ফাইল চিত্র।
শুশুনিয়া পাহাড় চেনেন? ‘হ্যাঁ’ শুনে বললেন, সেখান থেকে ছয়-সাড়ে ছয় কিলোমিটার এগিয়ে গেলে লক্ষ্মণপুর, তারপর পশ্চিমে আরও দেড় কিলোমিটারের মতো গেলে শিমূলবেড়িয়া, সেখানেই ঘর।
এই ঠিকানা দিলেন ঠিকই তবে সেখানে থাকলে হয়ত ফোনটা পেতেন না কালীপদ মান্ডি। সাঁওতালি মাধ্যমে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম হওয়া সন্তানের খোঁজ করতে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফোন পৌঁছতই না রাজমিস্ত্রি কালীপদবাবুর মোবাইল ফোনে। ছেলের রেজাল্ট ভাল হওয়ায় সাতসকালে পুলিশকর্তার ডাক পেয়ে জেলা সদরে এসেছিলেন তিনি। সেখান থেকেই বেরোতেই ফোন। শুনলেন, শিক্ষামন্ত্রী তাঁর ছেলেকে খুঁজছেন। কথা বলতে চান শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাঁকুড়ার চাঁদড়া কল্যাণপুর হরিজন হাইস্কুলের কৃতী বুদ্ধদেবের সঙ্গে। ৫৭৭ নম্বর পেয়েছে বুদ্ধদেব।
আসলে একমাত্র সন্তানের পরীক্ষার ফল বেরোতেই ফোনের বন্যা। ফোন ধরছেন ঠিকই, কিন্তু সে সব গুছিয়ে বলার জন্য একটু সময় চাইছেন কালীপদবাবু। কারণ সকালে জেলা সদর ঘুরে আসার স্ত্রী আশা মান্ডিতে অন্যের জমিতে কাজে দিয়ে এসে মাঠে গরু চরাতে বেরিয়েছেন তিনি। নিজে পড়াশোনা জানলেও মাধ্যমিকের অনেক আগেই সেই পথ ছেড়ে রাজমিস্ত্রীদের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিলেন জোগাড়ে হিসেবে। তবে ছেলেকে দিয়েছিলেন শালতোড়া ব্লকের চাঁদরার এই আবাসিক স্কুলে। সেখানে হস্টেলে রেখে চেয়েছিলেন নিজের অসম্পূর্ণ যাত্রা এগিয়ে নিতে। বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে গরু চরানোর সময় পাওয়া গেল তাঁকে। বললেন, ‘‘সবাই যে ছেলের প্রশংসা করছেন তাতেই বুক ভরে যাচ্ছে। এত মানুষ ভালবাসছেন খুব আনন্দ হচ্ছে।’’
ছেলের খোঁজে মন্ত্রী-আমলা ফোনাফুনি চলছে আর বাবা-মা নিত্য কাজে বেরিয়েছেন। বাড়িতে একাই ছিল বুদ্ধদেব। নিজের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চাইছে সে। আর সাঁওতালি মাধ্যমেই পড়তে চাইছে। সাদামাঠা একটা ফোন আছে তাঁর। তাতেই ভেসে এল কিশোরের স্বপ্ন, বলল, ‘‘শিক্ষক হব। ভূগোল পড়ব। তারপর ছাত্রছাত্রী পড়াব।’’ সাঁওতালি মাধ্যমে রাজ্যে দ্বিতীয় হয়েছে এই স্কুলের ছাত্র, বুদ্ধদেবের সহপাঠী জয়দেব মাঝি।
নিজের গ্রামের সাঁওতাল পরিবারগুলিতে আর্থিক বাধায় থমকে থাকা শিক্ষাকে একটু রাস্তা করে দিতে চায় বুদ্ধদেব। প্রিয় ছাত্রের স্বপ্ন নিয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর স্কুলের শিক্ষক ধরমদাস টুডু। ধরমদাসবাবুর কথায়, ‘‘ওর এই রাস্তা হয়ত একটু কঠিন কিন্তু আমার বিশ্বাস শিক্ষক হয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে পারবে।’’ একটি বেসরকারি সংগঠনের তরফে এ দিন সফল বুদ্ধদেবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। গলায় মালা পরে সেখানে বক্তৃতা করেছে সে।
কৃতী ছাত্রের এই পথে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘এইরকম ছেলেমেয়েদের লড়াই আমাদের অনেক কিছু শেখায়। ওদের রাস্তা মসৃণ করতে পাশে থাকতে চেয়ে কথা বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy