Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-west-bengal

ভোটে নেই মাটিয়ার মেয়েরা

‘উপরের পল্লি’ ও ‘নীচের পল্লি’ নামে দু’টি জায়গা আছে মাটিয়ায়। নীচের পল্লিতে ৬২৩ জন, উপরের পল্লিতে ২৫৩ জন যৌনকর্মী কাজ করেন। তিনশোর বেশি মহিলা আছেন, যাঁরা স্থানীয় বুথের ভোটার। প্রায় আড়াইশো শিশুও আছে। তাদের মধ্যে জনা পঞ্চাশ স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করে। 

প্রতিবাদের-ভাষা: মাটিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদের-ভাষা: মাটিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১২
Share: Save:

ভোটের মুখে প্রতিশ্রুতি আছে ভূরি-ভূরি। স্কুল-লাইব্রেরি হবে, মিলবে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল, জঞ্জাল সাফাই হবে এলাকায়, মিলবে সরকারি প্রকল্পের সুবিধে। ভোট মিটলে বহু প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয় না বলে অভিযোগ শোনা যায় দিকে দিকে। ব্যতিক্রম নয় বসিরহাট ২ ব্লকের মাটিয়ায় যৌনপল্লিও।

‘উপরের পল্লি’ ও ‘নীচের পল্লি’ নামে দু’টি জায়গা আছে মাটিয়ায়। নীচের পল্লিতে ৬২৩ জন, উপরের পল্লিতে ২৫৩ জন যৌনকর্মী কাজ করেন। তিনশোর বেশি মহিলা আছেন, যাঁরা স্থানীয় বুথের ভোটার। প্রায় আড়াইশো শিশুও আছে। তাদের মধ্যে জনা পঞ্চাশ স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করে।

এলাকার মহিলাদের অভিযোগ, ভোট চাইতে সব দলের নেতারা আসেন। কিন্তু ‘পুলিশের উৎপাত’ই হোক বা দুষ্কৃতীদের হাঙ্গামা, বিপদে কারও কাছেই সাহায্য মেলে না। ছোট ছোট ঘরে গাদাগাদি করে মহিলারা থাকেন। জেলার নানা প্রান্ত থেকেও বহু মহিলারাও আসেন। ঘর ভাড়া নিয়ে দিনভর কাটিয়ে রোজগারের পরে রাতে বাড়ি ফেরেন।

রাজনৈতিক দলের নেতাদের উপরে সকলেরই প্রচুর ক্ষোভ। এক মহিলার কথায়, ‘‘আমার দুই সন্তান। এক জনকে স্কুলে ভর্তি করেছি। এখানে আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য একটা স্কুল হলে ভাল হয়। একমাত্র সরকারি সাহায্য পেলেই তা সম্ভব। কিন্তু সে সব নিয়ে ভাবছে কে!’’

এক যৌনকর্মীর ছেলে কলেজে পড়ছেন। খেলাধূলায় দক্ষ ওই যুবকের কথায়, ‘‘এখানকার অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে জীবনে বড় হতে চায়। কিন্তু পরিবেশ তার পিছু ছাড়তে

চায় না। বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা দিয়ে এর থেকে অব্যাহতি দিতে পারে সরকার। কিন্তু প্রতিনিধিরা শুধু ভোটের জন্য প্রতিশ্রুতি দেন।’’

ক্ষোভ উগরে দিয়ে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির মাটিয়া শাখার সম্পাদক বলেন, ‘‘অনেক যন্ত্রণায় এখানে আসতে বাধ্য হয়েছি। পল্লির মেয়েরা অবহেলিত। দুষ্কৃতী হামলা, পুলিশি অত্যাচার তো আছেই। যৌনপল্লিতে থাকায় সরকারি সাহায্যও মেলে না। একাধিকবার ফর্ম পূরণ করলেও জবকার্ড পাইনি।’’ সরকারি প্রকল্পের ঘরের আবেদনও গ্রাহ্য হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। তিনি জানান, পল্লি পরিষ্কার তো দূরের কথা, এখানে শৌচালয়ের অবস্থাও খারাপ। কল আছে, কিন্তু চাহিদা মতো পানীয় জল পাওয়া যায় না। ভোট দিতে এখানকার মেয়েরা আগ্রহী নয় বলেই তাঁর মত।

দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়ায় নোটায় ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন অনেকেই। ‘অল ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক অব সেক্স ওয়ার্কার্স’ এবং দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে এলাকায় এ নিয়ে পোস্টারও পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Sex Worker Women Basirhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE