Advertisement
১১ মে ২০২৪
tmc

‘টিম মহুয়া’ দ্বন্দ্ব সামলাবে? ধন্দ থাকছেই

তৃণমূলের অন্দরে অনেকেরই সন্দেহ, পুরনো নেতা বা বিধায়কেরা নিজের এলাকায় নিজের ঘনিষ্ঠদের দিয়েই দল পরিচালনার চেষ্টা করবেন। নতুন নেতৃত্ব আবার চাইবেন প্রতিটি এলাকায় তাঁদের মতো করে ঘুটি সাজাতে। তাতেই বাধবে বিরোধ।

মহুয়া মৈত্র।  (ফাইল চিত্র)

মহুয়া মৈত্র। (ফাইল চিত্র)

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৩:১৪
Share: Save:

বিধানসভা ভোট সামলাতে তরুণ ব্রিগেডের উপরেই বেশি ভরসা করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু গোষ্ঠীকোন্দল কি সামলানো যাবে কি না তা নিয়ে দলের নেতাকর্নীদেরই একাংশের সংশয় আছে। কেননা দলের মুখ হিসাবে যাঁদের তুলে আনা হয়েছে তাঁদেরও কারও-কারও বিরুদ্ধে গোষ্ঠীবাজির অভিযোগ আছে। পুরনোদের কারও কারও সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক প্রায় সাপে-নেউলে।
তৃণমূলের অন্দরে অনেকেরই সন্দেহ, পুরনো নেতা বা বিধায়কেরা নিজের এলাকায় নিজের ঘনিষ্ঠদের দিয়েই দল পরিচালনার চেষ্টা করবেন। নতুন নেতৃত্ব আবার চাইবেন প্রতিটি এলাকায় তাঁদের মতো করে ঘুটি সাজাতে। তাতেই বাধবে বিরোধ। এর আগেও তেহট্টের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর দত্ত, নাকাশিপাড়ার কল্লোল খাঁ, চাপড়ার রুকবানুর রহমান, কৃষ্ণনগর দক্ষিণের উজ্জ্বল বিশ্বাস, কৃষ্ণনগর উত্তরের অবনীমোহন জোয়ারদারের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধ বেধেছে সাংসদ তথা দলের তদানীন্তন কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী মহুয়া মৈত্রের। দলনেত্রী এ বার মহুয়াকে গোটা জেলার সভানেত্রীর দায়িত্ব দেওয়ায় দক্ষিণে রানাঘাট অংশেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
তার প্রথম কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে জেলার ডানপন্থী রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ তথা সদ্যপ্রাক্তন রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহ ও তাঁর অনুগামীরা মহুয়াকে কতটা মেনে নিতে পারবেন, সেই সন্দেহ দলের প্রবীণ নেতাদের অনেকেরই রয়েছে। পাঁচটি মতুয়া প্রভাবিত বিধানসভার দায়িত্ব পাওয়া রাজ্যসভার সদস্য আবীররঞ্জন বিশ্বাসের সঙ্গে শঙ্কর ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দলের রানাঘাট ১ ব্লক সভাপতি সভাপতি তাপস ঘোষের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা সকলেরই জানা। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে হেরে যাওয়ার পিছনে এঁদেরই হাত ছিল বলে বিশ্বাস আবীর-ঘনিষ্ঠদের। শুক্রবার আবীররঞ্জন অবশ্য বলেন, “সবাইকে সঙ্গে নিয়ে, পুরনোদের যোগ্য সম্মান দিয়েই আমরা পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলব। তার জন্য যা করার করতে হবে।”
আবার কোনও দিনই সে ভাবে সাংগঠনিক দায়িত্বে না থাকা দীপক বসুর কথা শান্তিপুরের অজয় দে, অরিন্দম ভট্টাচার্য কিংবা চাকদহের রত্না ঘোষ, দীপক চক্রবর্তীরা কতটা শুনবেন বা রানাঘাট উত্তর পশ্চিমের শঙ্কর সিংহ, পার্থসারথী চট্টেপাধ্যায় অথবা নবদ্বীপের পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা, বিমানকৃষ্ণ সাহারা তাঁকে কতটা গুরুত্ব দেবেন, তা নিয়েও দলের অভ্যন্তরে প্রশ্ন রয়েছে। যদিও দীপক বলছেন, “দল আর নেত্রীর বাইরে আমি কিছু বুঝি না। নেতৃত্বের নির্দেশ মেনেই সবাইকে নিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়ব।”
আরও কাঁটা আছে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে হাসানুজ্জামানের সঙ্গে নাসিরুদ্দিন আহমেদের লড়াইয়ের কথাও কারও জানতে বাকি নেই। এখন নাসিরুদ্দিন যতই সকলে মিলে চলার ডাক দিন, তা তিনি কতটা করে উঠতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। যদিও এ সবে গুরুত্ব দিতে নারাজ ‘টিম মহুয়া’। তাঁদের দাবি, জেলার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রই কঠিন পরীক্ষার মুখে। ফলে যে যতই লম্ফঝম্ফ করুন, ভোটের আগে এমন কিছু করবেন না যাতে হেরে যেতে পারেন। তা ছাড়া তাঁদের নিজেদের কেন্দ্র নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হবে যে অন্যের এলাকায় নাক গলানোর সময় পাবেন না। মহুয়া শিবিরের এক নেতার কটাক্ষ, “ওদের তো মেয়ের বিয়ে। আমরা তো সহযোগী মাত্র!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE