প্রাক্-দোল: রঙের উৎসবে মাতলেন সবাই। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের পড়ুয়ারা মাতলেন আবির খেলা, বসন্ত উৎসবে, নাচে-গানে। —নিজস্ব চিত্র
নির্বাচনবিধি অনুযায়ী, কোনও উন্নয়ন প্রকল্পের ঘোষণা এখন করা যাবে না। কে, কী কাজ করেছেন তার ফিরিস্থি দিয়ে ব্যানার, পোস্টারও লাগানো যাবে না। এই পরিস্থিতিতে শাসক দলের কাছে জনসংযোগের নয়া রাস্তা খুলে দিয়েছে বসন্তোৎসব।
ঘটনাচক্রে নির্বাচন ঘোষণার পর পরই এসে পড়েছে দোল। ফলে একে ব্যবহার করে জনসাধারণের কাছাকাছি পৌঁছনোর অর্থাৎ পরোক্ষে প্রচার সেরে নেওয়ার পন্থা অনেক জায়গাতেই নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজনৈতিক সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে মতুয়া মহাসংঘের প্রধান বড়মার মৃত্যুর পর বিভিন্ন এলাকায় তাঁর স্মরণসভায় অংশ নিয়ে পরোক্ষে জনসংযোগের পন্থা নিয়েছিল বিজেপি নেতারা। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের খবর, ভোটারদের কাছাকাছি পৌঁছনোর জন্য এ বার জেলায় দোল বা হোলির উৎসবকে শাসক দলের নেতারা যে ভাবে ব্যবহার করছেন তেমন অন্য দল পারছে না। পাড়ায় পাড়ায় ইতিমধ্যে শুরু হয়ে যাওয়া বসন্তোৎসবের আয়োজনে থাকছে তৃণমূলের স্থানীয় কমিটি বা নেতা-কর্মীরা। অথবা বসন্তোৎসবে তৃণমূল নেতারা প্রধান অতিথির ভূমিকায় থাকছেন।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতা কর্মীদের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, উৎসবের সঙ্গে বরাবরই শাসকদলের নিবিড় সম্পর্ক। হাজার বাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয় ক্লাবগুলিকে। পাড়ায় পাড়ায় রক্তদান থেকে শুরু করে রবীন্দ্রজয়ন্তী, খেলা থেকে শুরু করে গণবিবাহ—চলতেই থাকে। সেই ঐতিহ্য জিইয়ে রেখে বসন্তোৎসবকে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করছে তৃণমূল।
মঙ্গলবার হরিণঘাটা থানা এলাকার নিমতলায় অনুষ্ঠিত হয় বসন্ত উৎসব। তাতে অতিথি তালিকায় নাম রয়েছে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নীলিমা নাগ ও ব্লক তৃণমূলের সভাপতি চঞ্চল দেবনাথ। উৎসবের পোস্টারে উল্লেখ রয়েছে স্থানীয় কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের সভাপতি সুভাষ বিশ্বাস, হরিণঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের গৌতম কীর্তনিয়ার।
কিছুদিন আগে কাষ্ঠডাঙা-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নারী দিবসে পদযাত্রা বের হয়। আপাত ভাবে অরাজনৈতিক সেই অনুষ্ঠানে শাসকদলের বেশ কিছু নেতা ছিলেন বলে খবর। নিমতলার বসন্ত উৎসব প্রসঙ্গে তৃণমূল ছাত্রপরিষদের স্থানীয় নেতা শুভদীপ সাহা খোলাখুলিই বলছেন, ‘‘উৎসব করা তো ভাল। অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ হয়।’’
হরিণঘাটা ব্লক তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল দেবনাথের খাস তালুক নগরউখড়াতে হবে তিন দিনের বসন্ত উৎসব। ২৬ তারিখ থেকে উৎসব শুরু হবে। বলা হচ্ছে, নগরউখড়া স্পোর্টিং ইউনিয়নের পরিচালনায় ওই উৎসব হবে। কিন্তু এলাকার সকলেই জানাচ্ছেন, আসলে জড়িয়ে রয়েছেন শাসকদলের স্থানীয় নেতারা। চঞ্চল নিজেই বলছেন, ‘‘ভাল কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার মধ্যে কোনও লজ্জা নেই। তবে আমি সারা বছরই জনসংযোগ করি। ফলে আলাদা করে বসন্তোৎসবকে ভোটের মুখে জনসংযোগের হাতিয়ার হিসেবে নিচ্ছি না।’’
নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার স্বাস্থ্য সেলের নেতা কৃষ্ণ মাহাতো অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘মানুষ ভেবে নিয়েছেন কাকে ভোট দেবেন। ফলে, এই ভাবে উৎসবে যোগ দিয়ে মানুষের মন পাওয়া যাবে না।’’ আর হরিণঘাটার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষের কথায়, ‘‘মানুষ ভোট দেয় আদর্শের উপর। এই সব চমক দিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া যায় না।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy