—ফাইল চিত্র।
অমিত শাহের রোড শো ঘিরে কলকাতা তখন অগ্নিগর্ভ। তখনই টিভির পর্দায় নরেন্দ্র মোদী বলছেন, ‘‘বিজেপি নয়, এ হল রাজ্য সরকারের সঙ্গে বাংলার মানুষের লড়াই। এ লড়াই রাজ্যের জনতা বনাম শাসকের।’’ প্রায় একই সুরে আজ পশ্চিমবঙ্গে ঘটে চলা রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির আর এক শীর্ষ নেতা রাজনাথ সিংহ। তাঁর দাবি, রাজ্যে নৈরাজ্যের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভোট মরসুমে হিংসার নজির প্রমাণ করছে নিজের দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পাল্টা দাবি, গোটা দেশে বিজেপির পায়ের তলার মাটি চলে গিয়েছে। তাই তারা পশ্চিমবঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। বিজেপির সন্ত্রাসকে আটকাতে হবে।
ভোটের শেষ দফার আগে আজ কলকাতায় রোড শো করতে গিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সন্ধেয় সেই রোড শো ঘিরে গোলমাল বাধে তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে। ঠিক সেই সময়ে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহের রোড শো খুব ভাল হয়েছে। ওই রাজ্যে যা চলছে তা শাসক দলের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে কেন্দ্রের বিবাদ রয়েছে বলে সংবিধান তথা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অপমান করা ঠিক নয়। ঘূর্ণিঝড় (ফণী) আসতেই আমি মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলাম।’’ মোদীর বক্তব্য, ‘‘জনতা ও বাংলার সরকারের মধ্যে লড়াইয়ে জনতার হয়ে দেওয়ালের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে বিজেপি। তাই বিজেপিকে নিশানা করা হচ্ছে।’’
বিজেপির অভিযোগ, গোটা দেশে আপাত ভাবে শান্তিতে ভোট হলেও একমাত্র ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। গত ছ’টি পর্বেই ভোটের দিন কম-বেশি হিংসার শিকার হয়েছে রাজ্য। হিংসার শিকার হয়েছে সংবাদমাধ্যমও। কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা সত্ত্বেও কেন এত হিংসা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সব শিবিরেই। আজ তা নিয়ে বলতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকেই পরোক্ষে দায়ী করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘দের আয়ে দুরস্ত আয়ে। এর জন্য দায়ী আপনারাই।’’ মোদী দাবি করেন, যতদিন সংবাদমাধ্যম হামলার শিকার হয়নি ততদিন তাদের মনে হয়নি পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমি গত এক বছর ধরে বলে আসছি ওই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা হয়েছে। শ’খানেক লোকের মৃত্যু হয়েছে। তখন কিন্তু কেউ কান দেয়নি। কারণ তখন সংবাদমাধ্যম মোদী-বিরোধিতায় ব্যস্ত ছিল। কিন্তু সে সময়ে যদি সংবাদমাধ্যম ওই চিত্র তুলে ধরত, রাজ্যের শাসক শিবিরের উপরে চাপ বাড়াত তাহলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সরকার ও নেতারা বাধ্য হতেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যম তা করেনি।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আজ মোদীর সুরেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে মুখ খোলেন রাজনাথ সিংহ। গত পাঁচ বছর দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা রাজনাথ পশ্চিমবঙ্গের হিংসা নিয়ে বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে হিংসার কোনও স্থান নেই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদিনই রাজনৈতিক সংঘর্ষের খবর আসছে। যা রোখার দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তিনি হিংসা সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’’
সম্প্রতি অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথের মতো নেতাদের চপার পশ্চিমবঙ্গে নামতে দেওয়া হচ্ছে না বলে দাবি করে বিজেপি। আজ মোদী বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বেশ কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গে জনসভা করতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাঁদের চপার নামার অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমি এখনকার কথা বলছি না। চার মাস আগেই এমন ঘটনা ঘটেছে।’’
তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের জবাব, ‘‘মোদী সাহেবের সঙ্গে জনগণের কোনও সম্পর্ক নেই। সারা ভারতে ওঁদের পায়ের তলায় মাটি চলে গেছে। তাই এখন বার বার পশ্চিমবঙ্গে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।’’ ফিরহাদ হাকিমের দাবি, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি সচেতন মানুষ বিজেপির সঙ্গে নেই। তাই গুন্ডাদের জড়ো করে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইছে তারা। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। শিক্ষার পীঠস্থানকে তছনছ করে দিয়েছে। এরাই তো গাঁধীজিকে হত্যা করেছিল। বিজেপির এই সন্ত্রাসবাদকে আটকাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy