মৃত জিশান আলি।
ঘুড়ির মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় ফের আহত হলেন এক মোটরবাইক চালক। ছিটকে পড়ে মাথা ফেটে যাওয়ায় মৃত্যু হল তাঁর সঙ্গী যুবকের।
পুলিশ জানায়, বাগনান থানার দেউলটি উড়ালপুলে ঘটনাটি ঘটে শনিবার বেলা সাড়ে ১১ নাগাদ। মৃতের নাম জিশান আলি। বন্ধু জিশানকে বাইকে বসিয়ে বাগনানের মানপুরের ক্লিনিকে রক্তের নমুনা জমা দিতে যাচ্ছিলেন কোলাঘাটের মোহিতপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ সাহিদুর রহমান। বিভিন্ন রোগীর রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য নিয়মিত ক্লিনিকে পৌঁছে দেন তিনি।
সাহিদুর জানান, তিনি বাইক চালাচ্ছিলেন। দেউলটি উড়ালপুলে ওঠার কিছু পরে তাঁর মনে হয়, গলায় কেউ যেন ছুরি মেরেছে। তিনি মাথা নিচু করে ফেলেন। তার পরে দেখেন, চড়চড় শব্দে কেটে যাচ্ছে ডান হাত। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি ছিটকে পড়েন। ‘‘মিনিট তিনেক বেহুঁশ ছিলাম। হুঁশ ফিরতে দেখি, ডিভাইডারে ধাক্কা লেগে জিশানের মাথা ফেটে গিয়েছে। যন্ত্রণায় ছটফট করছে ও। অনেক চেষ্টায় একটি গাড়িকে দাঁড় করিয়ে তাতে জিশানকে তুলে উলুবেড়িয়া হাসপাতালে যাই,’’ বললেন সাহিদুর।
আরও পড়ুন: ‘আত্মঘাতী’ ছাত্রী, স্কুলের নামে নালিশ
বাইকচালক জানান, চিকিৎসকেরা ইঞ্জেকশন দিয়েও জিশানকে সামলাতে পারছিলেন না। অক্সিজেন দেওয়া শুরু হয়। সাহিদুর বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা জানান, জিশানের মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত লেগেছে। সিটি স্ক্যান করে জানা যায়, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।’’ শনিবার রাতে একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনা হয় জিশানকে। সোমবার সকালে তিনি মারা যান।
আরও পড়ুন: পুলিশ খুনে বেকসুর ১৮ অভিযুক্তই
পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, পিতৃহীন জিশান ২০১৪ সালে বেলঘরিয়ার একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করেন। বেসরকারি সংস্থায় কাজ পেয়েছিলেন। আগামী মার্চে তাঁর বিয়েও ঠিক হয়েছিল। থাকতেন মা ও দাদা-বৌদির সঙ্গে। এক আত্মীয় বলেন, ‘‘সাহিদুর ও জিশান সহপাঠী। শনিবার পাড়ায় আড্ডা দিচ্ছিল জিশান। সাহিদুর মানপুরে যাওয়ার পথে ওকে বাইকে তুলে নেয়।’’
চিনা মাঞ্জা সুতোয় উড়ালপুলে বাইক-আরোহীর জখম হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। বছর দেড়েক আগে সৌপর্ণ দাশ নামে হাওড়ার শিবপুর এলাকার এক কলেজছাত্র ‘মা’ উড়ালপুলে গুরুতর জখম হন। প্রায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন ওই তরুণ।
মানবাধিকার কমিশন সম্প্রতি রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে চিনা মাঞ্জা সুতো বিক্রি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ যে এখনও সে-ভাবে কার্যকর হয়নি, শনিবারের ঘটনাই তার প্রমাণ। হাওড়ার পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘চিনা মাঞ্জা সুতো বিক্রি নিষিদ্ধ। তবু এখনও ওই সুতো কী ভাবে বিক্রি করা হচ্ছে, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy