Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধুকে খুন, পুরপ্রধানের ছেলে ধৃত

স্কুল হোক বা এলাকা— প্রায় সব সময় এক সঙ্গে ঘুরত ছেলে দু’টো। বুধবার বর্ধমানের কালনার পুকুর থেকে সুহৃৎ দাস (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের দেহ মেলার পরে, সমবয়সী তার সেই বন্ধুকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের ছেলে।

ভাঙা হচ্ছে পুরপ্রধানের মোটরবাইক।—নিজস্ব চিত্র

ভাঙা হচ্ছে পুরপ্রধানের মোটরবাইক।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ০৯:২৫
Share: Save:

স্কুল হোক বা এলাকা— প্রায় সব সময় এক সঙ্গে ঘুরত ছেলে দু’টো। বুধবার বর্ধমানের কালনার পুকুর থেকে সুহৃৎ দাস (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক ছাত্রের দেহ মেলার পরে, সমবয়সী তার সেই বন্ধুকেই গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের ছেলে। সেই সূত্রে জনতার একাংশ এ দিন খেপে উঠে কোণঠাসা করে ঘটনাস্থলে যাওয়া পুরপ্রধানকে। তাঁর সঙ্গী এক কাউন্সিলরকে মারধর করা হয়। একটি দোকানে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পান পুরপ্রধান। তবে তাঁর মোটরবাইক এবং তাঁকে উদ্ধার করতে যাওয়া পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, অম্বিকা মহিষমর্দিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সুহৃতের দেহে একাধিক ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। অনুমান, শ্বাসরোধ করা হয়ে থাকতে পারে। এসডিপিও (কালনা) ওয়াই রঘুবংশি বলেন, ‘‘কী কারণে ছেলেটিকে মারা হয়েছে, স্পষ্ট নয়। কী ভাবে মারা হয়েছে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে।’’ সুহৃতের ‘বন্ধু’টিকে আজ, বৃহস্পতিবার বর্ধমানের জুভেনাইল আদালতে তোলা হবে।

পরিবার জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় এক শিক্ষকের বাড়িতে যাবে বলে বেরিয়েছিল সবুজ-নীল টি শার্ট পরা সুহৃৎ। আর ফেরেনি। মঙ্গলবার নিখোঁজ-ডায়েরি হয়। বিকেল পর্যন্ত সুহৃতের কাছে থাকা দু’টি মোবাইলের একটি বেজেছে। তার দেহ থেকে পুলিশ একটি মোবাইল পেলেও যে মোবাইলটি মঙ্গলবার পর্যন্ত বাজছিল, সেটি পাওয়া যায়নি। সুহৃতের বাবা হৃষিকেশ দাসের দাবি, সোমবার রাতে ছেলে বাড়ি না ফেরায় তার সব বন্ধু, সহপাঠীদের কাছে খোঁজ নেওয়া হয়। এলাবাসীর একাংশ জানান, সোমবার রাত ৮টা নাগাদ কালনা রিক্রিয়েশন ক্লাব লাগোয়া এলাকায় পুরপ্রধানের ছেলে এবং স্থানীয় যুবক চন্দ্রকান্ত বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা গিয়েছে সুহৃৎকে। চন্দ্রকান্ত কালনার পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সমরজিৎ হালদারের ঘনিষ্ঠ। ঘটনাস্থলের পাশেই সমরজিৎবাবুর একটি জেনারেটর রাখার ঘর আছে। মঙ্গলবার সমরজিৎবাবু এবং পুরপ্রধানের ছেলের কাছে সুহৃতের খোঁজে গিয়ে ‘সন্তোষজনক’ জবাব পাননি তিনি।

হৃষিকেশবাবুর কথায়, ‘‘কাউন্সিলর বললেন, তিনি সুহৃতের ব্যাপারে কিছু জানেন না। চেয়ারম্যানের ছেলে জানাল, সুহৃৎকে একটি মেয়ের সঙ্গে চলে যেতে দেখেছে সে। মেয়েটি কে, কেন সুহৃৎ তার সঙ্গে গিয়েছে— সে জানে না। দু’জনের কথাই বিশ্বাস হয়নি।’’ কিন্তু দীর্ঘদিনের ওই ‘বন্ধু’ কেন মারতে যাবে সুহৃৎকে, সমরজিৎবাবুই বা কেন জড়াবেন? হৃষিকেশবাবুর বক্তব্য, ‘‘কিছু দিন আগে মোবাইলের এসডি-কার্ড নিয়ে ছেলের সঙ্গে ওর ওই বন্ধুর কথা কাটাকাটি হচ্ছিল বলে শুনেছিলাম। হয়তো সেই কার্ডে তেমন কিছু ছিল!’’ জুড়ছেন, ‘‘আমার ধারণা, সমরজিৎবাবু সব জেনেও মুখ খুলছেন না।’’ কালনা শহরের একটি সিনেমা হল লাগোয়া পুকুরে এ দিন সুহৃতের দেহ মিলেছে শুনেই সমরজিৎবাবুকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান পুরপ্রধান। তখনই হামলা হয় তাঁদের উপরে। তার পর থেকেই সমরজিতের দেখা পায়নি পুলিশ। খোঁজ মেলেনি চন্দ্রকান্তেরও।

পুরপ্রধান দেবপ্রসাদবাবু নিজেই ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বলেন, ‘‘আমার ছেলের নামে খুন করার অভিযোগ হয়েছে। ছেলে যদি দোষ করে থাকে, সাজা পাবে। পুলিশ সত্যিটা বের করুক।’’ ঘটনাস্থলে যাওয়া কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘‘পুলিশকে বলেছি, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে।’’ এসডিপিও বলেন, ‘‘ব্যাপারটায় কিছু ধোঁয়াশা আছে। আমরা পলাতকদের দ্রুত ধরার চেষ্টা করছি। ধৃতকে জেরাও চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

police chairperson Murder tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE