তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মশালায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দেবাশিস রায়ের তোলা ছবি।
দলীয় ছাত্র সংগঠনের কর্মশালায় আগামী বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতিরই বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চলতি বছরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নব নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কর্মশালা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। দলের অনেকেরই ধারণা ছিল, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের পঠনপাঠনের উন্নয়ন করা বা পড়ুয়াদের আরও শিক্ষাঙ্গনমুখী করার বিষয়েই পথ-নির্দেশ দিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ওই কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রীর ৪০ মিনিটের ভাষণের নির্যাস: আগামী বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের পর্যুদস্ত করতে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য-সদস্যাদের কী করণীয়! তৃণমূল নেত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘‘আগামী নির্বাচনে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসকে চুন চুন কে পরাস্ত করতে হবে!’’
বস্তুত, আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর বক্তৃতার শেষ দিকে তৃণমূল নেত্রী এ দিন দলীয় ছাত্রদের আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘ভাঙো কংগ্রেস ভাঙো। ভাঙো সিপিএম ভাঙো। ভাঙো বিজেপি ভাঙো। আগামী দিনে তোমাদের দিয়ে নতুন বাংলা গড়ব। বাংলাকে সামলে দিয়ে দিল্লি দখল তোমরাই করবে।’’ ছাত্রদের কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের কথা শুনে স্বভাবতই অশনি সঙ্কেত দেখছে বিরোধীরা। তাদের আশঙ্কা, স্বয়ং দলনেত্রীর এমন ইঙ্গিত বুঝে নিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে শাসক দলের কর্মী বেশি করে বিরোধীদের উপর গা-জোয়ারি করবে!
মমতার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর এই রকম অনেক ডায়লগ আমরা শুনেছি! শিক্ষকদের উপরে ভরসা না রেখে তিনিই সরাসরি ছাত্রদের শেখাচ্ছেন, বিরোধীদের সঙ্গে কী করতে হবে! ওঁর নিজস্ব ট্র্যাডিশন উনি বজায় রেখেছেন!’’ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার কটাক্ষ, ‘‘মুম্বইয়ের চিত্রতারকাদের সঙ্গে আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক সুবিদিত। হিন্দি সিনেমার ডায়লগও যে ওঁর এত পছন্দ, তা আমাদের জানা ছিল না!’’ সুপারহিট হিন্দি ছবি ‘শোলে’র সংলাপের দৃষ্টান্ত টেনে আর এক কংগ্রেস বিধায়ক অপূর্ব সরকারের টিপ্পনী, ‘‘এ বার লেডি গব্বর পেলাম আমরা!’’
তাঁর আমলে ঢালাও উন্নয়নের ফিরিস্তি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচার করতে বলার পাশাপাশিই এ দিন তাঁদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পারদর্শী হয়ে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই তাঁর ও তাঁর সরকারের লাগাতার সমালোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বিরক্ত। এ বার তাঁর সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ, বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে দলীয় ছাত্রদের পাল্টা প্রচারে যেতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে যারা উল্টো কথা বলবে, যুক্তি দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে দিতে হবে।’’ মঞ্চে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পরিষদীয় সচিব তাপস রায় বা অশোক দেবের মতো প্রাক্তন ছাত্র-নেতাদের উপস্থিতিতে তাঁদের সময়ে ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে সিপিএমের ‘অত্যাচারে’র নানা ঘটনাও তিনি তুলে ধরেন।
বিরোধীদের বিরুদ্ধে ছাত্রদের ‘হাতিয়ার’ করতে সাংগঠনিক দিক থেকে তাদের মজবুত করাই এখন লক্ষ্য তৃণমূল নেত্রীর। বিশেষত, তাঁর এই কর্মকাণ্ডে ছাত্রদের আর্কষণ করতে এ দিন তিনি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বতর্মান রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র এবং প্রাক্তন সভাপতি বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়কে একটি ‘ডাটা ব্যাঙ্ক’ তৈরির নির্দেশ দেন। সেখানে দলীয় ছাত্র সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য থাকবে। এই ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই তিনি বাংলায় নতুন করে গ্রাম-শহর গড়বেন। এমনকী, রাজ্যের যুবকল্যাণ দফতরের সঙ্গে ছাত্র কল্যাণকে যুক্ত করার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন বিভাগীয় মন্ত্রী অরূপকে। উন্নয়নের প্রচারে ছাত্রদের কাজে লাগানোর পাশাপাশিই তাদের সাংগঠনিক ভাবে হাতে রাখার কথাই বারবার বুঝিয়েছেন মমতা। তাঁর এ দিনের মনোভাব দেখে দলেরই একাংশের ধারণা, সদ্যসমাপ্ত পুরভোটে তিনি যে বিরোধীশূন্য পরিস্থিতি চেয়েছিলেন, আগামী বিধানসভা ভোটেও কার্যত তাঁর সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য ছাত্রছাত্রীদের চাঙ্গা করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy