Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন বুথের ১০০ মিটারের বাইরে! দাবি মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের

স্কুলের দেওয়ালে তখনও টিয়ারুলের শুকনো রক্তের দাগ। মাপ নিয়ে দেখা যায়, প্রিসাইডিং অফিসারের টেবিল থেকে সেই দূরত্ব ৩৫ মিটার। ভোটের লাইন যেখানে ছিল তার দূরত্ব বড়জোর ৩৮ মিটার।

স্বজনহারা: তৃতীয় দফার ভোটে নিহত কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখের পরিবার। বুধবার ভগবানগোলার সরকার পাড়ায়। রক্তদাগ দেখাচ্ছেন ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

স্বজনহারা: তৃতীয় দফার ভোটে নিহত কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখের পরিবার। বুধবার ভগবানগোলার সরকার পাড়ায়। রক্তদাগ দেখাচ্ছেন ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

মৃন্ময় সরকার
ভগবানগোলা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

লোকসভা ভোটের তৃতীয় দফায়, মঙ্গলবার, রাজ্যের এক মাত্র বলি কংগ্রেস কর্মী টিয়ারুল শেখ খুন হয়েছেন বুথের একশো মিটারের বাইরে— নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো রিপোর্টে এমনই দাবি করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলা নির্বাচনী আধিকারিক পি. উলাগানাথন।

বহরমপুরে নিজের দফতরে বসে এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সম্ভবত ব্যক্তিগত রেষারেষিতেই রক্তারক্তি। প্রাথমিক ভাবে তো তাই মনে হচ্ছে। খুনটাও হয়েছে বুথ থেকে বেশ কিছুটা দূরে। না হলে, ওই ঘটনার পরেও অত মানুষ ভোট দিতে আসেন কখনও!’’

এই কথা অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন বিরোধীরা। বরং, বাম-কংগ্রেস-বিজেপি, সম্মিলিত ভাবেই দাবি করছে— খুন হল বুথের দোরগোড়ায় আর দায় এড়াতে খুনের ঘটনাস্থল বুথের চৌহদ্দির বাইরে ঠেলল প্রশাসন।

সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে, কংগ্রেস ও বাম কর্মীদের এক যোগে, রীতিমতো ফিতে নিয়ে এসে মাপজোকের ঘটনা। এ দিন সকালে এক দল কংগ্রেস কর্মী মাপার ফিতে নিয়ে এসে হাজির হন বুথে। চোখে পড়ে, স্থানীয় সিপিএম নেতা-কর্মীদের চেনা মুখও। স্কুলের দেওয়ালে তখনও টিয়ারুলের শুকনো রক্তের দাগ। মাপ নিয়ে দেখা যায়, প্রিসাইডিং অফিসারের টেবিল থেকে সেই দূরত্ব ৩৫ মিটার। ভোটের লাইন যেখানে ছিল তার দূরত্ব বড়জোর ৩৮ মিটার। আর বুথের দরজা থেকে খুনের স্মৃতি নিয়ে পড়ে থাকা সেই রক্তাক্ত দেওয়াল সাকুল্যে ১২ মিটার।

স্থানীয় কংগ্রেস কর্মী এক্রামূল শেখ বলছেন, ‘‘স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে তিন-তিন জন জওয়ান, ঘটনাটি স্রেফ হাঁ করে দেখল!’’ মঙ্গলবার দুপুরের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিরাজুল ইসলাম বলছেন, ‘‘টিয়ারুলকে বুথের ভেতর থেকে বাইরে টেনে এনে সজনে ডাল দিয়ে পেটাচ্ছিল তৃণমূলের লোকজন। ভয়ে সবাই ছুটছিল। বারবার চেঁচালাম, কেন্দ্রীয় বাহিনী এগিয়েই এল না।’’ গ্রামের অন্য এক বাসিন্দা মিনারুল শেখ বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকায় নিরাপদে ভোট দিতে পারব ভেবেছিলাম। কিন্তু তাদের যা আচরণ দেখলাম, ভরসাটাই চলে গেল।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী আবু হেনা বলেন, ‘‘বুথে গিয়ে মাপজোক করে দেখেছি, বড়জোর ত্রিশ-চল্লিশ মিটারের মধ্যে ঘটনা। আর কেন্দ্রীয় বাহিনী ছবির মতো স্থির হয়ে থাকল! আমরা ওই বুথে পুনর্নিবাচন চাইছি। চাইছি টিয়ারুলের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ।’’ সিপিএমের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যও বলেন, ‘‘বুথের গায়েই ঘটনা। এটা পুরোপুরি প্রশাসনের ব্যর্থতা।’’

তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন, ‘‘নিতান্তই ব্যক্তিগত আক্রোশের ঘটনায় তৃণমূলকে জড়ানো হচ্ছে। ঘটনাটিও বুথের অনেক বাইরে।’’

এলাকায় রাজ্য পুলিশের কোনও উর্দিধারীকে চোখে পড়েনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরাও দাঁড়িয়ে রইল পাথরের মতো— ভোট দিতে আসা মানুষের নিরাপত্তার দায় তা হলে কার?

কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের কেউ এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তবে জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনীর দৌড় ওই একশো মিটারের মধ্যেই, কমিশনের এমনই নিয়ম। তবে নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতে অনেক সময় স্থানীয় ভাবে ওই পরিধি ২০০ মিটার পর্যন্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্নটা তা হলে রয়েই যাচ্ছে। এ ব্যপারে কমিশনের এক কর্তার জবাব, ‘‘বাহিনীর প্রধান কাজ ইভিএম এবং ভোট কর্মীদের রক্ষা করা।’’ বুথের চৌহদ্দিতে ভোট দিতে আসা সাধারন মানুষের দায় তা হলে কার? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019 Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE