Advertisement
১০ মে ২০২৪

তৃণমূলকে বাঁচাচ্ছেন এসপি, সরব বিরোধীরা

যুক্তির বেড়াজাল বুনে দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন পুলিশ সুপার। অথচ, সেই জালে তিনি নিজেই জড়িয়ে গিয়েছেন। এমনই নালিশ বিরোধীদের। তাদের বক্তব্য, যে ভাবে পুলিশ সুপার যুক্তি সাজিয়েছেন, তা থেকে কয়েকটি প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

সবংয়ে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র পরিষদের মোমবাতি মিছিল। মেদিনীপুর শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

সবংয়ে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র পরিষদের মোমবাতি মিছিল। মেদিনীপুর শহরের গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০১:০০
Share: Save:

যুক্তির বেড়াজাল বুনে দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন পুলিশ সুপার। অথচ, সেই জালে তিনি নিজেই জড়িয়ে গিয়েছেন। এমনই নালিশ বিরোধীদের। তাদের বক্তব্য, যে ভাবে পুলিশ সুপার যুক্তি সাজিয়েছেন, তা থেকে কয়েকটি প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যে সব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পুলিশ ব্যর্থ। পুলিশের কাজটা ঠিক কি, দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা, না যাদের নামে অভিযোগ তাদের আড়াল করা, প্রশ্ন তুলছে বিরোধী- শিবির।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “পুলিশ সুপার যে বক্তব্য রেখেছেন, তা জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তার বক্তব্য হতে পারে না। কাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন উনি? কৃষ্ণপ্রসাদ জানার পরিবার বিচার চাইছে। সবংয়ের মানুষ বিচার চাইছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী-পুলিশ সুপার আলোচনা করেইত অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কৃষ্ণপ্রসাদকে মারল কারা, তার জবাব পুলিশ দেবে না?”

সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণার মন্তব্য, “সত্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অপরাধীদের আড়াল করে নিরপরাধীদের উপর অত্যাচার চালানোর চেষ্টা চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যকেই মান্যতা দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করেছেন পুলিশ সুপার। পুলিশকে এই ভূমিকায় মানুষ দেখতে চায় না।” পুলিশ সুপারকে বিঁধেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ও। তুষারবাবুর কটাক্ষ, “অনেক করেছেন। আর তৃণমূলকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন না। মানুষ ফুঁসছে। এটাই আমাদের অনুরোধ!”

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ।

বস্তুত, সবংয়ের ঘটনা নিয়ে যখন রাজ্য-রাজ্যনীতিতে জোর আলোড়ন চলছে, তখনই ধৃতদের হয়ে সাফাই দেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। শনিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ সুপার দাবি করেন, “যে ছ’জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাঁদের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়নি। ওই ছ’জনকে লাঠি হাতে দেখা যায়নি। ইনফ্যাক্ট একদমই দেখা যায়নি। যারা গ্রেফতার হয়েছে, তাদেরও দেখা যায়নি।” পুলিশ সুপার এ-ও জানিয়ে দেন, প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের মনে হয়েছে, যে তিনজন গ্রেফতার হয়েছে, সেই তিনজন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। এখানেই বৈপরীত্য খুঁজে পাচ্ছেন বিরোধীরা। তাদের প্রশ্ন, যদি যুক্তই না- হয় তাহলে পুলিশ গ্রেফতার করল কেন? কেনই বা তদন্তের প্রয়োজনে নিজেদের হেফাজতে নিল? তাহলে কি ধরে নিতে হবে সবং থানার পুলিশ ঠিক কাজ করেনি? কারণ, অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করেই তো পুলিশ গ্রেফতার করে। তার আগে নয়। বিরোধীদের দাবি, পুলিশ সুপারের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, এ ক্ষেত্রে পুলিশ সবথেকে বেশি জোর দিচ্ছে কলেজ ক্যাম্পাসে কারা ছিল, আর কারা ছিল না সেই দিকটিতে। অর্থাত্‌, ক্যাম্পাসে কারা ছিল না তা প্রতিষ্ঠিত করতে।

পুলিশ সুপার এও জানান, “সিসিটিভির ফুটেজ বদলায় না। এটা তৈরি করা যায় না। এটা বুঝতে হবে! এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। তদন্ত করে সত্য উদ্ঘাটন করাটা পুলিশের কাজ। সাধারণ মানুষের জানার অধিকার আছে ঠিক কি হয়েছে।”

বিরোধীদের প্রশ্ন, বারবার ‘এটা একটা গ্রুপেরই গোলমাল’ দাবি করে ভারতীদেবী ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছেন? ইউনিয়ন রুমের মধ্যে থেকে পরপর যারা লাঠি নিয়ে বেরোচ্ছিল, তারা যে একটা গ্রুপেরই সেটা পুলিশ নিশ্চিত হল কি ভাবে? একাধিক গ্রুপও তো দল বেঁধে পরপর গিয়ে লাঠি নিয়ে বেরোতে পারে? এ ক্ষেত্রে পুলিশ সুপারের জবাব ছিল, “হতে পারে। তদন্তে সব দেখা হচ্ছে।” এখানেই বিরোধীদের প্রশ্ন, যেখানে ‘হতে পারে’ কিংবা অনেক কিছু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে আগ বাড়িয়ে অভিযুক্ত টিএমসিপি কর্মী- সমর্থকদের ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া কেন? শনিবার ভারতীদেবী আরও জানান, “সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা যায়নি, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না- করে, যাদের দেখা গিয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করাটা জরুরি।”

পুলিশ সুপারের এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ- সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “উনি কাদের কেন বাঁচাতে চাইছেন, তা মানুষ জানেন! পুলিশের কর্তব্য হল কে বা কারা কৃষ্ণপ্রসাদকে খুন করেছে, কী ভাবে খুন করেছে, তা খুঁজে বের করা। অথচ, পুলিশ সুপারের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, এটা পুলিশের মূল্য বিবেচ্য নয়। এটা দুর্ভাগ্যের! এ ভাবে উনি তৃণমূলকে বাঁচাতে পারবেন না।” এ ক্ষেত্রে অবশ্য পুলিশ সুপারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি। রমাপ্রসাদের বক্তব্য, “পুলিশি তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। পুলিশের তদন্তের উপরে আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে।” পাশাপাশি, পুলিশের এই বক্তব্যকে ‘হাতিয়ার’ করে ধৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিও জানাচ্ছেন তৃণমূলের এই ছাত্র নেতা। সবমিলিয়ে, সবংয়ের জল কতদূর গড়ায়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE