Advertisement
০৫ মে ২০২৪

স্বেচ্ছামৃত্যু নয়, হাঁটতে চান সুমন

বেঙ্গালুরুতে সুমনের শিরদাঁড়ায় জটিল অস্ত্রোপচার হয়। তার পরেও পা দু’টি নাড়াতে পারতেন না তিনি। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিল, সেখানে চার মাস থেকে ফিজিওথেরাপি করাতে।

চিকিৎসা চলছে। নিজস্ব চিত্র

চিকিৎসা চলছে। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫১
Share: Save:

স্বেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছে থেকে শুরু হয়েছিল এই কাহিনি। কিন্তু এখন এসে দাঁড়িয়েছে জীবনের গল্পে। দু’বছর আগে যে মানুষটি স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য আবেদন করেছিলেন, তিনিই এখন বলছেন, ‘‘আর মরতে চাই না!’’ সুপ্রিম কোর্টে পরোক্ষ স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে রায়ের পরে এই কথাই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন মালদহের মহদিপুরের যুবক সুমন দাস।

বছর তিনেক আগে হরিশ্চন্দ্রপুরে ট্রাক থেকে পণ্য নামাতে গিয়ে জখম হয়েছিলেন ইংরেজবাজারের মহদিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের এ কে গোপালন কলোনির বাসিন্দা সুমন। পরিবার সূত্রে জানা যায়, পিঠে ভারী চালের বস্তা পড়ে শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছিল তাঁর। অকেজো হয়ে গিয়েছিল দু’টি পা-ই। চিকিৎসার জন্য প্রথমে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ, তার পর সেখান থেকে সুমনকে কলকাতা হয়ে বেঙ্গালুরু নিয়ে যান বাড়ির লোকেরা।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুতে সুমনের শিরদাঁড়ায় জটিল অস্ত্রোপচার হয়। তার পরেও পা দু’টি নাড়াতে পারতেন না তিনি। হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছিল, সেখানে চার মাস থেকে ফিজিওথেরাপি করাতে। কিন্তু আর্থিক কারণে সেই চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবার। সুমনের বাবা অনেক আগেই মার গিয়েছেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছোট। এই অবস্থায় সুমনের মনে হয়েছিল, অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকা অর্থহীন। তাই স্বেচ্ছামৃত্যু চেয়ে মালদহের তৎকালীন জেলাশাসকের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি।

সেই সুমনই এখন বলছেন, ‘‘মরতে চাই না। আমি হাঁটতে চাই।’’ এই পরিবর্তন সম্ভব হল কী ভাবে? তাঁর পরিবার সূত্রে বলা হচ্ছে, তিন বছর আগে সুমনকে নিয়ে হইচই শুরু হলে প্রশাসন তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসে। আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন ফিজিওথেরাপিস্ট সুনির্মল ঘোষ। তিনি তাঁর নিজস্ব চেম্বারে সুমনকে রেখে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে চিকিৎসা করছেন। সুমনবাবু বলেন, ‘‘প্রশাসন, চিকিৎসক সুনির্মলবাবু আমাকে নিখরচায় উন্নত মানের চিকিৎসা দিচ্ছেন। আমি এখন হাঁটতেও পারছি। তাই আর মরতে চাই না।’’ একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সকলের সহায়তা পেয়েছি। তবে অনেকেই তো এমন সাহায্য পায় না।’’

সুমনের চিকিৎসক সুনির্মলবাবু বলেন, “অর্থের জন্য কোনও রোগী মারা যাক, এক জন চিকিৎসক হিসেবে আমি কখনও তা চাই না।’’ এখন ওয়াকার নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন সুমন। কখনও তাতে ভর দিয়ে এগোচ্ছেন এক-দু’পা। এখন তাকিয়ে আছেন সামনের দিকে, কবে নিজের পায়ে হাঁটতে পারবেন।

যা দেখে সুমনের মা সরস্বতীদেবী বলেন, ‘‘সকলে পাশে থাকলে কেউ মরতে চাইবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Right To Die Euthanasia Suman Das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE