মেদিনীপুরের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই
একুশের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে প্রত্যাশিতভাবেই মেদিনীপুরের সভা থেকে পুরোদস্তুর বিজেপিকে আক্রমণ করলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ কথা, ‘‘বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা দখল করতে দেব না।’’
জঙ্গলমহলের মাটি থেকে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন মমতা। কৃষি, বেসরকারিকরণ-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক নীতি নিয়ে সোমবার একের পর এক তোপ দেগেছেন তিনি। ভোটের মুখে এ রাজ্যে টাকা বিলিয়ে বিজেপি ঘর ভাঙার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন। তৃণমূলনেত্রীর নিশানায় মুখ্যত বিজেপি থাকলেও, রাজ্যের আরও দুই বিরোধী দল সিপিএম এবং কংগ্রেসকে গেরুয়াশিবিরের মদতদাতা বলেও বিঁধেছেন তিনি।
২৫ নভেম্বর বাঁকুড়ায় জনসভা করেছিলেন দলনেত্রী। তার পর সোমবার মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে। এর মাঝে শুভেন্দু অধিকারীকে ঘিরে জল্পনার জল গড়িয়েছে অনেক। সম্প্রতি কোচবিহারের বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এই আবহে দলনেত্রীর জনসভা যে ভিন্ন বার্তাবহ হয়ে উঠতে পারে, তা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সোমবারের সভা থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপিকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই আক্রমণ করেছেন মমতা। দিল্লিতে কৃষি আইন বাতিল নিয়ে বিক্ষোভ জারি। দেশের রাজধানীতে কৃষক বিক্ষোভকে সমর্থন করে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্রোতটা আগেই রাজ্যে টেনে এনেছিলেন সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেত্রী। মেদিনীপুর থেকে দিল্লির কৃষকদের ফের এক বার বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিজেপিকে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে বলেন, ‘‘কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। আইন করে কৃষকদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’’ রেল, প্রতিরক্ষা, ব্যাঙ্ক, কয়লা-সহ একের পর এক সরকারি ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধেছেন। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘সব বিক্রি হলে গেলে কী থাকবে?’’
আরও পড়ুন: মঙ্গলবারের কৃষক আন্দোলনকে সম্পূর্ণ সমর্থন মমতার
ভোটের মুখে বিজেপি টাকা বিলোয় বলে গত লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই অভিযোগ করে আসছেন। সোমবারও সেই অভিযোগ করেছেন। এলাকায় নজর রাখার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের ভার দিয়েছেন মমতা। এই সূত্রেই ‘বহিরাগত’ ইস্যু টেনে এনেছেন তৃণমূলনেত্রী। তাঁর অভিযোগ, ‘‘বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা দখলের চক্রান্ত করছে বিজেপি। কিন্তু বাংলা গুজরাত হবে না।’’ তৃণমূল নেতাকর্মীদের ‘ষড়যন্ত্র’ রোখার আহ্বানও জানিয়েছেন। মমতার বার্তা, ‘‘বিজেপির কাছে সব আছে। কিন্তু তৃণমূলের মতো কর্মী নেই।’’ মেদিনীপুরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশ থেকে বিজেপিকে উৎখাতের ডাকও দিয়েছেন মমতা।
রাজ্যে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে ফের এক বার সিপিএম এবং কংগ্রেসকে বিঁধছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসকে তাঁর তোপ, ‘‘রাজ্যে ৩ ভাই এক হয়েছে। সিপিএম এক সময় কঙ্কালকাণ্ড, সিঙ্গুর, নেতাই, কেশপুর, নন্দীগ্রাম করেছিল। আজ ওরাই বিজেপি হয়েছে।’’ ৩ বিরোধীকে একাসনে বসিয়ে মমতার কটাক্ষ, ‘‘এক জন রক্ষক, এক জন ভক্ষক, আর এক জন তক্ষক।’’ ‘‘সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে’’, অভিযোগও তাঁর।
আরও পড়ুন: বহিরাগতদের দিয়ে বাংলা দখল করতে দেব না, বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ মমতার
আমপানের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কেন্দ্রের যথোপযুক্ত সাহায্য মেলেনি বলে পুরনো অভিযোগ নতুন করে উসকে দিয়েছেন মমতা। উল্টে খরচের হিসাব চাওয়া নিয়ে কেন্দ্রকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা উন্নয়ন করছি, অথচ ওরা টাকা না দিয়েই হিসাব চাইছে।’’ রাজ্যে শিল্পের প্রসারেও কেন্দ্র এগিয়ে আসেনি বলেও অভিযোগ তাঁর। মমতার আশ্বাস, পূর্ব মেদিনীপুরে তাজপুর বন্দর, বীরভূমে দেউচা-পাচামির মতো কয়লা প্রকল্পে বিপুল কর্মসংস্থান হবে। তার সুফল জঙ্গলমহলও পাবে বলে জানিয়েছেন মমতা।
গত লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছিল গেরুয়াশিবির। ফলে রাজনৈতিক ভাবেই তৃণমূলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকা। সোমবার মেদিনীপুর কলেজ মাঠে মমতার সভায় তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। নির্বাচনে জঙ্গলমহলে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন ছত্রধর মাহাতো। মমতার সভার মূল মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন তিনি। মমতার ব্যাখ্যা, ‘‘ছত্রধরকে মাওবাদী তকমা দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল।’’ ছত্রধর বলছেন, ‘‘প্রথম মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলাম। আমি এতে খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy