Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

‘শখ করে রোগ না-বাধিয়ে আমাকে দেখুন’

৩৮ দিন ভেন্টিলেটরে কাটিয়ে কোভিড-জয়ীআমার মতো একজন ভুক্তভোগী মানুষ জানে, জীবন থাকলে যা-ই সমস্যা হোক, ভবিষ্যতেও ঠিক পুজো আসবে। বার বার আসবে।

বাড়ি বসে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে বলেই এত বড় মারাত্মক অসুখটাকে হেলাফেলা করা যায় না। 

বাড়ি বসে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে বলেই এত বড় মারাত্মক অসুখটাকে হেলাফেলা করা যায় না। 

নিতাইদাস মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২০ ০৪:১৪
Share: Save:

কথাগুলো অনেক দিন ধরেই আমার ভেতরে গজগজ করছে। অনেক দিন ধরেই ভাবছি, কী ভাবে বলা যায় কথাগুলো। লিখব না কোনও লাইভ বক্তৃতা দেব, কী ভাবে আমার কথাগুলো আপনাদের কানে ঢুকবে, নিজেও বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এর মধ্যে পুজো নিয়ে হাইকোর্টের রায়টুকু শুনে আমার ভেতরে যেন স্বস্তির বৃষ্টি নামল।

কী ভাবছেন, আমি নেহাতই বেরসিক, কাঠখোট্টা পুজোটুজো ভালবাসি না? না কি, পুজোকে ঘিরে মানুষের আবেগ, রুটিরুজির মানে আমি কিছুই বুঝি না? কিন্তু আমার মতো একজন ভুক্তভোগী মানুষ জানে, জীবন থাকলে যা-ই সমস্যা হোক, ভবিষ্যতেও ঠিক পুজো আসবে। বার বার আসবে। কিন্তু বাড়ি বসে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে বলেই এত বড় মারাত্মক অসুখটাকে হেলাফেলা করা যায় না।

কোভিড যে কত গভীরে তার পদচিহ্ন রেখে যায়, তা নিজে জানি। ৩৮ দিন ভেন্টিলেটরে থেকে ফিরে এসেছি। আর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঠিক আগে থেকে জীবনের ২৫টা দিন আমার স্মৃতি থেকেই এখনও বেমালুম লোপাট। প্রথম সাড় ফেরার পর থেকে একটু একটু করে জীবনে ফিরতে লেগেছিল আরও দু’আড়াই মাস। মনে হচ্ছিল, কোমার আঁধার পেরিয়ে আমি যেন আবার জন্ম নিচ্ছি। শিশুর মতোই নরম ল্যাতপেতে একটা শরীর সংহত করে প্রথম হাঁটতে শেখার মতোই আমি ধীরে ধীরে মাটিতে পা ফেলছিলাম।

আরও পড়ুন: আজ নজর আদালতে, মণ্ডপে বাড়তি বাহিনী, ড্রোনও

আরও পড়ুন: শ্রদ্ধা, সমীহে ভূষিত দুই বন্দ্যোপাধ্যায়

করেনা হওয়ার প্রায় সাত মাস বাদে আমার শরীরের বিভিন্ন রিপোর্ট বিশেষত, বুক বা ফুসফুসের দশা আগের থেকে ভাল হলেও শরীরে সীমাহীন দুর্বলতা থেকে গিয়েছে। গাঁটে গাঁটে অসম্ভব ব্যথা, বাঁ দিকের ফ্রোজন শোল্ডারে করোনা এখনও তার আদরের চিহ্ন রেখে গিয়েছে। জানি না কত দিন থাকবে। যারা ভাবছেন, এ আর এমন কী রোগ প্রায় সকলেই সেরে উঠছে তাঁরা প্লিজ আমার কথাগুলো শুনুন।

এখনও একটু ধকলে ক্লান্ত লাগে। এই ৫৩ বছর বয়সে নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজে মানুষের বিপদে তো কম ঝাঁপিয়ে পড়িনি। রাজপথে পরিত্যক্ত অসুস্থদেরও অনেক কাছ থেকে দেখেছি। তা থেকেই জানি, এই অজানা অসুখ কত মারাত্মক শত্রু। তা বলে আমি কি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছি না? আমার কাজই মানুষের মাঝে গিয়ে কাজ করা। কিন্তু তা করতে গিয়ে নিজেকে বা অন্যকে বিপদে ফেলা তো হঠকারিতা হবে। বাড়িতে অশীতিপর মা, কাকিমা। আমি, আমার স্ত্রী সাবধানে অফিস করছি। আর আপনারা পুজোয় কী করে অঞ্জলি দেবেন, ভাবছেন? বাড়ির বয়স্কদের তো কটা দিন কিছুতেই বেরোতে দেবেন না।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE