Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘আর কত বার আমাদের মারবে প্রকৃতি’

আমপানের পরেও কিছু কলা, পেঁপে, পটল খেত মাথা উঁচু করে ছিল। বুধবারের পরে সে সবও শেষ। হেলেঞ্চা ছাড়া এখনও গোটা ব্লক বিদ্যুৎহীন।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ০৩:০৩
Share: Save:

সকালে ত্রিপল দিয়ে নতুন করে ঘর ছেয়েছিলেন বিজন। সন্ধের ঝড় ফের উড়িয়ে নিয়ে গেল সেই ত্রিপল। হতাশ বিজন বলেন, ‘‘আর কত বার আমাদের মারবে কে জানে!’’

আমপানের তাণ্ডবে এমনিতেই লন্ডভন্ড উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বাগদাতেও। বুধবার সন্ধ্যায় মিনিট চল্লিশের ঝড়ে ফের বিপর্যস্ত গোটা এলাকা। নতুন করে হাজারখানেক বাড়ির ক্ষতি হয়েছে বলে জানাচ্ছেন জেলা পরিষদ সদস্য পরিতোষ সাহা। বহু গাছ ভেঙেছে। উপড়েছে বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি। আমপানের ধকল সামলে সবেমাত্র পিঠ সোজা করে দাঁড়াতে চাওয়া এলাকা ফের ছত্রখান। বার বার প্রকৃতির এমন আচরণে মানুষজন মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছেন। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েত অফিসের তালা ভেঙে বেশ কিছু ত্রিপল লুট হয়ে গিয়েছে।

কথা হচ্ছিল বিজন হালদারের সঙ্গে। হেলেঞ্চা-বয়ড়া সড়কের পাশেই আশ্রয়পাড়ায় তাঁর টিনের বাড়ি। আমপানে তা ভেঙে পড়ায় পঞ্চায়েত থেকে একটি ত্রিপল পেয়েছিলেন। বুধবার সন্ধ্যায় সেই ত্রিপল ছিঁড়েখুড়ে একসা। ঝড়ের মধ্যে প্রাণ বাঁচাতে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে এক পড়শির বাড়িতে আশ্রয় নেন বিজন।

কুলতলা গ্রামে গিয়ে দেখা হল কর্ণদেব বিশ্বাসের সঙ্গে। আমপানে তাঁর বাড়ি রক্ষা পেয়েছিল। কিন্তু বুধবারের ঝড়ে টিনের ছাউনির বেড়ার ঘর ভেঙে গিয়েছে। খেতমজুর কর্ণদেবের মেয়ে পদ্ম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। বৃষ্টিতে তার বইখাতা ভিজে একসা।

আরও পড়ুন: সব খেয়ে নিল কালিন্দী, শুকনো খাবার চাইছে সাতরা

কর্ণদেব বলেন, ‘‘ঝড়ের দাপট আমপানের থেকে কম তো কিছু মনে হল না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খাটের তলায় ঢুকে বসেছিলাম।’’ পঞ্চায়েত থেকে এ দিনই ত্রিপল পেয়েছেন তিনি। তবে বললেন, ‘‘দু’মাস ধরে কাজ নেই। লোক লাগিয়ে ঘর মেরামত করার অবস্থা নেই এখন।’’ প্রতিবেশী মহিলা কাজললেখা মণ্ডলের অ্যাসবেস্টসের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত। জানালেন, কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। দু’মাস ধরে ওষুধ আনা হয়নি। পালপাড়ার দীনেশ দাস বুধবার সন্ধ্যায় স্ত্রী সুমি ও তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে ঘরেই ছিলেন। টিনের ঘরের উপরে গাছ ভাঙে। পড়শিরা টিন কেটে উদ্ধার করেন।

আমপানের পরেও কিছু কলা, পেঁপে, পটল খেত মাথা উঁচু করে ছিল। বুধবারের পরে সে সবও শেষ। হেলেঞ্চা ছাড়া এখনও গোটা ব্লক বিদ্যুৎহীন। পানীয় জলের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সজল ধারা প্রকল্পে কয়েকটি প্ল্যান্ট থেকে জেনারেটর চালিয়ে জল দেওয়া হচ্ছে। বাগদা গ্রামীণ হাসপাতাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎহীন। জেনারেটর বিকল। একটি জেনারেটর ভাড়া করা হয়েছিল, সেটিও খারাপ সকাল থেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE