Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

প্রার্থী কল্যাণ, পদ্ম শিবিরে ঘনাল ক্ষোভ

বৃহস্পতিবার, দোলের সন্ধ্যায় প্রথম দফায় প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি।

কল্যাণ চৌবে। —ফাইল চিত্র

কল্যাণ চৌবে। —ফাইল চিত্র

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৯ ০০:৫৮
Share: Save:

অনেকেরই আশা ছিল, শেষ পর্যন্ত সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় ওরফে জুলুবাবু ফের প্রার্থী হবেন কৃষ্ণনগরে। তার বদলে ‘বহিরাগত’ প্রাক্তন ফুটবলার কল্যাণ চৌবে প্রার্থী হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে জেলা বিজেপির একটি অংশ।

বৃহস্পতিবার, দোলের সন্ধ্যায় প্রথম দফায় প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি। তার মধ্যে রানাঘাট কেন্দ্রের প্রার্থী নেই। পড়শি দুই জেলার যে দুই কেন্দ্রের মধ্যে নদিয়ার তিনটি বিধানসভা এলাকা পড়ে, সেই বনগাঁ ও উত্তর ২৪ পরগনা কেন্দ্রের প্রার্থীও ঘোষণা হয়নি। এক মাত্র কৃষ্ণনগর কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম জানা গিয়েছে। কিন্তু তাতে জেলার নেতা-কর্মীদের একটা বিরাট অংশ অখুশি।

শুক্রবার সকালেই কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া ও কৃষ্ণনগর শহর সংলগ্ন এলাকা থেকে বিজেপি কর্মীরা জেলা কার্যালয়ে এসে বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্ততি নিতে শুরু করেছিলেন। জেলা নেতারা কোনও মতে তাঁদের নিরস্ত করেন। তবে ক্ষোভ যে একেবারে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত ছড়িয়েছে, তা তাঁরা বিলক্ষণ বুঝেছেন। সেই ক্ষোভ যদি কোনও ভাবে সামাল দেওয়া না যায়, ভোটে ভরাডুবি যে অনিবার্য, তা-ও তাঁদের অনেকেই ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিচ্ছেন।

বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের দাবি, কল্যাণ চৌবেকে সরিয়ে জুলুবাবুকেই প্রার্থী করতে হবে। জেলা স্তরে জুলুবাবুর অনুগামী বলে পরিচিত নেতারা অনেকেই জানিয়ে দিয়েছেন, কল্যাণ প্রার্থী হলে তাঁরা কেউ ভোটে গা ঘামাবেন না। স্রেফ বসে যাবেন। এ দিন দোগাছি এলাকায় একটি গোপন জায়গায় তাঁরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। সেখান থেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা কমিটির এক সহ-সভাপতি বলেন, “আমরা সকলেই চেয়েছিলাম, জুলুবাবুকে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু তা না করে অপরিচিত এক খেলোয়াড়কে প্রার্থী করায় কর্মীরা হতাশ। তাঁরা বলছেন, ভোটে কোনও কাজ না করে বসে থাকবেন।”

কৃষ্ণনগর কেন্দ্রটিকে বরাবরই ‘সম্ভাবনাময়’ বলে দাবি করে আসছিল বিজেপি। সেই মতো জেলা নেতারা নিজেদের মতো করে সংগঠন চাঙ্গা করার জন্য নানা কর্মসূচি নিতে শুরু করেছিলেন। বেশ কয়েকটি নাম ঘোরাফেরা করলেও তাঁদের প্রথম পছন্দ ছিলেন জুলুবাবু। কলকাতায় বিজেপির সদর দফতরে অবশ্য প্রাক্তন গোলরক্ষক কল্যাণ চৌবের নাম ঘোরাফেরা করছিল। শেষে সেটাই সত্যি হওয়ায় জেলার ওই নেতাকর্মীরা ভেঙে পড়েছেন। যত সময় গিয়েছে, হতাশা পাল্টে গিয়েছে ক্ষোভে।

কৃষ্ণনগর শহরের এক বিজেপি কর্মীর কথায়, “হাতে আর মাত্র ক’টা দিন সময়। যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে, কেউ চেনেই না। আমরা নিজেরাই যে প্রার্থীকে চিনি না, তাঁকে ভোটাদের সঙ্গে পরিচয় করাব কী করে?” দোগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান দুলাল সরকারের দাবি, “কর্মীরা কিছুতেই এই প্রার্থীকে মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।” ভান্ডারখোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান সঞ্জয় বিশ্বাসও বলেন, “কর্মীরা জুলুবাবুকেই চেয়েছিলেন। তাঁরা এটা মানতে পারছেন না।”

যাঁরা এতটা সরাসরি বলছেন না, তাঁদেরও একটা বড় অংশ মনে করছেন, জুলুবাবুর বদলে ‘আনকোরা’ প্রার্থী দেওয়ায় তৃণমূল অনেকটাই সুবিধা পেয়ে গেল। যদিও দলের অন্য অংশ তা মানতে রাজি নন। তাঁদের কথায়, কল্যাণ চৌবে এক জন নামী প্রাক্তন গোলরক্ষক। জাতীয় দলের পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে খেলেছেন। ফলে তিনি এমনিতেই ‘পরিচিত মুখ’। তাঁকে নতুন করে পরিচয় করানোর মতো কিছু নেই। বিক্ষুব্ধেরা পাল্টা বলছেন, ফুটবলে উৎসাহী নন এমন অনেকেই কল্যাণের নাম জানেন না। ফলে এটা ছেঁদো যুক্তি।

কেন কল্যাণ চৌবেকে প্রার্থী করা হল কৃষ্ণনগরে, তা নিয়েও বিস্তর চর্চা চলছে। শুধু বিজেপির অন্দরে নয়, রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে চলছে তরজা। অনেকের মতে, যখন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ কৃষ্ণনগরের সফর বাদ দিয়ে অন্য জায়গায় সভা করে চলে গেলেন, তখনই বোঝা উচিত ছিল যে এই কেন্দ্রটিকে শীর্ষ নেতৃত্ব ততটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সে জেলা নেতারা যা-ই বলুন না কেন। তাই ‘দুর্বল’ প্রার্থী দেওয়া হয়েছে।

নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, “কল্যাণ চৌবে বিখ্যাত ফুটবলার ছিলেন। তাঁকে সবাই চেনে। অনেক দিক বিবেচনা করে তবেই সর্বভারতীয় নেতৃত্ব প্রার্থী ঠিক করেন।” তাঁর মতে, “জুলুবাবুকে নিয়ে জেলায় আবেগ আছে ঠিকই। তবে সাতাশি বছর বয়সের কথা মাথায় রেখেই হয়তো দল তাঁকে আর প্রার্থী করল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE