Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হুঁশিয়ারিই সার, দ্বন্দ্ব কমছে না তৃণমূলে

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই স্থানীয় নেতাদের আকচাআকচি বন্ধ করতে বলুন, তাতে যে বিশেষ কাজ হচ্ছে না, রাজ্য জুড়ে একের পর এক ঘটনায় তা পরিষ্কার! মালদহে সরকারি মঞ্চে দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের প্রকাশ্য বিবাদে বিড়ম্বনা বেড়েছে শাসক দলের।

কেষ্টপুরে গন্ডগোলের সময় এই মহিলার পেটেই লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

কেষ্টপুরে গন্ডগোলের সময় এই মহিলার পেটেই লাথি মারা হয় বলে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই স্থানীয় নেতাদের আকচাআকচি বন্ধ করতে বলুন, তাতে যে বিশেষ কাজ হচ্ছে না, রাজ্য জুড়ে একের পর এক ঘটনায় তা পরিষ্কার!

মালদহে সরকারি মঞ্চে দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের প্রকাশ্য বিবাদে বিড়ম্বনা বেড়েছে শাসক দলের। এরই মধ্যে দলের পুরুলিয়ায় জেলা সভাধিপতির উপরে গোঁসা করে শুক্রবার অযোধ্যা পাহাড় পর্যটন উৎসবের উদ্বোধনে এলেন না জেলা পরিষদের ৬ কর্মাধ্যক্ষ-সহ বহু সদস্য! পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এসে উদ্বোধন করা সত্ত্বেও তাঁরা ভ্রূক্ষেপ করেননি। কেষ্টপুরে আবার গোষ্ঠী সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বার পেটে লাথি মারার অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে প্রকাশ্যে দোষারোপে জড়িয়েছেন দলের এক নেতা ও কাউন্সিলর।

দলে কার গুরুত্ব বেশি, তা নিয়ে মালদহে কৃষ্ণেন্দু ও সাবিত্রীর বিবাদ দীর্ঘ দিনের। শীর্ষ নেতৃত্ব বার বার চেষ্টা করেও তাঁদের কাজিয়া মেটাতে পারেননি। তবে বৃহস্পতিবার সরকারি পাট্টা বিলি নিয়ে প্রকাশ্যে বচসা সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতাদের একটা বড় অংশ। এমনকী, নিচু তলাতেও এর প্রভাব পড়বে বলে তাঁদের আশঙ্কা। দলে কোনও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেও তৃণমূলের মালদহ জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তাই বলেছেন, ‘‘সরকারি অনুষ্ঠানে যা ঘটেছে, তা কাম্য নয়। ঘটনাটি দলনেত্রী সরাসরি দেখছেন।’’ কৃষ্ণেন্দু বা সাবিত্রী কেউই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

কেন মিটছে না দু’জনের দ্বন্দ্ব? মালদহের নেতাদের মতে, কারণ মূলত তিনটি। প্রথমত, পাঁচ বারের বিধায়ক সাবিত্রীর ক্ষমতা বেশি না কি একাধারে মন্ত্রী, পুরপ্রধান তথা রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দুর, তা নিয়ে দ্বন্দ্ব। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের কাছে কার গুরুত্ব বেশি, তা নিয়েও রেষারেষি। তৃতীয়ত, কার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারেরা জেলা পরিষদ বা প্রশাসনের কাজের বরাত পাবেন, তা নিয়েও লড়াই রয়েছে। জেলার ১৫টি ব্লকেই দু’জনের অনুগামীরা রয়েছেন। প্রভাব জারি রাখার জন্য লড়াই জারি রাখেন দু’জনেই!

পুরুলিয়ায় আবার দ্বন্দ্বের কারণ জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর বিরুদ্ধে একাধিপত্যের অভিযোগ। জেলা পরিষদের সাধারণ সদস্যদের গুরুত্ব দেওয়া দূরে থাক, কর্মাধ্যক্ষদের সঙ্গেও তিনি কোনও পরামর্শ করেন না বলে অভিযোগ তুলে জেলা সফরে আসা মুখ্যমন্ত্রী মমতার কাছেও বিহিত চাওয়া হয়েছিল। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন মমতা। সম্প্রতি কালীঘাটে দলের জেলা পর্যবেক্ষক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকেও তাঁদের অভিযোগ জানিয়ে এসেছিলেন ছয় কর্মাধ্যক্ষ-সহ ১৬ জন সদস্য।

একদা মাওবাদী অধ্যুষিত অযোধ্যা পাহাড়ে ফের পর্যটক টানতে যে উৎসবের সূচনা, সেখানে তাঁদের দেখা গেল না কেন? জেলা পরিষদের দলনেতা তথা পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বেশির ভাগ কর্মাধ্যক্ষ ও সদস্য পারিবারিক কাজে ব্যস্ত থাকায় উৎসবে যাননি। কর্মাধ্যক্ষ (বনভূমি) হলধর মাহাতো অবশ্য পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘যেখানে কোনও গুরুত্ব নেই আমাদের, সেখানে যাব কেন?’’ সৃষ্টিধরবাবুর দাবি, ‘‘আমি সকলকে নিয়েই উৎসব আয়োজনের কাজ করতে চেয়েছি। উদ্বোধনে কেউ না এলে তার দায় আমার নয়!’’ পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা পশ্চিমাঞ্চল মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের ওই সদস্যদের অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে হবে।’’

কেষ্টপুরে কোন্দল বেধেছে অবৈধ ভাবে সরকারি জমি বিক্রির অভিযোগ নিয়ে। সেখানকার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শম্পা চক্রবর্তীর অভিযোগ, রাজারহাট-গোপালপুরের যুব তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস (বাবাই) ও তাঁর লোকজন বেআইনি ভাবে সরকারি জমি বিক্রি করছেন। বাবাইয়ের পাল্টা অভিযোগ, শম্পা কাউন্সিলর হওয়া ইস্তক এলাকা দখলের জন্য গোলমাল করছেন। বৃহস্পতিবার গোলমাল প্রকাশ্যে চলে আসে গোষ্ঠী সংঘর্ষে অন্তঃসত্ত্বার আহত হওয়ার অভিযোগকে ঘিরে। স্থানীয় হরিচাঁদপল্লির বাসিন্দা দীপা সরকার নামে ওই মহিলার অভিযোগ, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের সময়ে তাঁর পেটে লাথি মারা হয়। স্থানীয় দুই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে বাগুইআটি থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের হয়েছে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। কাউন্সিলর শম্পার অভিযোগ, ‘‘কেউ বিরোধিতা করলে মারধর করা হচ্ছে। বাবাইয়ের মোটরবাইক বাহিনী বৃহস্পতিবারও অনেককে মারধর করে। অন্তঃসত্ত্বার পেটেও লাথি মারা হয়েছে।’’ দীপার বক্তব্য, ‘‘আমরা ওই জমি বিক্রির প্রতিবাদ করছি। বাবাইয়ের লোকেরা আমাদের এক প্রতিবেশীকে মারধর করছিল। তাঁকে বাঁচাতে গেলে আমার পেটে লাথি মারা হয়। বাবাইও আমায় ধাক্কা মারে।’’ গোটা বিষয়টি ‘চক্রান্ত’ বলে দাবি করে বাবাইয়ের পাল্টা বক্তব্য, অন্তঃসত্ত্বাকে কেউ মারেনি।

ঘটনাটি উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জানানো হয়েছে বলেও দাবি শম্পার। তবে জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, ‘‘আমায় কেউ কিছু জানাননি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc party clash
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE