Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাঠে পড়ে ধান, আধার থেকে জমির কাগজ, লাইনে চাষিরা

স্থানীয়েরা বলছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এ ভাবেই ছাপ ফেলেছে রুজি-রোজগারে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২৯
Share: Save:

কাগজ ঠিক থাকলে তবে তো পেটের ভাত— জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের চাষিদের এখন এটাই মনের কথা। তাই সরকারি চাল বিক্রয় কেন্দ্রে তাঁরা আসছেন তারিখ বদলাতে। এক বার রেজিস্ট্রেশন করিয়ে গিয়েছেন। তার পরে একাধিক বার শহর লাগোয়া ঘুঘুডাঙা পঞ্চায়েত অফিসের চক্কর কেটে ফেলেছেন তাঁদের অনেকে। প্রায় সকলেরই একটাই অনুরোধ, দিনটা বদলে দিন। কেন? সরকারি কাগজপত্র ঠিক করতে লাইন দিতে হবে। এখন ধান বেচার সময় কই!

যেমন বলছিলেন মহম্মদ সাব্বির। বাবার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে এসেছিলেন ঘুঘুডাঙার অফিসে। তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির সবার আধার কার্ডে নাম ভুল আছে। এখন দু’সপ্তাহ এই নিয়ে ছোটাছুটি করতে হবে।” বা তারেক চৌধুরী। ঘুঘুডাঙা অফিসেই রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন নিজের নামে। এ দিন সেখানে ফের হাজির। তারেক বলেন, “সামনের সপ্তাহে ধান নিয়ে আসতে বলেছিল। ধান তৈরিই আছে। কিন্তু আমার বসত বাড়ির জমির কাগজ ঠিক নেই। ভূমি অফিসে সব জমা দিয়েছি। প্রায় প্রতিদিনই নানা কাগজ নিয়ে যেতে বলছে। সে সব আগে মিটুক, তার পরে ধান বেচব।”

ঘুঘুডাঙা ধান ক্রয় কেন্দ্রের পাশেই বাড়ি অশ্বিনী চৌধুরীর। অশ্বিনী বলেন, “গত বার এ সময়ে আমার ধান বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এখন দেশে নতুন আইন এসেছে, তার জন্য জমির কাগজ তৈরি করতে হচ্ছে। একটু ব্যস্ত আছি।’’ তাঁর সাফ কথা, ‘‘আগে তো দেশে থাকার ব্যবস্থা করি। তার পর পেট চালানোর প্রশ্ন!”

স্থানীয়েরা বলছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এ ভাবেই ছাপ ফেলেছে রুজি-রোজগারে। তাঁদের কারও কারও কথায়, ‘‘এই যে এত দিন ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান চাষ করলাম, এখন তো তা বেচার সময় পাচ্ছি না। ঝাড়াই-মড়াই করে সে ধান এখন বস্তাবন্দি। আপাতত তা-ই থাক।’’ সকাল থেকে চাষির বাড়ির লোকজন তাই লাইন দিয়েছেন। কেউ লাইন দিয়েছেন আধার কার্ড সংশোধনে, কেউ বা ভূমির কাগজ নিয়ে ভূমি দফতরে। ফল? সদর ব্লকের ধান ক্রয় কেন্দ্রের এক আধিকারিক জানান, গত বছর যেখানে এক এক দিনে চার থেকে পাঁচশো কুইন্ট্যাল ধান এসেছিল, সেখানে এ বারে এসেছে দিনে গড়ে একশো কুইন্ট্যাল। ক্রয় কেন্দ্রের আধিকারিক দীপ বিশ্বাস বলেন, “এখনও সে ভাবে ধান আসছে না। উল্টে অনেকেই এসে বিক্রির তারিখ পিছিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।”

আরও পড়ুন: একশো দিনের সব তথ্য এ বার মিলবে গুগলে

ঘুঘুডাঙার ধান বিক্রির সেই কেন্দ্রে এখন বস্তা বইতে আসা শ্রমিকেরা এ-দিক ও-দিক ছড়িয়ে বসে তাস খেলছেন। সামনে মাঠের মাঝে পঁচিশ-তিরিশটা বস্তা সাজিয়ে রাখা। কয়েকটা ঘুঘু ধান খুঁটে খাচ্ছে। প্রশ্ন শুনে তাস থেকে মুখ তুলে গৌরাঙ্গ রায় বললেন, “সবাই কাগজ বানাতে গিয়েছে। ধান বিক্রির সময় কোথায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhaar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE