Advertisement
১১ মে ২০২৪

প্রশংসা সম্বল, ভাতা জোটেনি গালাশিল্পীর

বৃন্দাবন জানালেন, তাঁর দাদা শ্রীবাস চন্দ শাঁখা তৈরির পাশাপাশি গালার পুতুল বানাতেন। ১২ বছর বয়সে দাদার কাছেই তাঁর গালার পুতুল বানানোর হাতেখড়ি।

একমনে: গালার পুতুল তৈরি করছেন বৃন্দাবন চন্দ। —নিজস্ব চিত্র

একমনে: গালার পুতুল তৈরি করছেন বৃন্দাবন চন্দ। —নিজস্ব চিত্র

গোপাল পাত্র
পটাশপুর শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৫
Share: Save:

তাঁর হাতে গড়া পুতুল উপহার হিসাবে গিয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে। ছোট্ট গণেশের সূক্ষ্ম কাজের প্রশংসাও করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বিলুপ্তপ্রায় গালা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার সেই কারিগর বৃন্দাবন চন্দ অবশ্য ভাল নেই।

ষাটোর্ধ্ব শিল্পীর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের বর্তমানে পটাশপুর-২ ব্লকের খাড় পশ্চিমসাই গ্রামে। গালার পুতুল তৈরির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চলছে তাঁর লড়াই। তবে শিল্পীর অভিমান, স্বীকৃতি জোটে না। মেলে না সরকারি ভাতাটুকুও। বৃন্দাবনের কথায়, ‘‘প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও শিল্পীর ভাতা পাইনি। গত বছর জুলাইয়ে পটাশপুর ২ ব্লকের হস্ত ও কুটির শিল্প বিভাগে ভাতার জন্য আবেদন করেছিলাম। খবর আসে ফের ফর্ম এবং নথিপত্র জমা দিতে হবে। কথা মতো আবার ফর্ম জমা করি। তারপর থেকে সব চুপচাপ।’’

জেলার পাঁচরোল, খাড় পশ্চিমসাই এবং প্রতাপদিঘি এলাকায় এক সময় জনপ্রিয় ছিল গালার পুতুল। রকমারি খেলনার বাজারে গালার পুতুলের কদর আর নেই। নতুনরাও তাই এই শিল্পে তেমন আগ্রহ দেখান না। তবে গালার পুতুলের মায়া কাটাতে পারেননি বৃন্দাবন। দৃষ্টি শক্তি ক্ষীণ হয়েছে, হাত কাঁপে। সে সব সয়েই গালা দিয়ে জো পুতুল, হিংলি পুতুল, বউ পুতুল, টেপা পুতুল বানিয়ে চলেছেন এই শিল্পী। বাবার অবস্থা দেখে বৃন্দাবনের ছেলেও আর গালার পুতুল তৈরির পেশায় আসেননি। তিনি শাঁখা তৈরি করেন।

বৃন্দাবন জানালেন, তাঁর দাদা শ্রীবাস চন্দ শাঁখা তৈরির পাশাপাশি গালার পুতুল বানাতেন। ১২ বছর বয়সে দাদার কাছেই তাঁর গালার পুতুল বানানোর হাতেখড়ি। তখন পুতুল বানিয়ে ফিরি করতেন বৃন্দাবন। ক্রমে গালার পুতুলই হয়ে ওঠে তাঁর নেশা, পেশাও। শ্রীবাস এখন ৮১। বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী।

সম্প্রতি ওড়িশা সফরে এসে কলাইকুণ্ডা বিমান ঘাঁটিতে নেমেছিলেন মোদী। তাঁকে উপহার হিসেবে বৃন্দাবনের হাতে তৈরি গালার গণেশ তুলে দিয়েছিলেন বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী। ঝাড়গ্রামের এক কর্মশালায় এই গণেশটি বানিয়েছিলেন বৃন্দাবন। সুখময় বলছেন, ‘‘আমিও চিত্রশিল্পী। বৃন্দাবনের যন্ত্রণাটা বুঝি। এটা অত্যন্ত লজ্জার যেখানে লোকপ্রসার প্রকল্প নিয়ে এত প্রচার, সেখানে বৃন্দাবনের মতো শিল্পী সরকারি সাহায্য পান না।’’

পটাশপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাহু বলেন, ‘‘উনি একবার আবেদন করেছিলেন ঠিকই। বিষয়টি এখন জেলা হস্ত ও কুটির শিল্প দফতরের আওতায় রয়েছে। কয়েকবছর ধরে ব্লকে সংশ্লিষ্ট দফতরের কোনও অফিসার না থাকায় ওই কাজ হচ্ছে না।’’ আর এগরার মহকুমাশাসক অপ্রতিম ঘোষের বক্তব্য, ‘‘সংশ্লিষ্ট ব্লকের আধিকারিকের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করব।’’

গালা শিল্প বাঁচাতে বৃন্দাবন অবশ্য কষ্ট সয়েই লড়ছেন। কয়েক বছর ধরে কলকাতার এক বেসরকারি স্কুলের গালার পুতুল তৈরির প্রশিক্ষকের কাজ পাওয়ায় সংসারটা তা-ও চলে। সেই কাজের মাঝেই শহর-শহরতলির বিভিন্ন মেলায় নিজের সৃষ্টি সম্ভার নিয়ে হাজির হন বৃন্দাবন। আর্জি একটাই— পুতুল নেবে গো, পুতুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Art Porashpur Gala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE