মহম্মদ ইজাজকে কলকাতায় নতুন করে জাল ছড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের হাতে ধরা পড়া আদতে পাকিস্তানের নাগরিক ইজাজকে জেরা করে এই তথ্য পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে চার্জশিটে ইউএপিএ (বেআইনি কার্যকলাপ নিরোধক আইন)-র ধারা যোগ করতে চলেছে কলকাতা পুলিশ। বর্তমানে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর হেফাজতে রয়েছে ইজাজ।
লালবাজার সূত্রের খবর, চার্জশিটে ইউএপিএ-র ধারা যোগ করে কলকাতা পুলিশ বলবে, বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে ২০১৩ সালের অগস্টে বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে ঢোকে ইজাজ। কলকাতার মেটিয়াবুরুজে ভাড়া বাড়িতে বছর দুয়েক থাকার পরে চলে যায় উত্তরপ্রদেশে। কলকাতায় থাকার সময়ে নিয়মিত গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স ও বন্দরের ডকের ভিতরে ঢুকে ছবি ও ভিডিও তুলে পাকিস্তানে পাচার করে ইজাজ। পশ্চিমবঙ্গে আইএসআইয়ের মূল চাঁই ছিল এই ইজাজ।
লালবাজার সূত্রের খবর, ইজাজের দেওয়া সূত্র ধরেই এসটিএফ-এর গোয়েন্দারা গার্ডেনরিচ চরকাণ্ডে গত বছর ২৯ নভেম্বর গ্রেফতার করেন তৃণমূলের শ্রমিক নেতা ইরশাদ আনসারি ও তার ছেলে শাসক দলের ছাত্র নেতা আসফাককে। ইরশাদের শ্যালক শেখ জাহাঙ্গিরকেও গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। তাঁদের কাছে উদ্ধার হয় বন্দর সংক্রান্ত বহু নথি ও ছবি। ওই মামলাতেই নাম আসে আদতে ইসলামাবাদের বাসিন্দা ইজাজের, যাঁকে নভেম্বরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে। ফেব্রুয়ারির শেষে ইজাজকে কলকাতা পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। কলকাতা পুলিশের দাবি, ইজাজই কলকাতায় আইএসআই নেটওয়ার্কের মূল পাণ্ডা।
এসটিএফ সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারিতে গার্ডেনরিচ চরকাণ্ডে ধৃতদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের মামলায় চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। বাবা-ছেলে ছাড়াও যার মধ্যে নাম ছিল ইজাজেরও। এ বার আর কিছু তথ্য-প্রমাণ হাতে আসায় ইজাজ-সহ বাকিদের বিরুদ্ধেও ইউএপিএ-র ধারা চার্জশিটে যুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সরকারের অনুমোদন মিললেই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে ইউএপিএ ধারা যুক্ত করে আদালতে জমা দেওয়া হবে। ওই চার্জশিটে ইজাজ ছাড়াও কয়েক জন আইএসআই চরের নাম থাকতে পারে বলে সুত্রের দাবি।
লালবাজারের গোয়েন্দাদের কাছে জেরায় ইজাজ জানিয়েছে, পাকিস্তানের জনৈক ইরফানের নির্দেশেই গোপন নথি, ছবি ও ভিডিও সে পাকিস্তানে পাঠাত। ইরফানের নির্দেশেই ইজাজ বাংলাদেশের সাতক্ষীরা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকে। মেটিয়াবুরুজে তৃণমূলের শ্রমিক নেতা ও বন্দরের ঠিকা শ্রমিক ইরশাদ আনসারি আবার ইরফানের আত্মীয়। গোয়েন্দাদের দাবি, তাঁর মাধ্যমেই ইজাজ ‘ভিজিটার্স স্লিপ’ দিয়ে গার্ডেনরিচে জাহাজ কারখানার ভেতরে ঢুকত। পরে কারখানা দেখার নাম করে ছোট ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে নির্মীয়মাণ জাহাজ ও অন্যান্য জায়গার ছবি তুলে ই-মেলে তা পাঠিয়ে দিত পাকিস্তানে। ২০১৩-র আগস্ট থেকে ২০১৫-র জানুয়ারি পর্যন্ত কলকাতায় ছিল ইজাজ। তার নির্দেশে আসফাক ও জাহাঙ্গির একাধিক বার বাংলাদেশেও গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এসটিএফ-এর গোয়েন্দাদের দাবি, ইরশাদ এবং তাঁর ছেলে আসফাককে সঙ্গে নিয়ে মেটিয়াবুরুজ-গার্ডেনরিচে নেটওয়ার্ক তৈরি করেন ইজাজ। বাবা-ছেলে ছাড়াও পাক গুপ্তচর চক্রে আরও বেশ কয়েক জন রয়েছে বলে জেরায় জানিয়েছে সে। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ইরফান ছাড়াও পাকিস্তানের কয়েক জনের নাম জানিয়েছে ইজাজ। তাদের কাছ থেকে ইজাজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে টাকা আসত।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, কলকাতায় আনার পরে গত সপ্তাহে গোয়েন্দারা ইজাজকে নিয়ে যান গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স ও বন্দরের বিভিন্ন এলাকায়। লালবাজার জানিয়েছে, গার্ডেনরিচ ছাড়াও শাহ্জাহানপুর, মথুরা-সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন সেনা ঘাঁটির তথ্য পাকিস্তানে পাচার করেছে বছর তিরিশের ইজাজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy