Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
তিন মামলায় গ্রেফতার ৫৮ জন
Lok Sabha Election 2019

লালবাজারে ডাকা হতে পারে অমিত শাহকে

প্রশ্ন উঠছে, কারা কী ভাবে বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুর করল?

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৯ ০৩:৫০
Share: Save:

যাঁর রোড শো-কে ঘিরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ও বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুর চলল, সংশ্লিষ্ট তিনটি মামলা এবং এফআইআরে বিজেপির সেই সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নামই নেই! যদিও মূর্তি ও কলেজ ভাঙচুরে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় মঙ্গলবার রাতে এই অভিযোগ জানান ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। পুলিশ মামলা দায়ের করে তদন্তে নেমেছে। পুলিশ জানায়, রোড শোয়ে থাকা বিজেপি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। লালবাজারের কর্তাদের একাংশ বুধবার জানান, ওই শোয়ে যোগ দেওয়া সকলের ভূমিকাই তদন্তে খতিয়ে দেখা হবে। সে-ক্ষেত্রে শাহকে ডেকে পাঠানো হতে পারে।

প্রশ্ন উঠছে, কারা কী ভাবে বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুর করল? প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার শাহের রোড শো ওই কলেজ পেরিয়ে কিছুটা এগোতেই বিজেপির জনা পঞ্চাশ কর্মী-সমর্থক কলেজের বিধান সরণির দিকের গেটের দিকে ছুটে যায়। অভিযোগ, তারাই গেটের তালা ভেঙে কলেজে ঢুকে যথেচ্ছ ভাঙচুর চালায়। কলেজের কাঠের একটি দরজাও ভেঙে দেয় হামলাকারীরা। কলেজের সিসি ক্যামেরা খারাপ থাকায় সেখান থেকে হামলার ফুটেজ পাওয়া যায়নি। হামলার ফুটেজ মিলেছে কলেজের আশপাশের এলাকার সিসি ক্যামেরা এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হওয়া ছবি থেকে। বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহের একটি ভিডিয়ো ফুটেজ তদন্তকারীদের হাতে রয়েছে। পুলিশের দাবি, তাতে ওই নেতাকে বিজেপি-সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁরা যেন বাঁশ, লাঠি নিয়ে রোড শোয়ে যোগ দেন। রাকেশকে খুঁজছে পুলিশ।

ওই ভাঙচুরের ঘটনায় বিজেপির দিল্লির মুখপাত্র তেজেন্দ্রপাল সিংহ বাগ্গাকে চৌরঙ্গির একটি হোটেল থেকে মাঝরাতে আটক করেছিল নিউ মার্কেট থানার পুলিশ। পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ বুধবার এই বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ৬১ জনকে গ্রেফতার করেছিল গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ। পরে তাঁদের ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া হয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলিশি হাজতে ১০

সঞ্জীব মিশ্র-কলকাতা
শুভ দলুই-হাওড়া
ধর্মদাস বাউড়ি-খানাকুল
শুভ্র চট্টোপাধ্যায়-কাটোয়া
জিৎ ঘোষ-মগরা
মণীশ প্রসাদ-কলকাতা
প্রদীপ কুমার-কলকাতা
শ্রীকান্ত রানা-গলসি
অজয় বাগদি-গলসি
শুভেন্দু রায়-বর্ধমান

বিদ্যাসাগর কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলায় ৫৮ জনকে গ্রেফতার করেছে জোড়াসাঁকো ও আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা। পুলিশের দাবি, রোড শো-কে কেন্দ্র করে হামলা ও গোলমালের ঘটনায় যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছিল। হাঙ্গামার গোটা ঘটনায় মামলা হয়েছে তিনটি। ১) এক ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিদ্যাসাগর কলেজে ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় বিজেপি-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায়। সেই মামলায় বিজেপির ৩৫ জন কর্মী-সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২) বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে ভাঙচুর ও পুলিশকে মারধরের ঘটনায় ২৩ জন বিজেপি-সমর্থকের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা করেছে জোড়াসাঁকো থানা। ২৩ জনই গ্রেফতার হয়েছে। ৩) রোড শোয়ের আগে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে নিউ মার্কেট থানায়।

জোড়াসাঁকো থানায় ধৃত ২৩ জন এবং আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ধৃত ৩৫ জনকে বুধবার ব্যাঙ্কশালের দু’টি পৃথক আদালতে তোলে পুলিশ। ওই ৫৮ জনের মধ্যে ১০ জনকে পুলিশি হাজতে নিয়ে জেরা করার আবেদন জানান তদন্তকারীরা। দুই আদালতের দুই ম্যাজিস্ট্রেট ১০ জনকে ২২ মে পর্যন্ত পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দীপনারায়ণ পাকড়াশি ও স্নেহাংশু ঘোষে জানান, জোড়াসাঁকো থানায় ধৃত ১৮ জনকে ২৮ মে এবং আমহার্স্ট স্ট্রিট থানায় ধৃত ৩০ জনকে ২৯ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

তদন্তকারীদের একাংশ জানান, বিদ্যাসাগর কলেজে হামলার ঘটনায় ধৃতেরা প্রাথমিক জেরায় দাবি করেছে, কলেজের ভিতর থেকে নরেন্দ্র মোদী ও শাহের নামে কুৎসা করে স্লোগান দিতে দেখে তারা প্রতিবাদ করতে যায়। তা থেকেই প্রথমে ধস্তাধস্তি ও পরে গোলমাল বাধে। তাদের লক্ষ্য করে ইট ও কাচের বোতল ছোড়া হয়েছিল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর থেকেও আগে তাদের উপর ইট ছোড়া হয় বলে ধৃতদের অভিযোগ।

পুলিশ জানায়, কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রীরা জানান, সান্ধ্য ক্লাস চলাকালীনই হামলাকারীরা গেটের তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। তারা কয়েক জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ কলেজে ঢোকে এবং ছাত্রীদের এক দিকে সরিয়ে নিয়ে যায়। সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, এ দিন ধৃতদের ব্যাঙ্কশাল আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের সামনে হাজির করানো হয়নি। ঘটনার প্রতিবাদে আইনজীবীদের একাংশ আদালতের গেটে তালা লাগিয়ে রেখেছিলেন। পুলিশ তাই আদালতের বাইরে ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিটে গাড়িতে ধৃতদের বসিয়ে রেখেছিল। অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট মনোদীপ দাশগুপ্ত নিজে অভিযুক্তদের কাছে গিয়ে তাদের বক্তব্য শোনেন। আদালতের সামনে এ দিন দুপুরে শাহের কুশপুতুল পোড়ানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE