতীকী ছবি।
দেশ জুড়ে চুক্তিচাষের অনুমতি দিয়ে সম্প্রতি দু’টি অধ্যাদেশ আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। কৃষিপণ্যের মজুতে বাধা তুলতে সংশোধনী আনা হচ্ছে অত্যাবশ্যক পণ্য আইনেও। চুক্তিচাষ ঘিরে রাজ্যের ছবিটা ঠিক কী?
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, চাষির সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে চাষ নিয়ে চুক্তি করার আইনি সংস্থান এ রাজ্যে নেই। তবে চাষিদের কোনও গোষ্ঠীর সঙ্গে ফসল ফলানোর ব্যাপারে চুক্তি করতে পারে কোনও সংস্থা। সে বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকা আছে। তবে আইন না-থাকলেও রাজ্যের কিছু জেলায় চাষিরা মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে বিভিন্ন সংস্থার জন্য চাষ করেন বলে কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর।
রাজ্যের কৃষিপণ্য বিপণন আইনটি তৈরি হয়েছিল ১৯৭২ সালে। তাতে কৃষিপণ্যের বিপণনের অধিকার স্থানীয় নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিগুলির হাতে দেওয়া ছিল। আইনে বলা হয়, চাষিদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি কেউ কিনতে পারবেন না। সরকার নিয়ন্ত্রিত বাজারেই তা বিক্রি করতে হবে। রাজ্যের যুক্তি ছিল, সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকলে চাষিরা ফসলের উপযুক্ত মূল্য পাবেন। নির্দিষ্ট পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য কমিশন এজেন্ট নিয়োগ করার প্রথা শুরু হয়।
কৃষি দফতরের এক কর্তা জানান, শিয়ালদহের কোলে মার্কেট আজও কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজার। এমন বেসরকারি পাইকারি বাজার মালিকদের হাতে কৃষিপণ্যের নিয়ন্ত্রণ যাতে চলে না-যায়, তা নিশ্চিত করতেই ওই আইন করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন বাজার বা মান্ডিতে কমিশন এজেন্টরাই কালক্রমে একচেটিয়া কারবারি হয়ে ওঠেন।
২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সারা দেশের চুক্তি চাষ চালু এবং কৃষিপণ্যের বাজারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করে। পশ্চিমবঙ্গে এ নিয়ে তৎকালীন শাসক বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএমের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়।
চুক্তিচাষের পথে
১৯৭২-এর আইনে কৃষিপণ্য বিপণনের নিয়ন্ত্রণ নেয় সরকার
বেসরকারি বাজারে কৃষিপণ্যের পাইকারি কারবার নিষিদ্ধ
২০০৩-এ কৃষিতে বৃহৎ পুঁজি টানতে মডেল আইন আনে কেন্দ্র
সংস্কার করতে চেয়েও শরিকি বিবাদে পিছিয়ে আসে বামফ্রন্ট সরকার
২০১৪ সালে রাজ্যে বৃহৎ পুঁজির প্রবেশ ও বেসরকারি পাইকারি ও খুচরো বাজারে সম্মতি
২০১৭ সালে ফের সংশোধনী এনে ই-ট্রেডিং চালু
২০১৪ সালে কৃষিপণ্য বিপণন আইনে প্রথম সংশোধন আনে তৃণমূল সরকার। তাতে বেসরকারি বাজার তৈরি, সরকারি লাইসেন্স নিয়ে কৃষিপণ্যে বৃহৎ পুঁজির প্রবেশে সায় দেওয়া হয়। আগে কোনও সংস্থাকে কোনও অঞ্চলে কোনও একটি কৃষিপণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য স্থানীয় বাজার সমিতির কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হত। সরকার সেই বিধি বদলে রাজ্য বিপণন বোর্ড থেকে একটি মাত্র লাইসেন্স নিয়ে সারা রাজ্যে কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধা করে দেয়।
২০১৭ সালে আরও একটি সংশোধনী এনে সরকার ই-ট্রেডিং শুরু করার অনুমতি দেয়। তবে আইনে কোথাও চুক্তিচাষের প্রসঙ্গ রাখা হয়নি। এক কৃষি বিপণন কর্তার কথায়, ‘‘কৃষিপণ্যের কারবারে যুক্ত সমস্ত বহু পণ্যের মল, বাজার, পাইকারি সংস্থা রাজ্যে চলছিল, কিন্তু তাদের কোনও আইনি বর্ম ছিল না। পর পর দু’টি সংশোধনীতে তাদের আইনি রক্ষাকবচ দেওয়া হয়।’’
রাজ্যে চুক্তিচাষের আইনি সংস্থান প্রসঙ্গে নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘একটি আদেশনামা জারি করে বলা আছে, কোনও বেসরকারি বহুজাতিক সংস্থা ফার্মার প্রোডিউসার অর্গানাইজেশন (এফপিও) বা ফার্মার প্রোডিউসার কোম্পানি (এফপিসি)-র সঙ্গে চুক্তিচাষ করতে পারবে।’’ তবে কোনও চাষির সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে চুক্তি করা এখনও বেআইনি।
যদিও কৃষিকর্তারা জানাচ্ছেন, বর্ধমান, হুগলির বিস্তীর্ণ অঞ্চলে একাধিক বহুজাতিক সংস্থা চাষিদের আলু বীজ দেয়, আগাম চুক্তি করে নির্দিষ্ট দামে আলু কিনে নেয়। যে সব বহু পণ্যের বিপণিতে আনাজ রাখা হয়, তারাও চাষিদের থেকে বিন, ব্রকোলি, ক্যাপসিকাম চুক্তিচাষের মাধ্যমেই সংগ্রহ করে। প্রশাসনিক কর্তারা জানাচ্ছেন, চাষিরা দাম পাচ্ছেন, সংস্থাগুলি গুণগত মান দেখে নিচ্ছে। কোনও বাধা আসছে না। ফলে তা চলছে। কখনও চুক্তিচাষ হচ্ছে বলে অভিযোগ এলে সরকার খতিয়ে দেখবে। আজই চুক্তিচাষ-সহ কৃষি সংস্কারে দু’টি অর্ডিন্যান্স জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy