Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জেলায় জেলায় জমি খুঁজতে হন্যে বিজেপি

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কড়া নির্দেশ ছিলই। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিস্থিতির চাপ। শাসক দলের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে দলের বহু নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। তাঁদের আশ্রয় দরকার। ফলে সব জেলা সদরে দলীয় কার্যালয় তৈরির জন্য জমির খোঁজে নেমে পড়েছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব।

শুভাশিস ঘটক ও রোশনী মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৪
Share: Save:

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কড়া নির্দেশ ছিলই। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিস্থিতির চাপ। শাসক দলের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে দলের বহু নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। তাঁদের আশ্রয় দরকার। ফলে সব জেলা সদরে দলীয় কার্যালয় তৈরির জন্য জমির খোঁজে নেমে পড়েছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব।

বস্তুত, বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগেই বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব প্রতিটি জেলা সদরে দলীয় কার্যালয় তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু জুন মাসে ইলাহাবাদে দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে রিপোর্ট নিতে গিয়ে তাঁরা দেখেন, এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ এক বিন্দুও এগোয়নি। ফলে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ-সহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা বিরক্ত হন। তাঁদের প্রশ্ন করেন— কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব টাকা দিচ্ছে। তা সত্ত্বেও জেলায় দলীয় কার্যালয় তৈরি হচ্ছে না কেন? কড়া ভাষায় তাঁরা বুঝিয়ে দেন, কাজে এ ধরনের শৈথিল্য বরদাস্ত করা হবে না। ফলে ইলাহাবাদ থেকে ফিরেই তড়িঘড়ি জেলা সদরে দলীয় কার্যালয় তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ জেলা নেতাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। জমি বাছতে পাঁচ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, দলীয় কার্যালয় তৈরির জন্য জেলায় জেলায় ১০-১২ কাঠা জমি খোঁজা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ— কার্যালয় হবে বহুতল। তাতে সংগঠনের পদাধিকারীদের জন্য পৃথক বসার ঘর, একাধিক সভাকক্ষ, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ ও প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। সঙ্গে থাকবে অতিথিশালা, যাতে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা দলের কর্মসূচিতে গিয়ে প্রয়োজনে সেখানে রাত কাটাতে পারেন।

রাজ্য বিজেপি-র একাংশের বক্তব্য, এত দিন সংগঠন ছোট ছিল। ফলে সব জেলা সদরে কার্যালয় না থাকলেও বিরাট অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এখন দলের জনভিত্তি ক্রমশ মজবুত হচ্ছে। তার ফলে কর্মীদের উপর শাসক দলের আক্রমণ বাড়ছে। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের জেরে দলের যে সব কর্মী ঘরছাড়া হচ্ছেন, তাঁদের সাময়িক মাথা গোঁজার জন্য দলীয় কার্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা টের পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া, আরএসএসের প্রচারক দিলীপ ঘোষ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি হওয়ায় দলে সঙ্ঘের কর্তৃত্ব বেড়েছে। সঙ্ঘের অনেক সদস্যকেই বিজেপি-র সংগঠন বিস্তারের দায়িত্বে পাঠানো হচ্ছে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের দিকে তাকিয়ে প্রতিটা মণ্ডলের বহর কমিয়ে সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। পঞ্চায়েত সমিতি পিছু একটি শক্তি কেন্দ্র গঠন করা হচ্ছে। বিধানসভা ভোটে ২০১৪-র লোকসভার তুলনায় ভোটের হার কমলেও দলের একটা স্থায়ী ভোটব্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে। সাংগঠনিক অগ্রগতি ধরে রাখতে গেলেও জেলায় জেলায় কার্যালয় প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্যে দলের সহ পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের মতে, জেলা সদরে বড় কার্যালয় হলে স্থানীয় মানুষের বিজেপি সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে না। ১২ মাস সেখানে রাজনৈতিক কার্যকলাপ চলবে। তাতে মানুষের মনে হবে না, বিজেপি বসন্তের কোকিলের মতো, কেবল ভোটের সময় দেখা যায়। কর্মীদের মধ্যেও আস্থা তৈরি হবে। দিলীপবাবু জানান, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে একটা বাড়ি পাওয়া গিয়েছে। সব দিক ঠিক থাকলে সেটা কেনা হবে।

জেলা কার্যালয় তৈরির এই উদ্যোগেই বিজেপি-র অন্দরে গুঞ্জন, রাজ্য দফতরের হাল ফেরানোও জরুরি। সংগঠন বাড়তে থাকায় সেখানেও ঠাসাঠাসি অবস্থা। এ নিয়ে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘রাজ্য দফতরের জন্যও নতুন বাড়ি খোঁজা হচ্ছে। বর্তমান রাজ্য দফতরের কয়েকটি বাড়ি পরে একটা বাড়ি কেনার চেষ্টা করেছিলাম। আইনি জটিলতায় তা আটকে। অন্য বাড়িও খোঁজা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP LAND Shelter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE