মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানের স্বল্পবাস ছবি এবং ‘ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স’-এর বর্ণনায়।
পুলওয়ামা তো ‘অনেক হল’! ফেসবুকে বুধবার সকালে একজন লিখেছেন, ‘দেশাত্মবোধে একঘেয়েমি আসছিল। রাজ্যেও তেমন উত্তেজক কিছু নেই। অখাদ্য রাজ্য রাজনীতিতে এ বার টক-ঝাল-মিষ্টি সস ঢালা হল।’ তাঁর উদাহরণের অভিনবত্ব নিয়ে বাহবা দেওয়ার লোকের অভাব হয়নি। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরত জাহানের স্বল্পবাস ছবি এবং ‘ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স’-এর বর্ণনায়। ফটোশপ করে বদলে দেওয়া দুই নায়িকার ছবিও এখন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল।
অনেকেই বলছেন, সন্ধ্যা রায় বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছিলেন। তাঁর সময়ে নায়িকাদের খোলামেলা পোশাকের তেমন চল ছিল না। তাই কাঁধে বাঁক নিয়ে তারকেশ্বর যাত্রার ছবি নিয়ে ‘খিল্লি’তেই থেমে ছিল বিষয়টা। মুনমুন সেন অবশ্য রেহাই পাননি। চর্চা হয়েছিল শতাব্দী রায়, দেবশ্রী রায়, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েও। কিন্তু এমন বাঁধ ভাঙা অশালীনতা দেখা যায়নি।
প্রশ্ন উঠেছে, গ্ল্যামার জগতের পুরুষেরা রাজনীতিতে এলেও কি এমন হয়! অনিল চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, জর্জ বেকার, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় বা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়দের নিয়েও রসিকতা কম হয়নি। বহু ক্ষেত্রে তা সৌজন্যের সীমা লঙ্ঘন করেছিল। কিন্তু এ ভাবে শালীনতার সীমা অতিক্রম করেছিল কি? বাংলা সিরিয়ালের এক জনপ্রিয় অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘দেবকে যখন প্রার্থী করা হল, তখন বলা হয়েছিল মুখে সুপুরি ভরে সংসদে পাঠাতে হবে। না হলে উচ্চারণ কেউ বুঝতে পারবে না। কিন্তু দেবের সিক্স প্যাক না এইট প্যাক, তা নিয়ে চর্চা হয়নি। এখানে মিমি-নুসরতের কার শরীরে কটা ট্যাটু আছে, সেটা খোঁজা হচ্ছে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
২০০১ সালে যাদবপুর কেন্দ্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছিলেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘কত অশ্লীল কথা যে শুনতে হয়েছে। সে সব উচ্চারণ করা দূরের কথা, অনেকে কল্পনাই করতে পারবেন না।’’ কী ভাবে সামলেছেন সে সব? তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজেকে বোঝাতাম, শব্দের উৎপত্তি বায়ু থেকে, বায়ুতেই তার লয়। তাই অগ্রাহ্য করো। যত পারো, অবজ্ঞা করো। শুধু নিজের কাজটা নিয়ে থাকো। আমরা সিনেমা জগতের মানুষেরা যখন রাস্তায় নেমে বন্যাত্রাণে টাকা তুলি, সামাজিক কারণে পথে নামি তখন এই প্রশ্নগুলো ওঠে না। রাজনীতিতে এলেই সবাই রে রে করে ওঠে!’’
কোনও রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করা বা না করার স্বাধীনতা সকলেরই রয়েছে। কেন হঠাৎ মিমি, নুসরতকে প্রার্থী করা হল সেই প্রশ্ন তাই উঠতে পারে। কেন এঁরা এই প্রস্তাবে ‘না’ বললেন না, সেই প্রশ্নও করতে পারেন যে কেউ। কিন্তু যে ভাবে দুই নায়িকাকে ঘিরে বিকৃত রুচির উল্লাস শুরু হয়েছে, তাতেই আতঙ্কিত বোধ করছেন অনেকে।
অভিনেতা বরুণ চন্দ বলেন, ‘‘আগে অভিনয় জগত থেকে কেউ রাজনীতিতে এলে তাঁর রাজনৈতিক বোধবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হত। এখন যা হচ্ছে সেই ট্রেন্ডটা নতুন। খুন, ধর্ষণে অভিযুক্তেরা টিকিট পাচ্ছেন, জিতে আসছেন, কই তাতে তো কারও হেলদোল দেখা যায় না!’’
মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় মনে করেন, এ হল বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন। একে অল্পবয়সি মেয়ে, তার উপরে গ্ল্যামার জগতের, সে-ও হাতে ক্ষমতা পেয়ে যাবে! তাঁর কথায়, ‘‘বিউটির সঙ্গে ব্রেন থাকবে না, এটা তো বরাবরই ধরে নেওয়া হয়। আমি মানুষটা এত কিছু না পাওয়া নিয়ে বসে আছি, আর ভাল চেহারার জন্য ওরা সব কিছু পেয়ে যাবে? তা হলে দাও উগরে ভিতরে যত বিষ আছে।’’
বিষ তাই বেরিয়েই চলেছে। মিম তৈরি হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছবি ছড়িয়ে অশালীন রসিকতার বন্যা বইছে। সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘অন্য পেশার মহিলাদের নিয়ে এতটা হয় না। কিন্তু গ্ল্যামার জগতের মেয়েরা সহজলভ্য— এই ধারণা বরাবর চলে এসেছে। তাঁরা ক্ষমতা পেতে চলেছেন, এই ভাবনা আসামাত্রই তাই ফুঁসতে শুরু করে জনতা। এখন যে হেতু হাতে সোশ্যাল মিডিয়ার মতো অস্ত্র রয়েছে, তাই খুব সহজেই সেটা করা যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy