Advertisement
২২ মে ২০২৪

ট্রেন মিস করে অসমের যুবকের ঠাঁই লুম্বিনীতে

গত বছর নভেম্বরের এক সন্ধেয়।

দীপেশ মুণ্ডা। —ফাইল চিত্র।

দীপেশ মুণ্ডা। —ফাইল চিত্র।

অন্বেষা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৪:১৪
Share: Save:

চা বাগানে কাজ করে মাসে হাতে আসে মাত্র ১৩২০ টাকা। সংসার টানা দায়। তাই অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে বেঙ্গালুরু যাওয়ার ট্রেন ধরেছিলেন দীপেশ মুণ্ডা। সাঁকরাইল স্টেশনে থেমেছিল ট্রেন। জল খেতে নেমে আর উঠতে পারেননি ৩৫ বছরের যুবক। গত বছর নভেম্বরের এক সন্ধেয়।

তার পর গত আট মাস কোনও খবর ছিল না অসমের তিনসুকিয়ার চা বাগানের হতদরিদ্র শ্রমিক দীপেশের। তাঁর স্ত্রী রূপালি জীবনে কখনও বাগানের বাইরে পা রাখেননি। তাই স্থানীয় ভাবে খোঁজ করা ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেননি। সেই দীপেশ রবিবার সকালে বাড়ি পৌঁছেছেন। রূপালি তাঁকে ফিরে পেয়েছেন কলকাতার লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে।

অথচ দীপেশের কোনও মানসিক অসুখ ছিল না বলে চিকিৎসকেরাই জানিয়েছেন। মানসিক রোগীদের নিয়ে কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরাও জানিয়েছেন, ওই যুবকের মানসিক অসুস্থতা নেই। তা হলে সে ভাবে কিছু খোঁজখবর না করে দীপেশকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করল কেন পুলিশ?

ফোনে দীপেশ জানালেন, সে দিন ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় ভয়ে ছুট দিয়েছিলেন। স্টেশনের বাইরে তখন কয়েক জনের হাতাহাতি চলছিল। স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই বাকিরা পালিয়ে যায়। দাঁড়িয়ে ছিলেন শুধু দীপেশ। তাঁকে নিয়ে যায় পুলিশ। সাঁকরাইল থানায় গিয়ে ভাষার অসুবিধেয় অফিসারদের ঠিকমতো কিছু বোঝাতে পারেননি তিনি। বেঙ্গালুরুর ঠিকাদারের নাম-নম্বর বলেও লাভ হয়নি বলে দীপেশের দাবি। থানা থেকে তাঁর ঠাঁই হয় লুম্বিনীতে। সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য শুক্লা দাসবড়ুয়ার প্রশ্ন, ‘‘ভাষা বোঝা যায়নি বলে কাউকে কি মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া যায়?’’ যদিও সাঁকরাইল থানার এক অফিসার বললেন, ‘‘আদালতের নির্দেশেই মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয় ওই যুবককে। তাঁর প্রেসক্রিপশনেও লেখা ছিল, মানসিক সমস্যার কথা।’’

আরও পড়ুন: যাব কোথায়, গুলিই করুক

লুম্বিনীতে দীপেশ প্রথম দু’-তিন মাস কিছু বলতেই পারেননি। নার্সদের কাছে শুধু জানতে চেয়েছেন, তিনি কোথায়? দুই ছেলের কথা ভেবে মনে মনে কষ্ট পেয়েছেন। মনোবিদ ও সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়ের কথায়, ‘‘এমনিতেই চরম দারিদ্রে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত দীপেশ। তার পর তাঁকে আরও যন্ত্রণায় ঠেলে দেওয়া। তবে গত মে মাসে মানসিক স্বাস্থ্য আইন সংশোধনের পরে পুলিশ কাউকে এ ভাবে মানসিক হাসপাতালে চালান করে দিতে পারবে না।’’

দীপেশের ক্ষেত্রে আরও জটিলতা ছিল। তাঁর না ছিল ভোটার কার্ড, না আধার। রূপালির কাছে এর মধ্যে স্বামীর খবর পৌঁছে দিয়েছিলেন অসমেরই আর এক যুবক হাসান গালিব (এক সময়ে লুম্বিনীতে তাঁরও চিকিৎসা হয়েছিল)। হাসানের সাহায্য নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শুক্লা এবং অনিন্দিতা চক্রবর্তী তিনসুকিয়ায় গিয়ে জানতে পারেন, দীপেশকে ফিরিয়ে আনার মতো কোনও পরিচয়পত্রই নেই পরিবারের হাতে।

ওই সংস্থার হস্তক্ষেপেই তিনসুকিয়ার স্থানীয় প্রশাসন-থানার তরফে লিখে দেওয়া হয়, দীপেশ-রূপালি স্বামী-স্ত্রী। দীপেশ আর তাঁর পরিবারকে কয়েক পুরুষ ধরে চেনেন ‘গাঁওবুড়া’ (মুখিয়া)। সই করেন তিনিও। কাগজপত্র নিয়ে কলকাতা রওনা দেন রূপালি আর দীপেশের ভাই সামুরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assam NRC NRC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE