Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কচুয়ায় নিখোঁজ রামকৃষ্ণের হদিস মিলল এসএসকেএমে

মুদির দোকানের কর্মী রামকৃষ্ণের  বাড়ি বারাসতের বড় কদম্বগাছিতে। স্ত্রী কাকলি ও বারো বছরের মেয়ে স্মৃতিকণাকে নিয়ে সংসার। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ পাড়ার সাত-আট জন যুবকের সঙ্গে কচুয়ার দিকে রওনা হন তিনি।

নিথর: রামকৃষ্ণ অধিকারীর দেহের সামনে তাঁর এক আত্মীয়। শনিবার এসএসকেএমে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিথর: রামকৃষ্ণ অধিকারীর দেহের সামনে তাঁর এক আত্মীয়। শনিবার এসএসকেএমে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৯
Share: Save:

নিকট আত্মীয়ের খোঁজে পরিবারের লোকজন শুক্রবার দিনভর হন্যে হয়ে ঘুরেছেন জেলা ও কলকাতার কয়েকটি সরকারি হাসপাতালে। সারা দিন বিভিন্ন হাসপাতালে চরকি পাক খেয়েও প্রশাসন খোঁজ দিতে পারেনি কচুয়ায় জল ঢালতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া রামকৃষ্ণ অধিকারীর (৩৪)। রাতে নিখোঁজের ডায়েরিও হয়। শনিবার সকালে খুড়শ্বশুরের সাহায্যে খোঁজ মিলল নিখোঁজ রামকৃষ্ণের। মৃত অবস্থায় এসএসকেএম হাসপাতালের মর্গে।

মুদির দোকানের কর্মী রামকৃষ্ণের বাড়ি বারাসতের বড় কদম্বগাছিতে। স্ত্রী কাকলি ও বারো বছরের মেয়ে স্মৃতিকণাকে নিয়ে সংসার। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা নাগাদ পাড়ার সাত-আট জন যুবকের সঙ্গে কচুয়ার দিকে রওনা হন তিনি। রামকৃষ্ণের আত্মীয় সঞ্জয় অধিকারী জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার সকাল থেকেই পরিবারের কিছু

সদস্য ধান্যকুড়িয়া, বসিরহাট ও বারাসত হাসপাতালে ছুটে যান রামকৃষ্ণের খোঁজে। পরিবারের কর্তারা অন্য এক দলকে পাঠান কলকাতার নীলরতন সরকার, আর জি কর, কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু প্রশাসন বা বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই যুবকের পরিজনদের তাঁর খোঁজ

দিতে পারেননি।

পরিবারের লোকজন অবশ্য দাবি করেন, দেহ শনাক্তের পরে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সব রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। মর্গে হাজির থাকা মাটিয়া থানার এক অফিসার জানান, প্রশাসন এতটাই তৎপর যে শনিবারের মধ্যেই রামকৃষ্ণের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের পাঁচ লক্ষ টাকার চেকও তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।

রামকৃষ্ণের খুড়শ্বশুর দীপক অধিকারী এসএসকেএম হাসপাতালে ফটোকপির একটি দোকানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেন। তিনি হাসপাতালের মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে বিকেলে জানান, তিনি জানতেনই না তাঁর জামাই কচুয়ায় গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন। এ দিন ভোরে রামকৃষ্ণের ভাইয়েরা তাঁকে ফোন করে বলেন, তাঁরা জেনেছেন এসএসকেএম হাসপাতালে কচুয়ার দুর্ঘটনায় মৃত এক জনের দেহ রয়েছে। দেহটি কার তা জানতে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে মর্গে যান দীপক। দেখেন, সেটি তাঁর জামাইয়েরই। তিনি ভাইদের হাসপাতালে আসতে বলেন।

দীপকবাবুর কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁর আত্মীয়েরা মাটিয়া থানা (দুর্ঘটনা ওই থানা এলাকাতেই) ও বারাসত থানায় যান। বারাসত থানা এলাকায় রামকৃষ্ণের বাড়ি। তত ক্ষণে অবশ্য ভবানীপুর থানা থেকেও ওই দুই থানায় রামকৃষ্ণের মুখের ছবি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ জানায়, সিএনএমসি হাসপাতাল থেকে শুক্রবার সকালে গুরুতর জখম রামকৃষ্ণকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে আনা হয় এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে। ওই দিন বিকেলে তিনি মারা যান। বিকেলেই ময়নাতদন্ত হয়।

বিকেল পাঁচটা নাগাদ প্রশাসনের দেওয়া শববাহী গাড়িতে রামকৃষ্ণের দেহ নিয়ে বড় কদম্বগাছি রওনা হন তাঁর পরিবারের লোকজন।

এ দিকে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন তিন জনেরই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বসিরহাটের মির্জাপুরের বাসিন্দা বছর এগারোর বর্ষা বিশ্বাসকে শুক্রবার রাতেই আইসিইউয়ে স্থানান্তর করা হয়েছিল। বর্ষার পিসি টুম্পা বিশ্বাস এবং হাওড়ার পাঁচলার বাসিন্দা নমিতা সর্দারের হাত নাড়াচাড়া করতে অসুবিধা হওয়ায়, দু’জনের ক্ষেত্রেই কিছু পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE