Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গঙ্গা দূষিত হলে মাসে নালাপিছু ক্ষতিপূরণ দশ লক্ষ

সম্প্রতি এমনই রায় দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। তবে এই রায় এখনই কার্যকর হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ, আগামী বছরের ১ জুলাইয়ের আগে নোংরা জল ফেলা বন্ধ করতে হবে।

দূষণ: বাবুঘাটের কাছে নিকাশির জল পড়ছে গঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র

দূষণ: বাবুঘাটের কাছে নিকাশির জল পড়ছে গঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

শহরের নোংরা জল নিকাশি নালার মাধ্যমে গঙ্গায় পড়লেই নালাপিছু জরিমানা দিতে হবে। এককালীন নয়, মাসে প্রতি নালার জন্য ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ গুনতে হবে স্থানীয় পুরসভাগুলিকে।

সম্প্রতি এমনই রায় দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। তবে এই রায় এখনই কার্যকর হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশ, আগামী বছরের ১ জুলাইয়ের আগে নোংরা জল ফেলা বন্ধ করতে হবে। কেন্দ্র এবং রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, গঙ্গাকে ‘পবিত্র’ রাখতে এমন নির্দেশ জরুরি ছিল।

এ রাজ্যে গঙ্গার পাশে কলকাতা, হাওড়া, বালি, চুঁচুড়া, বাঁশবেড়িয়া, ব্যারাকপুর, ভদ্রেশ্বর, বজবজ, চন্দননগর, ডায়মন্ড হারবার, গারুলিয়া, নবদ্বীপ, হলদিয়া, উলুবেড়িয়া, কৃষ্ণনগর, মহেশতলা, কাঁচড়াপাড়া-সহ রাজ্যের ৪৪টি পুরসভা রয়েছে। ওই সব এলাকার নোংরা জল নিকাশি নালার মাধ্যমে গিয়ে মিশেছে গঙ্গায়। নোডাল

এজেন্সি হিসেবে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর বিষয়টি নিয়ে এখন উদ্যোগী হয়ে পুরসভাগুলিকে

সতর্ক করার কাজ শুরু করেছে। নগরোন্নয়ন দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জরিমানার পরিমাণ এতটাই যে অনেক পুর প্রশাসন সময়ে ব্যবস্থা না নিলে দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।’’

সূত্রের খবর, এ নিয়ে পরিবেশ ভবনে গত ২৭ সেপ্টেম্বর একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছিল। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষে সদস্য সচিব রাজেশ কুমার বিষয়টি জানিয়ে ওই ৪৪টি পুরসভার মেয়র, চেয়ারপার্সন, কমিশনারদের চিঠি পাঠিয়ে উপস্থিত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু সেখানে মাত্র ২১টি পুরসভার প্রতিনিধি এসেছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই অ্যাসিস্ট্যান্ট ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদমর্যাদার। নগরোন্নয়ন এবং পরিবেশ দফতরের কর্তারা মনে করছেন, পুরসভাগুলি বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না।

নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, কোন পুরসভার কোন নিকাশি নালার জল কোন পথে গঙ্গায় গিয়ে মিশেছে, তার বিস্তারিত মানচিত্র তৈরি করতে হবে। সেই নোংরা জল পরিস্রুত করে তবেই তা ফেলা যাবে গঙ্গায়।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘হাজির থাকা পুরসভার প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে গঙ্গায় নোংরা জল ফেলতে দেবেন না। গঙ্গা দূষণমুক্ত করা জরুরি।’’ সেই কাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করতে হবে, এমনই নির্দেশ পরিবেশ আদালতের। বৈঠকে জানা গিয়েছে, কলকাতা পুরসভার

৫০টিরও বেশি নালা বা খাল দিয়ে নোংরা জল গঙ্গায় মিশছে। চুঁচুড়া পুরসভায় এমন ৪২টি নালা রয়েছে। সময়ে কাজ না হলে মাসে কয়েক কোটি টাকা বেরিয়ে যাবে জরিমানা দিতেই। আর জরিমানা দেওয়ার বিষয়টি সম্মানেরও নয়। রাজ্য সরকারের কাছে এটা বড়ই লজ্জার।

নগরোন্নয়ন দফতরের একাধিক আধিকারিকের কথায়, নিকাশি শোধনকেন্দ্র করতে অনেক সময় লাগে। সে সময় আর নেই। আপাতত অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ হিসেবে নালার নোংরা জল ‘ফাইটোরেমিডিয়ান’ এবং ‘বায়োরেমিডিয়ান’ পদ্ধতিতে শোধন করতে হবে। তা হলে পরিবেশ আদালতকে অন্তত বলা যাবে, কাজ শুরু হয়েছে। কারণ, আগামী নভেম্বর থেকেই তা শুরু না করা গেলে রাজ্য সরকার মাসপিছু নালাপ্রতি পাঁচ লক্ষ টাকা করে কেন্দ্রীয় দূষণ পর্ষদের কাছে জমা দিতে বাধ্য থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Pollution in Ganges
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE