Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Newtown

ফের রাজ্যে সক্রিয় ডি-কোম্পানির লটারি, পাকিস্তান থেকে আসা ফোনে প্রতারিত অনেকে

সিআইডি সূত্রে খবর, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই এ রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:০৪
Share: Save:

পাকিস্তানের লটারি জালিয়াতরা ফের এ রাজ্যে সক্রিয়। কয়েক দিন আগেই নিউটাউনের বাসিন্দা এক মহিলা ওই জালিয়াতদের পাল্লায় পড়ে প্রায় ৪২ হাজার টাকা খুইয়েছেন। সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা।

সিআইডি সূত্রে খবর, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই এ রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। কয়েক দিন আগে নিউটাউন থানা এলাকার হাতিয়াড়ার বাসিন্দা বিলকিস বেগম অভিযোগ জানিয়েছেন যে, গত ২৮ অক্টোবর তাঁর মোবাইলে +৯২৩৪৫৭৬০৩৭১৩ নম্বর থেকে একটি ফোন আসে। সেই ফোনে তাঁকে জানানো হয়, তিনি ২৫ লাখ টাকার লটারি জিতেছেন। কিন্তু সেই টাকা বিলকিস বেগমের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে ‘প্রসেসিং ফি’ লাগবে।

ওই দিনই জালিয়াতদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ১৩ হাজার ১০০ টাকা জালিয়াতদের দেওয়া ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেন তিনি। এর পর আরও দুই দফায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা জমা দেন ওই অ্যাকাউন্টে। তার পরেও লটারির টাকা না আসায় তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি বুঝতে পারেন প্রতারিত হয়েছেন। এর পরই তিনি নিউটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, যে অ্যাকাউন্টে বিলকিস টাকা দিয়েছেন, সেটি অবিনাশ কুমার নামে এক ব্যক্তির। টাকা ওই অ্যাকাউন্টে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই টাকা ফের তা ট্রান্সফার করা হয়েছে অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে নম্বরটি পাকিস্তানের। পুলিশ সূত্রে খবর, পাকিস্তানের এই জালিয়াতরা এর আগেও জাল বিছিয়েছিল এ রাজ্যে। হাওড়া থেকে পরিচালিত হচ্ছিল ওই চক্র। সিআইডি-র গোয়েন্দারা ওই চক্রের মূল পাণ্ডা ওমর-সহ সাত জনকে পাকড়াও করার পর বাংলায় ওই পাকিস্তানি প্রতারণা চক্রের জাল গুটিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: সরকার গড়ুক বিজেপি-শিবসেনা, বিরোধী আসনে বসবে এনসিপি-কংগ্রেস: শরদ পওয়ার

আরও পড়ুন: প্রাণে বাঁচতে মেষপালক সেজে ঘুরে বেড়াত বাগদাদি! দাবি ঘনিষ্ঠ মহলের

ওই সময়ে তদন্তে উঠে এসেছিল, পাকিস্তানে বসে একটি বড় চক্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে জালিয়াতদের নিয়োগ করে। এ দেশে থাকা জালিয়াতদের কাজ বিভিন্ন লোকের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া। এক তদন্তকারী বলেন,‘‘এ রাজ্যের ওই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন লোকের অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিত। মাসে পাঁচ হাজার টাকা দিত অ্যাকাউন্টের মালিককে। ওই রকমের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জালিয়াতরা প্রতারণার টাকা লেনদেন করত। পুলিশ তদন্তে নেমে অ্যাকাউন্টের মালিককে পেলেও আড়ালে থেকে যেত মূল চক্রীরা।”

সিআইডি-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘হাওয়ালা পথে প্রতারণার টাকা চলে যেত পাকিস্তানে। চক্রের এখানকার সদস্যরা প্রতারণার টাকার একটা ভাগ পেত। সিআইডির ওই তদন্তে উঠে এসেছিল, পাকিস্তানের চক্রটির পিছনে মূল মাথা ছিল পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং কুখ্যাত ডি-কোম্পানি।

নিউটাউনের ওই প্রতারণা প্রসঙ্গে এক সিআইডি আধিকারিক বলেন, ‘‘ফের রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এ রকম কয়েকটি প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।” তদন্তকারীদের ধারণা ফের নতুন কোনও চক্রকে কাজে লাগাচ্ছে পাকিস্তানের ‘হ্যান্ডলার’-রা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-সূত্রে খবর, এ রাজ্যের মতো রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশেও একই রকম প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ ইতিমধ্যেই ওই চক্রের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গ্রেফতার করেছে সুনীল সিংহ, বলরাম সিংহ এবং সৌরভ শুক্ল নামে তিন জনকে। জানা গিয়েছে, বলরাম এর আগে ২০১৭ সালেও গ্রেফতার হয়েছিল পাকিস্তানে নথি পাচার করতে গিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE