Advertisement
১১ মে ২০২৪

লাঙল তুলে ধরেই সরকারি অফিস খাঁ-খাঁ

পরিবর্তন যেখানে হয় হোক। শাসক পক্ষের সভা-সমাবেশের দিনে সরকারি দফতরে লাঙল তুলে ধরার ব্যাপারে বাম জমানা আর হাল আমল একেবারে ভাই-ভাই! কর্মসংস্কৃতির এই বিশেষ ক্ষেত্রে দুই শিবিরই যে ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী, তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার। শাসক দলের কর্মসূচিতে নবান্ন থেকে মহাকরণ-সহ সরকারি অফিসগুলো এ দিন খাঁ-খাঁ করেছে।

সুনসান মহাকরণ। ছবি: এবিপি আনন্দের সৌজন্যে।

সুনসান মহাকরণ। ছবি: এবিপি আনন্দের সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩৪
Share: Save:

পরিবর্তন যেখানে হয় হোক। শাসক পক্ষের সভা-সমাবেশের দিনে সরকারি দফতরে লাঙল তুলে ধরার ব্যাপারে বাম জমানা আর হাল আমল একেবারে ভাই-ভাই! কর্মসংস্কৃতির এই বিশেষ ক্ষেত্রে দুই শিবিরই যে ‘ট্র্যাডিশন’ সমানে চালিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী, তার প্রমাণ মিলল মঙ্গলবার। শাসক দলের কর্মসূচিতে নবান্ন থেকে মহাকরণ-সহ সরকারি অফিসগুলো এ দিন খাঁ-খাঁ করেছে।
বাম আমলে এমন সব দিনে এটাই ছিল পরিচিত দৃশ্য। রাজ্যে পরিবর্তনের জমানায় ছবিটা আদৌ বদলায়নি। তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার নবান্নের চেহারা ছিল আর-পাঁচটা দিনের চেয়ে একদমই আলাদা। দফতরে দফতরে কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় কর্মব্যস্ততার নামগন্ধ ছিল না। মাছি তাড়িয়েছে ক্যান্টিন বা মুড়ির দোকান। সেখানে লোকজনের লম্বা লাইন এ দিন উধাও। লিফটম্যানেরাও ঠায় বসে ছিলেন লিফটের বাইরে। কারণ, উপরে ওঠানামার লোক হাতেগোনা। নবান্নের পিছনে যে-স্ট্যান্ডে সকাল থেকে সরকারি গাড়ির ভিড় লেগে থাকে, এ দিন তা-ও ছিল প্রায় ফাঁকা। তবে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল সকাল থেকেই আঁটোসাঁটো। ধর্মতলার সমাবেশ সেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেলা সওয়া ৩টে নাগাদ নবান্নে ঢুকলেন। কিন্তু তাতে গোটা ভবনের চেহারা বদলায়নি।
হাজিরার পরিসংখ্যান কী বলছে?
পুলিশের হিসেব, এ দিন নবান্নে কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল মেরেকেটে ২৫ শতাংশ। বেলা ২টো নাগাদ বিভিন্ন দফতরে ঘুরে দেখা যায়, ১০-১২ জন কর্মী বসে আছেন এখানে-সেখানে। তবে অফিসারদের হাজিরা ছিল কমবেশি অন্যান্য দিনের মতোই। কিন্তু পিয়ন বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের অধিকাংশ অফিসে না-আসায় কাজের কাজ তেমন হয়নি বলে জানান অফিসারদের একাংশ।

একই ছবি ছিল মহাকরণে। এমনিতেই সেখানে এখন সরকারি দফতরের সংখ্যা খুবই কম। ফলে এ দিনের সমাবেশের কারণে অত বড় বাড়িটা কার্যত জনমানবশূন্য হয়েই পড়ে ছিল। যে-ক’জন এসেছিলেন, তাঁদের অনেকের বক্তব্য, শাসক দলের কর্মসূচি থাকায় মন্ত্রীরাও অফিসে আসেননি। ফলে ‘বামুন গেল ঘর তো লাঙল তুলে ধর’ অবস্থা ছিল প্রায় সব সরকারি অফিসে। সেই প্রবাদ মেনেই যেন সল্টলেকের বিকাশ ভবন, বিদ্যুৎ ভবন, নির্মাণ ভবন, সেচ ভবন, নব মহাকারণের মতো সরকারি ভবন ছিল ফাঁকা।

কর্মসংস্কৃতি শিকেয় তোলা এই পরিস্থিতিটাকে তাঁদের সমাবেশের সাফল্য বলেই মনে করছেন শাসক শিবিরের অনেক নেতা। তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা মনোজ চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘প্রায় ৭০ শতাংশ সরকারি কর্মীই তো এ দিনের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাই অফিস সব ফাঁকাই ছিল।’’ তাঁর দাবি, যাঁরা সমাবেশ গিয়েছিলেন, সকলেই অর্ধদিবস ছুটি নিয়েছিলেন।

ঠিক যেমন বলা হত বাম জমানায় শাসক শিবিরের সমাবেশ থাকলে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE