মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের নিজস্ব ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আর্জি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে মঙ্গলবার তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপুল আর্থিক দায় রাজ্যকেই বহন করতে হচ্ছে। সেই কারণে এফআরবিএম (ফিসক্যাল রেসপন্সিবিলিটি বাজেটারি ম্যানেজমেন্ট)-এর সীমা ৩% থেকে বাড়িয়ে ৫% করার আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এরই সঙ্গে সোমবার সর্বদল বৈঠকের প্রস্তাব মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আপৎকালীন সহায়তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে সব দলের তরফে। রাজ্যের দাবির পক্ষে যেখানে সই থাকছে বিজেপিরও। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার যে সব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার আর্থিক দায়ভার সামাল দিতে এক হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ, অন্তত আগামী এক বছর ঋণশোধ স্থগিত রাখতে দেওয়ার (মোরাটোরিয়াম) অনুমতি এবং করোনা পরীক্ষায় আরও মেডিক্যাল কিট, সরঞ্জাম, ল্যাবরেটরি-সহ পরিকাঠামোগত সহায়তা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই চিঠির খসড়া করে পাঠিয়েছেন কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপি, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক এবং এসইউসি নেতাদের কাছে। বিরোধী নেতারা সম্মতিও দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে একটা চিঠি লিখেছি। সর্বদল বৈঠকের চিঠিটাও পাঠিয়েছি। তার সঙ্গে আমরা আমাদের এফআরবিএম-এ সীমা তিন শতাংশের পরিবর্তে পাঁচ শতাংশ করতে বলেছি। কারণ, আমাদের কোনও সহযোগিতা নেই। কোনও কোনও রাজ্য পেট্রলের উপরে সেস বসিয়েছে। তা আমরা করিনি, কারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে পয়সাকড়ি খুব কম। অনেক পরিকাঠামো বাড়াতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে সহযোগিতা পাইনি। একটা তহবিল গড়েছি। তাতে সাধারণ মানুষ এক টাকা দিতে চাইলেও অসুবিধা নেই। অনেকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি এটা তো বেশি কিছু দেওয়া নয়, শুধু এফআরবিএম-টা যাতে বাড়ানো হয়। আগামী এক মাস কী হবে, জানি না! করোনা কবে নিয়ন্ত্রণ হবে, তা-ও জানি না।’’
আরও পড়ুন: দেশে তৈরি ১২০০ টাকার কিটে কেন্দ্রের ছাড়, চালু হবে রাজ্যের ৫ টি বেসরকারি কোভিড-১৯ পরীক্ষাকেন্দ্র
অর্থ দফতর সূত্রের ব্যাখ্যা, বর্তমান এফআরবিএম অনুযায়ী রাজ্যের মোট আভ্যন্তরীণ গড় উৎপাদনের (স্টেট জিডিপি) ৩%-এর সমপরিমাণ অঙ্ক বাজার থেকে ঋণ নিতে পারে রাজ্য সরকার। এখন রাজ্যের জিডিপি আনুমানিক ১৪.৭ লক্ষ কোটি টাকা। এর ৩% ঋণ বাজার থেকে নিতে সক্ষম রাজ্য। সেই সীমা ৫% করার আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, চলতি পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই ২০০ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। এর সঙ্গে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য গণবন্টন ব্যবস্থায় আগামী ৬ মাস বিনামূল্যে চাল-গম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ি এবং মিড-ডে মিল প্রকল্পেও বিনামূল্যে চাল-আলু দেওয়া হচ্ছে। সর্বদল বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, করোনা-মোকাবিলায় বিশেষ তহবিল দেওয়া উচিত কেন্দ্রের। তার পরেই এফআরবিএম-এর সীমা বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন তিনি।
এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় এবং বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত টুইট করে রাজ্য সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের আওতায় এখন করোনা রোগীদেরও আনা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের উচিত, জেদ ছেড়ে ওই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করা। সঙ্কটের সময়ে বিতর্ক বাড়াতে চান না বলে তৃণমূল নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি নেতাদের ওই মন্তব্যের বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে তাঁদের প্রশ্ন, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ তো বিমার টাকা। কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য বা তহবিলের বিষয়ে বিজেপি নেতারা নীরব কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy