Advertisement
১১ মে ২০২৪
Income Tax department

পুজো কমিটি নয়, নজরে ঠিকাদার: আয়কর দফতর

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ঢাকি, পুরোহিত, মণ্ডপসজ্জার কাজ করা গ্রামের শিল্পীদের থেকেও আয়কর দফতর পুজো কমিটিগুলির মাধ্যমে কর আদায় করতে চাইছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ০৪:১১
Share: Save:

দুর্গাপুজো কমিটিগুলির উপরে কর বসানো নিয়ে আক্রমণ আরও শাণিত করে আজ একে ‘পুজো জিজিয়া কর’ আখ্যা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যদিও আজই প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ জানিয়েছে, আয়কর দফতর মোটেই দুর্গাপুজো কমিটিগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না। পুজো উদ্যোক্তাদের আয়করের নোটিসও পাঠানো হয়নি। তারা ঠিকাদারদের পাওনা মেটানোর সময় কার কাছ থেকে কত টাকা টিডিএস কেটেছেন, তার বিশদ তথ্য চাওয়া হয়েছে। কারণ, ঠিকাদাররা ঠিকমতো কর মেটাচ্ছেন না।

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ঢাকি, পুরোহিত, মণ্ডপসজ্জার কাজ করা গ্রামের শিল্পীদের থেকেও আয়কর দফতর পুজো কমিটিগুলির মাধ্যমে কর আদায় করতে চাইছে। তাই ‘ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স’ বা টিডিএস-এর তিনি নাম দিয়েছেন— ‘টেরিবল ডিজাস্টার স্কিম’।

পুজো কমিটিগুলির কর্তাদের বক্তব্য, কলকাতার কোনও পুজোই লাভজনক আয়োজন নয়। অনেক ক্ষেত্রেই পুরোহিত, ঢাকি, শিল্পীরা খুব সামান্য টাকা পেয়ে থাকেন। তা থেকেও টিডিএস কেটে নিলে ওঁরা হাতে কী পাবেন? মমতারও মতে, এর ফলে গরিব মানুষগুলোর উপরে বোঝা চাপবে। আয়কর দফতর সূত্রের পাল্টা বক্তব্য, সব ক্ষেত্রেই যে টিডিএস কাটতে হয়, তা নয়। এ বিষয়ে নিয়মকানুন জানার জন্য পুজো কমিটিগুলি একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের অনুরোধ করেছিল। ১৬ জুলাই সেই শিবিরে পুজো উদ্যোক্তাদের ফোরামের আট জন সদস্য যোগও দিয়েছিলেন। তাঁদের সংশয় দূর করার চেষ্টা হয়েছে।

গত রবিবার মমতা ঘোষণা করেন, সর্বজনীন পুজোগুলিকে আয়করের আওতায় আনা যাবে না এই দাবিতে মঙ্গলবার ধর্নায় বসবে তৃণমূলের বঙ্গজননী সংগঠন। পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যে তৃণমূলের একচ্ছত্র আধিপত্যে থাবা বসিয়ে বিজেপি নেতারা যখন পুজো কমিটিগুলোর প্রভাবশালী পদে বসতে চাইছেন, তখন তৃণমূলের এই অভিযোগে বিজেপি অস্বস্তিতে। তার মধ্যে মমতা আজ যে ভাবে পুজো কমিটির টিডিএস-এর সঙ্গে হিন্দুদের উপর আওরঙ্গজেবের বসানো জিজিয়া করের তুলনা টেনেছেন, তাতে পুজো ঘিরে রাজনীতি আরও তুঙ্গে উঠেছে। মমতার বক্তব্য, ‘‘এটা আসলে আমাদের সংস্কৃতি, দুর্গাপুজো উৎসবের উপরে আঘাত। বুঝে বা না-বুঝে করা হচ্ছে কি না, জানি না। তবে এটা নিম্নরুচির পরিচয়। বিশেষত যেখানে সব ধর্ম, জাত, শ্রেণির মানুষ দুর্গাপুজোয় অংশ নেন, সেখানে সব রকম কর প্রত্যাহার করা উচিত।’’

পুজোয় কর কাদের ও কেন

আয়কর দফতরের নির্দেশ কী?

• পূজা কমিটিগুলিকে কোনও আয়কর দিতে হবে না। কিন্তু পূজার আয়োজন করার জন্য তারা যাদের টাকা মেটাবে, তা দিতে হবে টিডিএস কাটার পরে।

নির্দেশের আওতায় কারা?

• পুরোহিত, ঢাকি, প্রতিমাশিল্পী, ডেকরেটর-সহ বিভিন্ন কাজের বরাত পাওয়া ব্যক্তি বা সংস্থাকে দেওয়া টাকার ক্ষেত্রে টিডিএস কাটার ওই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। থিম-পূজার পরিকল্পনা যিনি দেবেন, তাঁরও টাকা মেটাতে হবে টিডিএস কাটার পরেই।

যাঁরা আয়করের আওতায় পড়বেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে
কী হবে?

• কেউ যদি আয়করের আওতায় না-পড়েন, তাঁকে বিশেষ ফর্মে তা জানাতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সই-সহ সেই ফর্ম আয়কর দফতরে জমা দেওয়ার দায়িত্ব পূজা কমিটির।

আরও দায়িত্ব

• টাকা যথাসম্ভব (২০ হাজার টাকার বেশি হলে তো অবশ্যই) মেটাতে হবে চেকের মাধ্যমে। টিডিএস কাটার জন্য পূজা কমিটিগুলিকে ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাকাউন্ট নম্বর (ট্যান) নিতে হবে।

আয়কর দফতরের উদ্দেশ্য

• কালো টাকা ধরা, কর ফাঁকি রোধ এবং করদাতার সংখ্যা বাড়ানো।

পূজা কমিটি দায়িত্ব পালন করতে না-পারলে কী হবে?

• যে-সব পূজা কমিটি গত বছর নির্দেশ মানতে পারেনি, তাদের কারও জরিমানা করা হয়নি। এ বছরেও তা করার পরিকল্পনা আয়কর দফতরের নেই। পরে কী হবে, সেটা পরের কথা।

তথ্যসূত্র: কলকাতা আয়কর দফতর

আজ দিল্লিতে প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের মুখপাত্র বিবৃতি দিয়ে জানান, দুর্গাপুজো কমিটিগুলিতে গত কয়েক সপ্তাহে আয়কর দফতর নোটিস পাঠিয়েছে বলে খবর ছড়িয়েছে। এই খবর অসত্য। চলতি বছরেই কোনও নোটিস পাঠানো হয়নি। তবে গত বছর যে নোটিস পাঠানো হয়েছিল তা স্বীকার করে আয়কর দফতরের বক্তব্য, পুজোর কাজ করা বহু ঠিকাদার, ইভেন্ট ম্যানেজার বা অন্যরা ঠিকমতো কর জমা দিচ্ছেন না। তাই ২০১৮-র ডিসেম্বরে প্রায় ৩০টি পুজো কমিটিকে আয়কর আইনের ১৩৩(৬) ধারায় নোটিস পাঠিয়ে জানতে চাওয়া হয়, তারা কাদের কাদের টাকা মিটিয়ে কত টিডিএস কেটেছে। বহু কমিটি টিডিএস-এর তথ্য এবং সরকারকে তা জমা দেওয়ার নথি দাখিল করেছে।

মমতার অবশ্য যুক্তি, এ বছর নোটিস পাঠানো হয়নি বলার কোনও অর্থ নেই। কারণ পুজো হওয়ার পরে নোটিস পাঠানো হবে। আয়কর দফতরের বিবৃতিতে আসলে তথ্য বিকৃত করা হয়েছে। যাতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। এ নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের চেয়ারম্যান পি সি মোদী রিপোর্ট চান। পশ্চিমবঙ্গের প্রিন্সিপাল চিফ কমিশনার বিশ্বনাথ ঝা বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েও দেন। আয়কর দফতর সূত্রের খবর, শুধু কলকাতা নয়। দিল্লির পুজো কমিটিগুলির কাছেও এই রকম নোটিস পাঠানো হয়েছিল। আগামী বছর থেকে পুজো কমিটিগুলির জন্য প্যান-এর ধাঁচে ট্যান (ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যান্ড কালেকশন অ্যাকাউন্ট নাম্বার) বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।

কেন্দ্রের প্রাক্তন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোথায় কর বসবে, তা আয়কর আইন মেনেই ঠিক হবে। তবে যে ভাবে পুজো কমিটিকে নোটিস পাঠানো হচ্ছে, তাতে রাজনীতির প্রশ্ন উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ সাম্প্রতিক কালে আয়কর দফতরের স্বাধীনতা অনেকটাই খর্ব হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE