Advertisement
১১ মে ২০২৪

ফুটবলের মাঠে নেমেই নতুন জীবনে আদিবাসী যুবকেরা

বিধাননগর, রাজারহাট, নিউ টাউন, মধ্যমগ্রাম ও বারাসত-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গার এমন কিছু আদিবাসী যুবককে নিয়ে মাস চারেক আগে শুরু হয় একটি উদ্যোগ।

অনুশীলন: ফুটবল নিয়ে মাঠে ওই যুবকেরা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অনুশীলন: ফুটবল নিয়ে মাঠে ওই যুবকেরা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

বাড়ি বাড়ি ঘুরে শৌচালয় পরিষ্কার করেন কেউ। কেউ বুঁদ হয়ে থাকতেন চোলাই বা মাদকের নেশায়। কারও আবার অভ্যাস ছিল তির-ধনুক দিয়ে বা জালের ফাঁদ পেতে ঝোপঝাড়ের পাখি, ভাম বা বনবেড়াল শিকার করে খাওয়া।

বিধাননগর, রাজারহাট, নিউ টাউন, মধ্যমগ্রাম ও বারাসত-সহ উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গার এমন কিছু আদিবাসী যুবককে নিয়ে মাস চারেক আগে শুরু হয় একটি উদ্যোগ। তাঁদের নামানো হয় ফুটবল মাঠে। সেখান থেকেই খেলোয়াড় বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে আটটি দল।

বর্তমানে মধ্যমগ্রামের দিকবেড়িয়ার নদীবাঁধ মাঠে প্রায় দেড়শো জন আদিবাসী ফুটবলারকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের প্রাক্তন খেলোয়াড় ও কোচেরা। টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আজ, রবিবার বাছা হবে সেরা খেলোয়াড়দের। তাঁদেরও যে কলকাতার বড় ক্লাবে খেলার যোগ্যতা রয়েছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত প্রশিক্ষকেরা। ওই যুবকদের মধ্যে যাঁরা নেশা করতেন, তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় খুশি তাঁদের পরিবারও।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বিধাননগরের কুলিপাড়া, বানতলা বা রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকার গাঁতি, নারায়ণপুর, কেষ্টপুর, মধ্যমগ্রামের খামারপাড়া, সাজিরহাট, বারাসতের হাটখোলা ও নীলগঞ্জ এলাকার কয়েকশো যুবক এখন বল পায়ে নিয়মিত মাঠে নামছেন। ‘অখিল ভারতীয় আদিবাসী বিকাশ পরিষদ’-এর রাজ্য সম্পাদক খোকন সর্দার বলেন, ‘‘আমাদের কথা কেউ তেমন ভাবেনি। অনেকে বিপথগামী হয়ে গিয়েছিল। এটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ। ওই ছেলেরা বড় মাঠে খেলবেই।’’ বড় দলে কয়েক জন যে খেলবেন, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের প্রাক্তন খেলোয়াড় কার্তিক শেঠ বা পার্থ চক্রবর্তীর মতো প্রশিক্ষকেরাও। পার্থ বললেন, ‘‘প্রথমে কাজটা কঠিন ছিল। কিন্তু ওঁরা প্রতিভাবান। অনেকেরই বড় ক্লাবে খেলার যোগ্যতা রয়েছে।’’

আদিবাসী পরিষদ, প্রাক্তন খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক এবং পরিকল্পনা করে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ‘প্রতিভা’ খুঁজে আনার কাজে সক্রিয় ভাবে রয়েছেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। মাস কয়েক আগে দেগঙ্গার আদিবাসীপাড়ায় জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে একাধিক বার ওঝার কাছে নিয়ে গিয়েছিল তাঁর পরিবার। পরে মারা যান তিনি। কাকলি বলেন, ‘‘আমি অ্যাম্বুল্যান্স পাঠিয়েও ওঁকে হাসপাতালে আনতে পারিনি। তখনই আদিবাসী পরিষদের সবাইকে ডেকে ঠিক করি, এই কুসংস্কার, নেশা এবং বন্যপ্রাণী হত্যার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা আর খেলাধুলোই পারে তা সম্ভব করতে।’’

আগে কী করে দিন কাটত? এই প্রশ্ন শুনলে এখন লজ্জা পান আদিবাসী যুবকদের কেউ কেউ। মধ্যমগ্রামের রোহন্ডার বাসিন্দা, ২৮ বছরের শঙ্কর ওরাওঁ এখন কেষ্টপুরে মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে সাফাইকর্মীর কাজ করেন। দুপুরে বাড়ি ফিরে বিকেলে টানা অনুশীলন এখন তাঁর রোজকার অভ্যাস। সম্প্রতি বিয়েও করেছেন। বল ড্রিবল করার ফাঁকে স্টপার শঙ্কর বলেন, ‘‘শুধু শরীরই নয়, আগে মনটাও খারাপ হয়ে থাকত। এখন সত্যিই ভাল আছি।’’

দমদমের এক স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ছাত্র রাজারহাটের নারায়ণপুরের সুরজ সর্দার। প্রশিক্ষণ চলাকালীন লেফট উইং থেকে বাড়ানো লম্বা পাস ধরে নিখুঁত শটে গোলে পাঠিয়ে দেন। সুরজ বলেন, ‘‘মাঠে নামলে গোল করবই। আমরাও যে এ ভাবে খেলতে পারি, মনের সেই জোরটাই আগে ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Football Indigenous Youth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE