Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাহিনী প্রত্যাহার ও জেলা বাদের প্রশ্নে রাজনাথকে জোড়া আবেদন মমতার

একই সঙ্গে মাওবাদী অধ্যুষিত তালিকা থেকে রাজ্যের কয়েকটি জেলাকে বাদ দেওয়া এবং একতরফা বাহিনী প্রত্যাহারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এক মঞ্চে: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিলের বৈঠকে। ছবি: সুমন বল্লভ।

এক মঞ্চে: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিলের বৈঠকে। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:০৬
Share: Save:

একই সঙ্গে মাওবাদী অধ্যুষিত তালিকা থেকে রাজ্যের কয়েকটি জেলাকে বাদ দেওয়া এবং একতরফা বাহিনী প্রত্যাহারের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরস্পর যুক্ত এই দু’টি বিষয় আসলে দু’টি প্রশ্ন। ওই তালিকা থেকে কেন বাদ পড়বে আরও কয়েকটি জেলা? কেনই বা একতরফা তুলে নেওয়া হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী?

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সোমবার নবান্ন সভাঘরে ইস্টার্ন জোনাল কাউন্সিলের বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে এই জোড়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানান মমতা।

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং বীরভূমের একটি অংশকে মাওবাদী অধ্যুষিত জেলার তালিকা থেকে আগেই বাদ দিয়েছিল কেন্দ্র। কয়েক মাস আগে এসআরই (সিকিয়োরিটি রিলেটেড এক্সপেন্ডিচার বা মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলার জন্য গৃহীত কর্মসূচির অধীনে থাকা জেলা) জেলার তালিকা থেকেও বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরকে বাদ দিয়েছে তারা। শুধু ঝাড়গ্রাম জেলা রয়েছে ওই তালিকায়। রাজ্য এই বিষয়ে আপত্তি তুলে কেন্দ্রকে জানিয়েছিল, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়াকে আরও অন্তত এক বছর এসআরই-তালিকায় রাখা হোক। কিন্তু সেই আবেদনে কাজ হয়নি।

নবান্নের খবর, বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মাওবাদী সমস্যা এলাকা-ভিত্তিক নয়। এটা গোটা দেশের স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত। প্রতিবেশী রাজ্য থেকে মাওবাদীরা বাংলায় ঢুকে গোলমাল পাকাতে পারে। তাই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত। মমতার প্রশ্ন, রাজ্যের সঙ্গে কথা না-বলে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার করা হয় কেন? কেন্দ্রীয় বাহিনী তো গোটা দেশের স্বার্থেই কাজ করে। তা হলে তাদের মোতায়েন রাখার জন্য কেনই বা অর্থ দিতে হয় রাজ্যকে? এই সব বিষয়ই খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন রাজনাথ।

পরে সাংবাদিক বৈঠকে রাজনাথ বলেন, ‘‘বিভিন্ন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর দরকার যে থাকে, কেন্দ্র সেটা বোঝে। কিন্তু নির্বাচনের জন্য তা প্রত্যাহার করতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ফের বাহিনী দেওয়াও হয়। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব বিষয় মাথায় রেখে কাজ করে সরকার। এই বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

ভিন্‌ রাজ্য থেকে দুষ্কৃতীদের অনুপ্রবেশ এবং তার ফলে উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলার সমস্যা নিয়েও বৈঠকে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে রাজ্য। তারা কেন্দ্রকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পড়শি রাজ্যগুলির মুক্ত ও অবাধ সীমানা এলাকার সুযোগ নিয়ে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গিয়ে দুষ্কৃতীরা আইনশৃঙ্খলার সমস্যা তৈরি করে। ঘটনাচক্রে, পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশ অভিযোগ তুলেছিল, ঝাড়খণ্ড থেকে দুষ্কৃতীরা বাংলায় ঢুকে গোলমাল পাকাচ্ছে। এরই পাশাপাশি ইন্টার স্টেট কাউন্সিলের (সেক্রেটারিয়েট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক) সচিব বি বাহরিল জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে সবিস্তার নির্দেশিকা দিয়েছে কেন্দ্র।

এই সব ছাড়াও প্রাক্‌-মাধ্যমিক এবং তার পরবর্তী সময়ে তফসিলি জাতি ও জনজাতি এবং ওবিসি-দের জন্য বৃত্তি, পুলিশের আধুনিকীকরণ, কলকাতায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফার্মাসিউটিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের জন্য জমি, খনি, কয়লা উত্তোলন, পূর্বাঞ্চলে রেল যোগাযোগ, ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য অগ্রিম দেওয়ার রীতি প্রত্যাহারের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এ দিনের বৈঠকে। স্বাস্থ্য, শহরে গৃহহীনদের আবাস, বিমানবন্দরের আধুনিকীকরণের জন্য জমি অধিগ্রহণের মতো নতুন ১৫টি বিষয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে কাউন্সিল।

বৈঠকে ছিলেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী, ওড়িশার অর্থসচিব এবং কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির আমলা-আধিকারিকেরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE