ছবি সংগৃহীত।
বাংলার অরণ্যে শাল, সেগুনের আধিপত্য দীর্ঘকালের। তা অটুট রেখেই এ বার এমন কিছু বৃক্ষের লালনপালনে জোর দেওয়া হচ্ছে, যারা ওদের তুলনায় অর্ধেক সময়ে পরিণত হয়ে যায়। যেমন আকাশমণি।
বনকর্তারা জানাচ্ছেন, আগে প্রচুর পরিমাণে ইউক্যালিপটাস লাগানো হত। এখন ধীরে ধীরে ওই গাছ লাগানো কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই জায়গায় বেশি করে লাগানো হচ্ছে আকাশমণি। শাল ও সেগুনের মতো গাছ পরিণত হতে যেখানে ৩০-৪০ বছর সময় লাগে, সেখানে ১৫ বছরেই পরিণত হয়ে যায় আকাশমণি। ফলে সেই দ্রুত বেড়ে ওঠা গাছ কেটে কাঠের জোগান দেওয়া যায়। আকাশমণির চারা দ্রুত বাড়ে বলে তা দ্রুত অরণ্যের ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
বন দফতর সূত্রের খবর, জঙ্গলের সেরা পাঁচ মহীরুহের তালিকায় ঢুকে পড়ছে আকাশমণির নাম। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জঙ্গলে বেশি পরিমাণে আকাশমণি গাছ লাগানো হচ্ছে। কারণ, রাঢ়বঙ্গের লাল মাটিতে ওই প্রজাতির গাছ দ্রুত বাড়ে এবং পরিণত হয়ে ওঠে। তার ফলে কাঠের জোগান তো বাড়ছেই, সেই সঙ্গে আকাশমণি গাছের পাতা অরণ্য সংলগ্ন জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামের বাসিন্দারা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
বন দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘যৌথ বন পরিচালন ব্যবস্থা জোরালো করতে আকাশমণি খুব উপযোগী। কাঠের বাজারেও এই গাছের চাহিদা আছে।’’ এ বছর পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম-সহ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে বনসৃজন আগের তুলনায় বেড়েছে বলে ‘ফরেস্ট সার্ভে’ বা ভারতীয় বন সর্বেক্ষণের সমীক্ষা রিপোর্টে জানানো হয়েছে। ওই রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের অরণ্যে মোট পাঁচটি প্রধান গাছ হল শাল, সেগুন, চিলৌনি, ইউক্যালিপটাস এবং আকাশমণি। এর মধ্যে সেগুন ও চিলৌনির বাড়বাড়ন্ত মূলত উত্তরবঙ্গে।
বন সর্বেক্ষণের সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, অরণ্যের বাইরে বাংলার গ্রামাঞ্চলে প্রধান পাঁচটি গাছ হল শিমুল, শিশু, ইউক্যালিপটাস, আম ও পলাশ। বনকর্তারা জানাচ্ছেন, গ্রামাঞ্চলে রাস্তার ধারে শিমুল, শিশু, পলাশ গাছ লাগানো হয়। নগরাঞ্চলে সুপারি, নারকেল, আম, কাঁঠাল এবং নিমগাছ বেশি দেখা যায়। যদিও অনেকে বলছেন, শহরাঞ্চলে যে-ভাবে বড় গাছ কাটা হচ্ছে এবং যে-ভাবে সৌন্দর্যায়নের নামে ছোট ছোট ঝোপ আকারের গাছ লাগানো হচ্ছে, তাতে আম, কাঁঠাল, নারকেল, সুপারি নগর এলাকায় প্রধান গাছের তালিকায় কত দিন থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy