ছবি: পিটিআই।
লকডাউন বা তালাবন্দি মানে যে ছুটি নয়, সেই বার্তাই দিচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রশাসন। তাই ছুটির মেজাজে পথেঘাটে ভিড় জমালে বা হুল্লোড় করলে নিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলে সোমবার নির্দেশিকা দিয়েছে সরকার।
রবিবার বিকেলে ‘জনতা কার্ফু’ চলাকালীন অনেকেই কাঁসর, ঘণ্টা বা থালা হাতে রাস্তায় হুল্লোড় করতে নেমে পড়েছিলেন। ফেটেছে পটকাও। তাতেই টনক নড়ে প্রশাসনের। কেন্দ্রের বক্তব্য, রাজ্যগুলিকে বলা হয়েছে, কেউ অকারণে পথে নামলে, বিশেষত জমায়েতে শামিল হলে তাঁর বিরুদ্ধে মহামারি প্রতিরোধ আইন ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের আওতায় ফৌজদারি বিধিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সে-ক্ষেত্রে জেল ও জরিমানা দুই-ই হতে পারে। রাজ্যে মহামারি আইন বলবৎ আছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে বলেন, “এখনও কিছু নাগরিক লকডাউনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দয়া করে নিজেকে বাঁচান, নিজের পরিবারকে বাঁচান। সর্বতোভাবে নিয়ম পালন করুন। সব রাজ্য সরকারকে আমার অনুরোধ, ওই সব নিয়মকানুন পালনের বিষয়টি তারা নিশ্চিত করুক।” রবিবার নাগরিকদের বাড়ির দরজা বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাততালি, কাঁসর-থালা বাজিয়ে এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে কর্মরত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ-সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্মীদের কৃতজ্ঞতা জানাতে বলেছিলেন মোদী। কিন্তু নাগরিকদের একাংশ যে রাস্তায় নেমে হুল্লোড় করবেন, তা ভাবা যায়নি। কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, এর জন্য দায়বদ্ধ থাকতে হবে জেলাশাসক, এসপি, পুলিশ কমিশনারদের। যাতে কেউ অকারণে রাস্তায় না-বেরোন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একই লক্ষ্যে এ দিন সব রাজ্যের ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশের (ডিজিপি) সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবও। নির্দেশ না-মানলে এ দিন কড়া ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
আরও পড়ুন: করোনা রুখতে মাঙ্কি টুপি ‘ভরসা’ পাচারে
করোনা-আবহে বড় জমায়েতে বড় বিপদের আশঙ্কা আছে। সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে ভিডিয়ো-বৈঠকে ক্যাবিনেট সচিব প্রদীপকুমার সিংহ জানান, করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে জিততে লকডাউন সফল করা জরুরি।
কী করবেন না
• জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাবেন না।
• রাস্তায় বা মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, আড্ডা নয়।
• সাত বা তার বেশি লোকের জমায়েত চলবে না।
• বন্ধু বা প্রতিবেশীর বাড়িতে পার্টি-পিকনিক নয়।
অমান্যের সাজা*
• ১৮৮ ধারা: সরকারি আদেশ অমান্য (মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন সঙ্কটে ফেলতে পারে)। ছ’মাসের জেল, এক হাজার টাকা জরিমানা।
• ২৬৯ ধারা: সংক্রামক ও বিপজ্জনক রোগ ছড়ানো। ছ’মাসের জেল, জরিমানা।
• ২৭০ ধারা: মারাত্মক রোগ ছড়ানো। দু’বছরের জেল ও জরিমানা।
• ২৭১ ধারা: কোয়রান্টিন নিয়ম ভাঙা। ছ’মাসের জেল ও জরিমানা।
*ভারতীয় দণ্ডবিধি
আজ থেকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা
• সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টো।
• পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে একই ব্যাঙ্কের একাধিক শাখা থাকলে একটি থেকেই সব শাখার কাজ হবে।
• টাকা তোলা ও জমা, চেক ক্লিয়ারিং, আরটিজিএস ও নেফ্টের মাধ্যমে টাকা পাঠানো, পেনশন ও কর জমা-সহ সরকারি কাজকর্ম চালু থাকবে।
• সাধারণ সময়ের চেয়ে কম কর্মী দিয়ে কাজ হবে।
পেট্রল পাম্প
• সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা।
• কর্মী থাকলে কোনও পাম্প তার চেয়েও বেশি সময় খোলা রাখতে পারে।
করোনা-পরিস্থিতি নিয়ে নবান্নে সর্বদল বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি হাত জোড় করে অনুরোধ করব, বলপূর্বক নয়, কেন্দ্র ও রাজ্য ভালর জন্যই এই নির্দেশিকা দিয়েছে। মানবিক ভাবে তা মেনে চলা উচিত। চ্যারিটি বিগিন্স অ্যাট হোম। আমার ভাইদের স্ত্রীরা আমাকে খাবার দিতে আসত। তাদের আসাও বন্ধ করে দিয়েছি। আমি যদি নিজের বাড়িতে এটা করতে পারি, তা হলে সকলে এটা করবে না কেন? টুইটারে জেনেছি, পঞ্জাবে কার্ফু জারি করা হয়েছে এবং কেরলে তো জমায়েত করার জন্য এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
দিল্লিতে কিছু কিছু গাড়ি আটকে কারণ জানতে চাইছে পুলিশ। অকারণে রাস্তায় ঘুরলে অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে। বিকেল ৫টার পরে পথ গাড়িহীন ও জনশূন্য করতে কলকাতায় রাস্তায় নামেন ডিসি স্তরের আধিকারিকেরা। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা জানান, নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগে ২৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলার খবর, বিভিন্ন কমিশনারেট এবং জেলা সদরেও পুলিশ রাস্তাঘাটে টহল দিয়েছে। রাতেও সেই টহল অব্যাহত থাকে। রাতের দিকে যান চলাচল রুখতে চলে নাকা তল্লাশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy