স্বস্তি: লাইনে ফাটল ধরে জলোচ্ছ্বাস। তাতেই স্নানে মেতেছে দুই কিশোর। কাঁকিনাড়ায়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
সময়ের কিছুটা আগে রওনা দিয়ে ‘দিদি’র রাজ্যের দিকে এগোচ্ছিল বর্ষা এক্সপ্রেস। মাঝপথ থেকে তাকে বেমালুম হাইজ্যাক করে নিয়ে চলে গেল নরেন্দ্র মোদীর পশ্চিম ভারত!
৩০ মে মৌসুমি বায়ু ঢুকে পড়েছিল কেরলে। নির্দিষ্ট সময়ের দু’দিন আগেই। বঙ্গোপসাগরের ধার বরাবর এগিয়ে সাত দিনে তার পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল দক্ষিণবঙ্গে। সেই হিসেবে বুধবারেই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামার কথা ছিল কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায়। কিন্তু তা হল না। আর শুধু যে হল না, তা-ই নয়। কবে বর্ষা এক্সপ্রেস কলকাতায় পৌঁছবে, তা নিয়ে তৈরি হয়ে গেল চরম অনিশ্চয়তা।
কেরলে দু’দিন আগে ঢুকেও বর্ষা কেন হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে গেল, তা নিয়ে ফোনে ফোনে জেরবার দিল্লির মৌসম ভবন। গত চার দিন ধরে বর্ষা এক্সপ্রসের গতিপ্রকৃতি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন আবহবিদেরা। অবশেষে এ দিন বর্ষা এক্সপ্রেসের গতিপথ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে আবহবিজ্ঞানীদের কাছে।
‘‘আরবসাগর হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়েছে মৌসুমি বায়ুকে। আরবসাগরে তৈরি হওয়া সুস্পষ্ট নিম্নচাপ পশ্চিম ভারতের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছে মৌসুমি বায়ুর মূল প্রবাহটিকেই,’’ বললেন কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
আগাম আবির্ভাব সত্ত্বেও বর্ষা থমকে যাওয়ায় বাংলায় দহনজ্বালা বেড়েছে। মৌসুমি এক্সপ্রেস ছিনতাই হয়ে যাওয়ায় অবস্থাটা কী দাঁড়াচ্ছে?
মৌসম ভবনের এক আবহবিদ জানান, আরবসাগরের নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরের উপরে জমে থাকা যাবতীয় জলীয় বাষ্প টেনে নিয়ে যেতে শুরু করেছে। তাতেই পুড়েছে দক্ষিণবঙ্গের বর্ষাভাগ্য। এই নতুন পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের আগেই গোয়া, মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের পশ্চিম ভাগে, এমনকী গুজরাতেও বর্ষা ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আরবসাগরের সুস্পষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে জানাচ্ছেন আবহবিজ্ঞানীরা। সে-ক্ষেত্রে বঙ্গোপসাগর থেকে আরও জলীয় বাষ্প পাড়ি দেবে পশ্চিমে। পশ্চিম ভারত প্রবল বৃষ্টি পাবে। আর বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেশ অপেক্ষা বাড়বে কলকাতা-সহ পূর্ব ভারতের।
বর্ষা এক্সপ্রেস কবে ফিরে আসতে পারে তার পুরনো পথে?
নিশ্চিত জবাব মিলছে না। গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, বর্ষার পুরনো পথে ফিরে আসার জন্য কয়েকটি প্রাকৃতিক পরিস্থিতি জরুরি। প্রথমত, একেবারে দুর্বল হয়ে পড়তে হবে আরবসাগরের নিম্নচাপটিকে। দ্বিতীয়ত, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হতে হবে শক্তিশালী একটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত, যা আরবসাগর উপকূল থেকে জলীয় বাষ্পকে টেনে আনতে পারবে। জলীয় বাষ্পকে নিয়ে এই দড়ি টানাটানিতে যে-সাগর জিতবে, তার উপকূলে নামবে জোরদার বৃষ্টি।
মৌসুমি এক্সপ্রেসকে নিয়ে এই টানাপড়েনের মধ্যেই মৌসম ভবন একটি সুখবর দিয়েছে। সেটা হল, ‘এল নিনো’ বা দুষ্টু ছেলে (প্রশান্ত মহাসাগরে জলপ্রবাহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বৃদ্ধি) এ বার বর্ষার পথে কাঁটা হচ্ছে না। মৌসম ভবনের এক আবহবিদ জানাচ্ছেন, প্রশান্ত মহাসাগরের তাপমাত্রা যে-হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা হচ্ছে না। ফলে এল নিনো মাস তিন-চারেকের মধ্যে আর শক্তিশালী হবে না। যদিও বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস সংস্থাগুলি আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী এল নিনো এ বার ভারতে বর্ষার স্বাভাবিক ছন্দকে নষ্ট করে দিতে পারে।
মৌসম ভবন জানাচ্ছে, এল নিনোর দিক থেকে কোনও বাধা না-আসায় এ বার বর্ষা হবে স্বাভাবিক। সারা ভারতে বৃষ্টিপাতের মধ্যে সামঞ্জস্যও থাকবে। কোথাও অতিবৃষ্টি আর কোথাও অনাবৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা কম।
কিন্তু মৌসুমি বায়ু শুরুতেই এ ভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ায় সামঞ্জস্যপূর্ণ বর্ষার কোনও সম্ভাবনা থাকছে কি?
‘‘জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারা দেশের বর্ষাচিত্র পরিষ্কার হবে। তখনই বোঝা যাবে, দেশের সর্বত্র সমহারে বৃষ্টি হবে কি না,’’ বলছেন মৌসম ভবনের এক আবহবিদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy