গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রোজভ্যালি কাণ্ডে ধৃত ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায়চৌধুরী এবং তাঁর সহযোগিদের বাড়ি তল্লাশি করতে গিয়ে উঠে এল এক পুলিশ কর্তার নাম। সেই পুলিশ কর্তার সঙ্গে সুদীপ্তর আর্থিক লেনদেনের তথ্যপ্রমাণও পেয়েছেন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তদন্তকারীরা।
ইডি সূত্রে খবর, সুদীপ্তর বাড়িতে তল্লাশি চালানোর সময় একটি ডায়েরির হদিশ পান তদন্তকারীরা। সেই ডায়েরিতে ছিল বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের হিসাব। সেই ডায়েরিতেই মেলে বিরাটির পঞ্চশীল গার্ডেনের বাসিন্দা অভিজিৎ ভাদুড়ির নাম। সুদীপ্তকে জেরা করে জানা যায়, অভিজিৎ তাঁর ব্যবসায় সহযোগী।
ইডির তদন্তকারীরা অভিজিতের বিরাটির বাড়িতে তল্লাশি করতে গিয়ে আরও একটি ডায়েরি পান। ইডি সূত্রে খবর, সেই ডায়েরির ১৬ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে একটি নাম। সূত্রের খবর, অভিজিৎ জেরায় বলেছেন, ওই ব্যক্তি সুদীপ্তর মাধ্যমে তাঁদের নির্মাণ ব্যবসায় লগ্নি করেছিলেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জেবিএল কনস্ট্রাকশন নামে সুদীপ্তর একটি নির্মাণ কোম্পানি রয়েছে। সেই কোম্পানি মূলত যৌথ উদ্যোগে তৈরি করেবহুতল। পাশাপাশি জমি-বাড়ির দালালির কাজও করে। জেরায় অভিজিৎ জানিয়েছেন,ওই ডায়েরিতে যে ব্যক্তির নাম পাওয়া গিয়েছে তিনি একজন আইপিএস অফিসার। সুদীপ্তর মাধ্যমে বেনামে টাকা লগ্নি করেছিলেন। ইডি সূত্রে খবর, ডায়েরিতে লেখা তথ্য অনুযায়ী বেশ কয়েক লাখ টাকা সুদীপ্তর মাধ্যমে নির্মাণ ব্যবসায় বেনামে ঢেলেছেন ওই পুলিশ কর্তা। ইডি সূত্রে খবর, সুদীপ্তকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ওই আইপিএস এক সময়ে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটে অতিরিক্ত ডিসির পদে ছিলেন। বর্তমানে পদন্নোতি হয়ে তিনি পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিক।
রোজভ্যালি কাণ্ডে ধৃত সুদীপ্ত রায়চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।
আরও পড়ুন: অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে ফের হবে মহাপ্লাবন! হুঁশিয়ারি বিজ্ঞানীদের
বৃহস্পতিবার ইডি রোজভ্যালি কাণ্ডের নতুন মামলা (এমএল ০২/ ১৮/০৭/২০১৮)-য়সুদীপ্ত রায়চৌধুরীকে বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দিয়েছে বিশেষ আদালতে। ইডি তাঁদের চার্জশিটে জানিয়েছে, ২০১২ সালে মধ্য কলকাতার একটি হোটেলে এক ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে সুদীপ্তর সঙ্গে আলাপ হয় রোজ ভ্যালি কর্তা গৌতম কুণ্ডুর। পরবর্তীতে সুদীপ্ত নিজের স্ত্রী মিতালির নামে তৈরি একটি কোম্পানির ব্যানারে ‘কাটাকুটি’নামে একটি বাংলা ছবি প্রযোজনা করেন। সুদীপ্ত সেই ছবির সত্ত্ব গৌতমের সংস্থাকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে। এর পর থেকেই গৌতমের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে।
গৌতম বিভিন্ন সময়ে জেরায় সিবিআই এবং ইডি আধিকারিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি সুদীপ্তকে তিন দফায় ২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।জেরায় তিনি দাবি করেন, সুদীপ্ত তাঁকে কথা দিয়েছিলেন, বিভিন্ন আইনি জটিলতা সামলে দেবেন। গৌতমকে জেরা করেই জানা যায়, তাঁর নির্দেশে রোজভ্যালি গোষ্ঠীর সংস্থা ‘ব্যান্ড ভ্যালু কমিউনিকেশন’-এর কর্মী রূপাল কবিরাজ ওই টাকা তুলে দিয়েছিলেন সুদীপ্তর হাতে। ইডি সূত্রে খবর, রুপালকে জেরা করে তাঁরা জানতে পারেন, সংস্থার সেক্টর ফাইভের অফিসের নীচে নিজের গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন সুদীপ্ত। রূপাল দু’টি কাগজের বাক্সে করে নগদ টাকা নিয়ে নামেন। সুদীপ্ত তখন রূপালকে গাড়ি নিয়ে তাঁর গাড়ি অনুসরণ করতে বলেন। নিক্কো পার্কের কাছে সুদীপ্তর গাড়ি থামে। সেখানে হাজির হয় মেরুন রঙের অন্য একটি গাড়ি। সুদীপ্তর নির্দেশে সেই টাকা তুলে দেওয়া হয় ওই গাড়িতে। ইডি সূত্রে খবর, প্রথমবার দু’টি বাক্সে ছিল এক কোটি টাকা। সেই টাকা পেয়ে অখুশি ছিলেন সুদীপ্ত। তারপর তিনি ফের যোগাযোগ করেন গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে। ওই দিনই ফের একই জায়গায় আরও ৭৫ লাখ টাকা নগদে তুলে দেওয়া হয় সুদীপ্তর হাতে।
আরও পড়ুন: পাহাড় জুড়ে বরফ, কাঁপছে দার্জিলিং, কলকাতাতেও শীতলতম দিন
তদন্তকারীরা সুদীপ্তর বাড়ি তল্লাশি করতে গিয়ে মোট আটটি সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন। সেই সম্পত্তি ওই টাকায় কেনা হয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তার পাশাপাশি অভিজিৎ ভাদুড়ির ডায়েরি থেকে পাওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩-২০১৫ সাল পর্যন্ত সুদীপ্তর কাছ থেকে প্রায় ৮১ লাখ টাকা পেয়েছিলেনঅভিজিৎ। ইডির তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রয়োজনে তাঁরা ওই পুলিশ কর্তাকেও তলব করবেন জেরার জন্য। কারণ, সুদীপ্তর মাধ্যমে জেবিএল কলস্ট্রাকশনে বেনামে লগ্লি করা টাকার উৎস কী, তা জানতে চান গোয়েন্দারা। ওই টাকার সঙ্গেও চিটফান্ডের যোগ থাকতে পারে সন্দেহ গোয়েন্দাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy