দার্জিলিং জেলা শাসকের দফতরের সামনে মোতায়েন কড়া নিরাপত্তা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
মাঝে মোটে চব্বিশ ঘণ্টা!
প্রশাসনের কঠোর মনোভাব এবং পাহাড়ের ব্যবসায়ী মহলের সাঁড়াশি চাপে তার মধ্যেই ভোল বদলাল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
রবিবার পর্যটকদের পরোক্ষে হুঁশিয়ারি দিয়ে পাহাড় ছেড়ে চলে যেতে বলেছিলেন বিমল গুরুঙ্গ। সোমবারই সুর পাল্টে রোশন গিরি বলেন, পর্যটকরা পাহাড়ে থাকুন, কোনও অসুবিধা নেই। যদিও তাঁর সেই ‘আশ্বাসে’ ভরসা না রেখে উদ্বিগ্ন পর্যটকরা অনেকেই পাহাড় ছাড়তে শুরু করেছেন। বন্ধের চেনা ছবি অবশ্য দার্জিলিঙে নেই। সোমবার থেকেই মোর্চার ডাকা অনির্দিষ্টকালের বন্ধ শুরু হয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকারি দফতরে গড়ে ৯০ শতাংশ হাজিরা ছিল। অথচ অতীতে শাসক দল বন্ধ ডাকলে পাহাড়ে জনজীবন পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যেত।
উপরন্তু, সোনাদায় বিদ্যুৎ অফিসে ভাঙচুর, দার্জিলিঙে পূর্ত অফিসে ও পুলবাজারে বিডিও অফিসে আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করলে বাসিন্দারা খবর দিয়েছেন পুলিশ-দমকলে। আগুন নেভানোর কাজে দমকলের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন স্থানীয়রা।
ফলে মোর্চা নেতারা বুঝে গিয়েছেন, পাহাড়ের রাশ আগের মতো তাঁদের হাতে নেই। তাই এক দিকে যেমন নাশকতার ঘটনার সব দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন রোশন গিরিরা, তেমনই পাহাড়ের জনমত ধরে রাখতে মরিয়া মোর্চা বল ঠেলে দিতে চাইছে দিল্লির কোর্টে। কেন্দ্রের চেষ্টায় যাতে মুখরক্ষার সূত্র মেলে, সেই লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দিয়েছেন গুরুঙ্গ।
আরও পড়ুন:মন গলেনি, মিছিল মাছিভাঙায়
পর্যটক নিয়ে সুর বদল চাপের মুখে ‘বোধোদয়ের’ লক্ষণ বলেই মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে বাম-কংগ্রেস প্রভাবিত ২২টি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ মঙ্গলবার যে চার জেলায় (দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং) সাধারণ ধর্মঘট ডেকেছে, তা সমর্থন করলেও পথে না নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোর্চা।
বস্তুত, মোর্চা সূত্রও বলছে, ভোলবদলের পিছনে সরকারি দফতরে ৯০% হাজিরার বিষয়টি তো আছেই। সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীরাও গুরুঙ্গকে জানিয়ে দেন, ভরা মরসুমে পর্যটকদের তাড়ালে আগামী দিনে মোর্চাকে (চাঁদা ইত্যাদি দিয়ে) সাহায্য করতে পারবেন না তাঁরা। এর পরেই গুরুঙ্গ পাতলেবাসের বাড়িতে রোশনকে নিয়ে বৈঠক করেন। বিকেলে রোশন দলের সদর দফতরে ঘোষণা করেন, ‘‘পর্যটকরা হাসি মুখে ঘুরছেন। সকলে দিব্যি আছেন। থাকবেনও।’’
তা হলে রবিবার কেন গুরুঙ্গ হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন? জবাবে রোশন বলেন, ‘‘আমাদের কথার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটা বলতে পারি, পর্যটকদের ভয় পাওয়ার কারণ নেই।’’
চাপ কিন্তু আরও আছে। প্রথমত, ৮ তারিখের ঘটনায় একাধিক মোর্চা সমর্থক গ্রেফতার হয়েছেন। এ দিনই বিজনবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন গুরুঙ্গ-ঘনিষ্ঠ জিটিএ সদস্য সতীশ পোখরেল। তার উপর মুখ্যমন্ত্রী যে তিন আইপিএস অফিসারকে পাহাড়ে মোতায়েন করেছেন, তাঁরা এ দিন সন্ধ্যায় বড় পুলিশ বাহিনী নিয়ে গুরুঙ্গের বাড়ির সামনে ঘুরে আসেন। মোর্চার কেউ কেউ বলছেন, এতে গুরুঙ্গের রক্তচাপ বাড়া স্বাভাবিক। তা ছাড়া, মঙ্গলবার মোর্চা যে সর্বদল বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে গোর্খা লিগ, জিএনএলএফ, সিপিআরএম, জন আন্দোলন পার্টি তো বটেই, পাহাড়ের ছোট দলগুলিও সম্মতি জানায়নি।
এর সঙ্গে রয়েছে ঘরের চাপ। কট্টরপন্থীদের চাপে গুরুঙ্গ এক বার পর্যটকদের পাহাড় ছাড়তে বলেন। অন্য পক্ষ মুখ ভার করলে এক দিনের মধ্যে সেই বিবৃতি বদলাতে হয় তাঁকে।
সরকারের তরফে চাপ বজায় রাখার ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন ভাঙড়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাহাড়ে কয়েক জন গন্ডগোল করেছে। বোমা মেরে পালিয়ে গিয়েছে। সব বুঝে নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy