প্রতীকী ছবি।
ভোট-পরবর্তী বঙ্গে ডেঙ্গি সংক্রমণে মৃত্যু প্রতিরোধে তিন বছর আগে ফিরে গেল স্বাস্থ্য ভবন। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত তিন বছরে ঠিক কী কী কারণে ডেঙ্গি সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর মৃত্যু হয়েছে, তার অডিট বা পর্যালোচনা করার জন্য বেলেঘাটার আইডি এবং কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ, তিন বছরে ডেঙ্গিতে প্রাণহানির ঘটনায় ত্রুটি বা গাফিলতি ঠিক কোথায় ছিল, সেটা খুঁজে বার করে তার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতেই এই দাওয়াইয়ের বন্দোবস্ত। ডেঙ্গি-আক্রান্ত কোন রোগী কেন মারা গেলেন, সেটা জেনে নেওয়াই অডিটের উদ্দেশ্য।
কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ এবং বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠক করেন দফতরের শীর্ষ কর্তারা। সেই বৈঠকে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে হাসপাতালগুলিতে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর যে-সব ঘটনা হয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে কোথাও কোনও রকম গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এই প্রসঙ্গে পরিকাঠামোগত ত্রুটির কথা তুলে ধরেন। বৈঠকের প্রাথমিক পর্যালোচনায় কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে সময়ে প্লেটলেট দেওয়া গিয়েছিল কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়। ডেঙ্গিরোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ‘প্রোটোকল’ রয়েছে। সেই প্রোটোকল সম্পর্কে সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা কতখানি অবহিত, তা নিয়েও আলোচনা হয়।
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, গত তিন বছরে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর যত ঘটনা ঘটেছে, সব ক’টির অডিট করতে বলা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ কি পরিকাঠামোগত ত্রুটি, নাকি প্লেটলেটের অভাব, তা যাচাই করতে হবে। প্রোটোকল মেনে রোগীর চিকিৎসা হয়েছিল কি না, তা-ও দেখতে হবে। ‘‘রোগীকে যখন আনা হয়েছিল, তখন তাঁকে বাঁচানো সম্ভব ছিল না, এমনও হতে পারে। অডিটে বোঝা যাবে, কোথায় গলদ ছিল। অতীতের কোনও ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না-হয়, সেই জন্যই এটা করা হচ্ছে,’’ বলেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা। ডেঙ্গি-মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার পর্যালোচনায় যা উঠে আসবে, তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক জানান, আগে রাজ্য স্তরে এই ধরনের পর্যালোচনা হয়েছে। তবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিকে প্রতিটি ডেঙ্গি-মৃত্যুর সবিস্তার কারণ খুঁজে বার করার দায়িত্ব এই প্রথম দেওয়া হল।
এখানেই ডেঙ্গির মোকাবিলায় দৃষ্টিভঙ্গি বদলের আভাস দেখছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ডেঙ্গিতে মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য গোপন করার অভিযোগ আছে রাজ্যে। সে-দিক থেকেও তিন বছরে ডেঙ্গিতে প্রাণহানির প্রতিটি ঘটনার পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রে অবস্থিত একটি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “ডেঙ্গি-মৃত্যুর তথ্য গোপন নিয়ে যা বলা হয়, তার সবটা ঠিক নয়। বুঝতে পারলেও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কারণ লিখিত ভাবে জানানোর আগে চিকিতসাশাস্ত্র মেনে একটা প্রমাণ লাগে। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
স্বাস্থ্য ভবনের অন্য এক শীর্ষ কর্তা জানান, এ বছর ডেঙ্গির মোকাবিলায় শুরু থেকে প্রস্তুতি চলছে। সরকারি স্তরের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। অতীতে যেখানে ডেঙ্গি সংক্রমণ বেশি হয়েছে, সতর্ক করা হয়েছে সেই সব পুরসভা, জেলা প্রশাসন, পঞ্চায়েতকে। ‘‘রক্তপরীক্ষার জন্য টেকনিশিয়ানের যে-অভাব রয়েছে, আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে তা পূরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্লেটলেটের ঘাটতি, পরিকাঠামোগত ত্রুটি যাতে না-থাকে তা-ও দেখা হচ্ছে,’’ বলেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy